আগাম সুরক্ষার জন্য বয়সকালেও কিছু ভ্যাকসিন জরুরি
শিশুর জন্মের সময়েই এখন তালিকা দিয়ে দেওয়া হয় যে, কী কী ভ্যাকসিন দিতে হবে তাকে। ছোটদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও কিছু ভ্যাকসিন আছে। তার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের শারীরিক অবস্থার উপরে।
এমন অনেক ভ্যাকসিন এখন শিশুদের দেওয়া হয়, যা হয়তো ১০-১৫ বছর আগে আবিষ্কৃত। ফলে আজ যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক, তাঁরা সেই ভ্যাকসিন নিতে পারেননি। কিন্তু তার মধ্যে কিছু ভ্যাকসিন সমান জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন?
পাঁচটি বিশেষ পরিস্থিতি
অ্যাডাল্ট ভ্যাকসিনেশন নির্ভর করে একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেমের উপরে। কিডনি, লিভার, অ্যাজ়মা, ডায়াবিটিস এবং এইচআইভি— এই পাঁচটির মধ্যে যে কোনও একটি সমস্যায় যদি কেউ ভোগেন, তা হলে তাঁকে কিছু ভ্যাকসিন নিয়ে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তা ছাড়া একটু বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদেরও কিছু ভ্যাকসিন নিয়ে রাখা উচিত। এখানে অ্যাডাল্ট বলতে ১৮ থেকে ৭৫ বা তারও বেশি বোঝানো হচ্ছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন
অনেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভুগে থাকেন। এই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর হলেও তার প্রকোপ জোরালো হবে না। এই ভ্যাকসিন বছরে একবার করে নিতে হয়। তার একটি বিশেষ কারণ আছে। এটি ভাইরাসবাহিত অসুখ। আর ভাইরাসের ধরন মাঝেমধ্যেই বদলে যায়। যে কারণে এই ভ্যাকসিনের কম্পোজ়িশনও বদলায়। তবে এতে সাধারণ মানুষের কিছু করণীয় নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই চলতে হবে। ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে বা উপরোক্ত ওই পাঁচটি সমস্যার একটিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকেরা এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এমএমআর ভ্যাকসিন
মিজ়ল, মাম্পস এবং রুবেলা— এই তিনটি রোগ প্রতিরোধের কারণে এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। খুব বেশি দিন হয়নি এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং যাঁরা নেননি বা নিলেও কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই, তাঁরা অবশ্যই এটি নিয়ে রাখতে পারেন। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘যাঁদের বয়স ১৮-৪০ বছরের মধ্যে, তাঁদেরই এটা রেকমেন্ড করা হয়। ৪০-৪৫ বছরের পরে আর এই ভ্যাকসিন প্রযোজ্য নয়। এটি সাধারণত একবার নিলেই চলে। কখনও দু’বার নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।’’ গর্ভবতী মায়ের মিজ়ল, মাম্পস বা রুবেলা হলে তা গর্ভস্থ সন্তানের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে।
টিটেনাস, ডিপথেরিয়া এবং হুপিং কাফের জন্য
টিডিএপি ভ্যাকসিন বলা হয় এটিকে। ছোটবেলায় না নেওয়া থাকলে প্রাপ্তবয়স্কেরা এটি নিতে পারেন। সাধারণত চিকিৎসকেরা ১০ বছর অন্তর একবার করে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিছু দেশ আছে, যারা হুপিং কাফের ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে ভিসা মঞ্জুর করে না।
সার্ভিকাল ক্যানসার রোধে
এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) মেয়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ভ্যাকসিন। সার্ভিকাল ক্যানসারের কথা এখন সকলেই জানেন। এই ভ্যাকসিনে তা রোধ করা যায়। সরকারি নিয়মে ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই এটি দেওয়া যায়। ১৮ বছর (মেয়েদের বিয়ের বয়সসীমা) পর্যন্ত নেওয়া যায়। যৌন সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্তই মেয়েরা এটি নিতে পারে।
হেপাটাইটিস বি
আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে এই ভ্যাকসিন ছিল না। খুব জরুরি এই ভ্যাকসিন সকলেরই নিয়ে রাখা উচিত। ১৮ থেকে ৭০ বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিই এটি নিতে পারেন। একটি কোর্সের তিন ধাপে নিতে হয় হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। বয়স্ক মানুষ বা যাঁদের কিডনি, লিভার, অ্যাজ়মা, ডায়াবিটিস এবং এইচআইভির মধ্যে যে কোনও একটি রোগ রয়েছে, তাঁদের এটি জরুরি। তা ছাড়া চিকিৎসক, নার্স বা মেডিক্যাল ল্যাবে কর্মরত ব্যক্তিদের এই ভ্যাকসিন নেওয়া আবশ্যিক।
নিউমোনিয়া রোধে
এই ভ্যাকসিনটিও বেশি দিন হয়নি আবিষ্কৃত হয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন। এটি নেওয়া না থাকলে যে কোনও বয়সেই নেওয়া যায়। বয়স্ক বা যাঁদের ইমিউনিটি কম, তাঁদের জন্য চিকিৎসকেরা বিশেষ করে পরামর্শ দেন এই ভ্যাকসিন নেওয়ার।
হিমোফাইলাস ভ্যাকসিন
যাঁদের স্প্লিন (প্লীহা) কেটে বাদ দিতে হয়, তাঁদের এইচআইবি (হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি) ভ্যাকসিনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সাধারণত থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য এই ভ্যাকসিন আবশ্যিক। সাধারণ মানুষের জন্য এই সুরক্ষাকবচ জরুরি না হলেও কিডনি, ডায়াবিটিস ইত্যাদি সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন। এই ভ্যাকসিন একবারই নিতে হয়।
মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে
প্রাপ্তবয়স্কদের মেনিনগোকক্কাল ভ্যাকসিন খুব জরুরি না হলেও কিডনি, লিভার, অ্যাজ়মা, ডায়াবিটিস এবং এইচআইভি—এর মধ্যে একটি থাকলে চিকিৎসকেরা এই ভ্যাকসিন নিয়ে রাখার পরামর্শ দেন।
চিকেনপক্স প্রতিরোধে
ভ্যারিসেলা নামক একটি ভ্যাকসিন দেওয়া হয় চিকেনপক্সের জন্য। পুরোপুরি প্রতিরোধ না করা গেলেও, প্রকোপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে
কিছু ভ্যাকসিন রয়েছে, যা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, কিন্তু বিদেশে যেতে হলে প্রয়োজন। আফ্রিকার দেশগুলিতে যাওয়ার আগে ইয়েলো ফিভারের জন্য ভ্যাকসিন নিতে হয়। যাঁরা জঙ্গলে কাজ করেন, তাঁদের র্যাবিস ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিছু ক্ষেত্রে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জন্যও ভ্যাকসিন নিতে হয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্কের শারীরিক অবস্থা, তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং তাঁর কী কী অসুখ রয়েছে, মূলত তার উপরেই নির্ভর করে ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা।
তথ্য: ডা. অরুণাংশু তালুকদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy