শহরের মেজাজটা বোঝা যায় সেখানকার রেস্তোরাঁর মেনু দেখে। এ দেশ, সে দেশ ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের মুখে এ কথা শোনা যায় বহু দিন ধরেই। তেমনই সব পর্যটকদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে বারবার উঠে এসেছে কলকাতাবাসীর রসনা নাকি যথেষ্ট উদার নয়। কলোনিয়াল হ্যাংওভারের ঠেলায় কিছু কন্টিনেন্টাল রেসিপি, সঙ্গে কলকাতা স্টাইল বিরিয়ানি এবং বাঙালি কায়দায় চিনে নামের কিছু কিছু খাবার ছাড়া এ শহরের রেস্তোরাঁ মহলে বিশেষ কল্কে পায়নি দেশ-বিদেশের খাওয়াদাওয়া। ডালে-ভাতে-মাছেই ধরা ছিল বাঙালির পরিচয়। এ পার বাংলায় পোস্ত ভাল, নাকি ও পারের ইলিশ ভাপা— সে বিতর্কেই বেশি মেতে ছিল শহর। অন্যান্য প্রদেশের খাবারও নাকি বিশেষ চিনতে রাজি ছিল না বাঙালি।
এখন কিন্তু আর এমন বলতে পারবেন না পর্যটকেরা।
বছর কয়েকে হঠাৎ যেন বদলে গিয়েছে সেই শহরেরই পাল্স! জাপানি না ইতালীয়, সে সব বিতর্কও এখন পুরনো। এ দেশের অন্যান্য প্রান্তের রেসিপিও এখন আর ‘অ-বাঙালি’ বলে দূরে সরাচ্ছে না কলকাতা। দক্ষিণী চিংড়ি কাড়ি, হিমাচলি ঝাল সব্জি, ওড়িশার দই বেগুন, রাজস্থানের থালি— সবই চেখে দেখার ভিড় এখন শহর জুড়ে। সেই আহ্লাদকে আরও একটু উস্কে দিতে একের পর এক তৈরি হয়েছে রেস্তোরাঁ। প্রায় সব প্রদেশের খাবারই এখন পাওয়া যায় কলকাতায় বসে। এমনকী, কোস্টাল খাবারের হাত ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসীদের রান্নাও ঢুকে পড়েছে শহুরে পছন্দের তালিকায়। ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে সান্তাজ ফ্যান্টাসি-র আদিবাসী রেসিপি বা চারকোল গ্রিল, ওহ! ক্যালকাটা, ওশন গ্রিলের কোস্টাল সুস্বাদ।
আঞ্চলিক রসনায় কলকাতার আহ্লাদ আরও একটু বাড়িয়ে দিতে এ বার এসেছে চারতলা রেস্তোরাঁ। নাম ফিউশন ফ্যানটাসি। এক-এক তলায় বসে চেখে দেখা যাবে দেশের আলাদা আলাদা অঞ্চলের রান্নাবান্না। কোথাও বসে হতে পারে সামুদ্রিক মাছের মাপোশে বা চেট্টিনাডে রসনা তৃপ্তি, তো কোথাও বসে পাহাড়ি ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পাহাড়ি কায়দায় রান্না করা চারমোলা চিকেন বা মটন দিয়ে পালং রিস্তা মন টেনে নিয়ে যেতে পারে সুদূর হিমালয়ের দিকে। তিব্বত থেকে মায়ানমার, পাতে পড়তে পারে যে কোনও পাহাড়ের মশলাই।
এ কলকাতার মধ্যে এখন সত্যিই আছে এমন এক কলকাতা, যেখানে দক্ষিণী খাওয়াদাওয়াকে ব্যঙ্গ করে তেঁতুলদের ইডলি-দোসা বলা হয় না। সেই কলকাতার খাদ্য বিলাসীদের জন্য রেস্তোরাঁর একটা তলায় পাওয়া যাবে কেরলের বিশেষ মশলা, ফোড়ন আর নারকেলের দুধে ফোটানো সুরমাই মাছের আলেপ্পি স্টাইল কারি থেকে শুরু করে মেঙ্গালোর মেজাজের কাঁকড়ার ঝাল, দক্ষিণী মশলায় ভাজা স্কুইড, ঘিয়ে রোস্ট করা অক্টোপাসও। পাতুরি আর অতি পরিচিত কোটিংয়ে ফ্রাইয়ের বাইরেও যে ভেটকি মাছের বড়সড় কদর আছে, তাও চিনিয়ে দেবে দক্ষিণী কায়দার কোলি ওয়াড়া, তাওয়া ফ্রাই ও বাটার চিলি ফ্রাই।
এক ছাদের নীচে বসে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সব জায়গার সব মশলা চেখে দেখার এই তো সুযোগ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy