চার দিনে ১৫টি মৃত্যু। চলতি বছরের মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৩৭। আক্রান্ত প্রায় ২৩০ জন। রাজ্য সরকার জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রোধে সব রকম ব্যবস্থা নিলেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। ব্রহ্মপুত্র ও বরাক দুই উপত্যকাতেই ছড়াচ্ছে রোগ। দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার নিরিখে শিবসাগর, যোরহাট, গোলাঘাট সবার উপরে। এখন অবধি রাজ্যের ১২টি জেলা থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্তের খবর মিলেছে। গত বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৭০ জন। এই রোগে মারা গিয়েছিলেন ১৬৪ জন।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বরাক উপত্যকায়ও। হাইলাকান্দিতে ইতিমধ্যেই চার শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। কাছাড় জেলার পরিস্থিতিও স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তা বাড়িয়েছে। তিন সপ্তাহে পাঁচজন এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আরও অনেকে। স্বাস্থ্যবিভাগের দাবি, সংক্রমণ রোধে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাছাড়ের পাঁচজনের মধ্যে দু’জন জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিস মারা গিয়েছেন। তাঁরা হলেন, সোনাই এলাকার কচুদরম গ্রামের অনিমা দাস (৬৫) ও কাটিগড়া এলাকার জগদীশপুরের কামরউদ্দিন (৮০)। অন্যদেরও প্রায় একই ধরনের উপসর্গ। তবে রোগের নাম অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস)। সর্ব শেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ জুলাই। শিলচরের শহরতলি দুর্গাপল্লীতে। মারা গিয়েছেন ৮৩ বছরের অরবিন্দ পুরকায়স্থ। অন্য দু’ট ঘটনা ঘটেছে জুনের শেষ সপ্তাহে। ২৫ জুন প্রাণ হারিয়েছেন শিলচর শহরের জানিগঞ্জের ২৭ বছরের তরুণী সুপ্তা দাস। ২৮ জুন মারা যায় আইরংমারার ৯ মাসের শিশু রণজিত দেবনাথ। গত তিন সপ্তাহে করিমগঞ্জে এইএসে মৃতের সংখ্যা ২ জন, হাইলাকান্দিতে এইএসে দু’জন ও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কাছাড় জেলার চিফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ অফিসার বি পি নাথ জানান, জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিস কিংবা এইএস, উভয় ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি একই। প্রবল জ্বর, কাঁপুনি, মস্তিষ্কে বিকার ইত্যাদি। দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই বছর মোট ৫৫ জনের এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১ জন জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত। এই রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ মশা। তবে তা ম্যালেরিয়ার মতো নয়। এখানে সতর্ক থাকতে হয় শূকর থেকেও। জমা জলও এক বড় কারণ।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য সার্ভিল্যান্স অফিসার বি সি ভগবতী জানান, রাজ্যের ১২টি জেলায় প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ হয়েছে। বাকি জেলাতেও প্রতিষেধক দেওয়া হবে। মানুষকে প্রতিষেধক নিতে এগিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ থেকে এই প্রতিষেধক আনাচ্ছে। দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার করা আবশ্যক। সব জেলায় ফগিং-এর কাজও চলছে। এই রোগের ভাইরাস শূকর ও বন্য পাখির দেহে বাসা বাঁধে। তারপর কিউলেক্স মশার মাধ্যমে তা ছড়ায়।
এ দিকে রাজ্যের সিংহভাগ এলাকায় শুয়োর পোষা হয়। তাই রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এই রোগে মৃত কাছাড় জেলার সোনাইয়ের কচুদরম গ্রামের অনিমা দাস ও কাটিগড়ার কামারউদ্দিনের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব খাটছে না। কারণ সেই দু’টি জায়গার আশপাশে কোনও শুয়োরের খামার নেই। এলাকা দু’টি মোটের উপর পরিচ্ছন্ন। তারপরেও কী ভাবে সেখানে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ হল তা নিয়ে চিন্তায় জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা।
বি পি নাথ বলেন, জেলা প্রশাসন নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, কৃষি, সমাজ কল্যাণ ও পশুপালন দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিসে যারা মারা গিয়েছে, তাদের বাড়ির দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফগিং করা হচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ফগিং শুরু হবে শিলচর পুর এলাকাতেও। সে জন্য পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ডিডিটি ছড়ানো হচ্ছে বড়খলা, বিক্রমপুর, সোনাই ও লক্ষ্মীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এলাকার গ্রামগুলিতে। জীবাণুরোধী সাড়ে ৫ হাজার মশারি জেলা জুড়ে বিলি করা হয়েছে। চলছে সচেতন সভা। যারা শূকর পালন করেন, তাঁদের শূকরগুলিকে রাতে মশারির ভেতরে রাখতে বলা হচ্ছে। জমা জল নিয়েও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন। স্কুলে-স্কুলে সভা-সমিতি করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা টাস্ক ফোর্স।
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মশাবাহিত এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকেই। এই সময়টি পিক্ আওয়ার। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট ৬৯জন। তাঁদের মধ্যে ৯ জনের দেহে জাপানিজ এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়েছিল। তাঁদের ১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এইএস-এ মারা গিয়েছিলেন আরও ১২ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy