কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের পরিচিত মেজাজ। — ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার সকাল। অন্যান্য দিনের মতোই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে কফিপ্রেমীদের ভিড় জমছে। কিন্তু চেয়ারে বসে একটু ধাতস্ত হওয়ার আগেই নিয়মিত আসাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে কফি হাউসের বিখ্যাত হলুদ দেওয়াল। সেখানে ঘটেছে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন নিয়ে উৎসাহীদের একপ্রস্ত আলোচনাও নজরে এল।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের বাঙালি সংস্কৃতি তথা ইতিহাসের অন্যতম অঙ্গ। মঙ্গলবার থেকে সেই কফি হাইসের ইতিহাসেও জুড়ল নতুন পালক। এত দিন কফি হাউসের দোতলায় প্রবেশ করলেই অভ্যাগতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত বিপরীত দেওয়ালে টাঙানো বিশালাকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিটি। এ বার রবীন্দ্রনাথের পাশেই জায়গা করে নিল কাজী নজরুল ইসলামের একটি ছবি।
সময়টা ১৯২৯ সাল। সে বছর ১৫ ডিসেম্বর অ্যালবার্ট হলে (কফি হাউস ভবনের পূর্ব নাম) হিসেবে নজরুল ইসলামকে সংবর্ধিত করে তাঁকে অবিভক্ত বাংলার জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সেই ঐতিহাসিক সংবর্ধনা সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু, রায় বাহাদুর জলধর সেন-সহ বহু বিশিষ্টজনেরা। অতিথিদের অনুরোধে নজরুল ইসলাম ‘টলমল টলমল পদভরে’ এবং ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গান দু’টি গেয়ে শোনান। প্রায় ৯৫ বছর পর সেই ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করে কফি হাউসে জায়গা করে নিল নজরুলের ছবি।
এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন তিন নজরুলপ্রেমী— শ্রাবণী ব্রহ্মচারী, পরমানন্দ চৌধুরী এবং অঙ্কিত রায়। পরমানন্দ আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘দীর্ঘ দিন আগেই আমরা তিন জন বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে এরকম একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবি। উদ্যোগটা হয়তো ব্যক্তিগত। কিন্তু এটা আসলে বাঙালির তরফে নজরুলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য বলা যেতে পারে।’’ কফি হাউসের নিজস্ব পরিচালন সমিতি রয়েছে। তাঁরা রাজি হলেন কেন? পরমানন্দ বললেন, ‘‘মাস তিনেক আগে আমি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিহাসটা তুলে ধরি। তার পর ওঁরা রাজি হন। কিন্তু কফি হাউসে রঙের কাজ শেষ হওয়ার পর ওঁরা ছবি বসানোর অনুমতি দেন।’’
কফি হাউসে নজরুলের যে ছবিটি বসানো হয়েছে, সেই ছবিতেই নেপথ্য ইতিহাসকেও বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সেক্রেটারি সারফারাজ় আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বললেন, ‘‘বিষয়টা জানতাম না। তাই ইতিহাস জানার পর আমরা বৈঠকে বসি। এই উদ্যোগে সকলের সম্মতি এবং পরে অনুমতি দিই।’’ এরই সঙ্গে সারফারাজ় জানান, কফি হাউসে নেতাজির একটি ছবি বসানোর প্রস্তাবও তাঁদের কাছে এসেছে। বিষয়টা নিয়ে আপাতত কর্তৃপক্ষের আলোচনাধীন রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy