গত তিন বছরে অন্তত ৫ জন স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা চিকিত্সক সাসপেন্ড হয়েছেন। বিষয়টি ভাল চোখে দেখেননি চিকিত্সকদের অনেকেই। সেখানে পরিকাঠামোর ঘাটতিও বড় সমস্যা সেখানে। এক তরফা ভাবে চিকিত্সকদের অভিযুক্ত করলে সরকারি হাসপাতালগুলিতে কাজ করতে তাঁরা উত্সাহ হারাবে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের একাংশ। শনিবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে মৈনাক ট্যুরিস্ট লজে আইএমএ’র উত্তরবঙ্গ কনভেনশন হয়। সেই সঙ্গে চা বাগানগুলির চিকিত্সকরাও ছিলেন। তাতে যোগ দিতে এসে সদস্যদের অনেকেই এ কথা জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাঙুর ইন্সস্টিটিউট অব নিউরোলজি ডিরেক্টর শ্যামপদ ঘড়াই। এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতে গত ২৫ জুলাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সাসপেন্ড হতে হয়। পরে সাসপেন্ড হন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষও।
এ দিন কনভেনশনে আসা চিকিত্সকদের অনেকেই জানান, এমনিতেই রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিত্সক নেই। সে কারণে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল-সহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মতো জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ। আবার প্রতিকূল কোনও পরিস্থিতির জন্য এক তরফা ভাবে চিকিত্সকদের দায়ী করা হচ্ছে। ওই সমস্ত সমস্যার জেরে অনেক চিকিত্সক কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। তাতে আরও বেশি করে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হন বাম মনোভাবাপন্ন চিকিত্সকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস।
সংগঠনের সর্বভারতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “এটা ঠিকই চিকিত্সকদের অনেক সময় ওই সমস্ত নানা কারণে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। আবার তাঁদেরও উচিত কাজের ব্যাপারে মনোযোগী, যত্নশীল হওয়ার। ভাল করে তাঁদের কাজ করতে হবে।”
কলকাতার বাসিন্দা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সকদের একটা বড় অংশ সপ্তাহান্তে বাড়ি যান। কেউ সপ্তাহে ৩ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকেন। বাকি দিনগুলিতে কলকাতা থাকেন। তাতে চিকিত্সকদের সমস্যার পাশাপাশি রোগী পরিষেবার দিকটিও দুর্বল হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অন্তত ২০ জন চিকিত্সককে অন্যত্র বদলি করা হয়। তার মধ্যে এমন অনেক চিকিত্সক রয়েছেন যাঁরা এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতে উত্সাহী ছিলেন। আবার কলকাতা-সহ অন্যান্য জায়গা থেকে অনেক চিকিত্সককে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হচ্ছে। তাঁদের একাংশ সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।
এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “চিকিত্সকদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা প্রবল দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালের কাজ করে তারা চেম্বার করলে সরকার তাঁকে মানা করবে না। উত্তরবঙ্গের চিকিত্সকদের একাংশ অধিকাংশ সময় কলকাতায় থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই প্রবণতা বন্ধ করতে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করা হয়। তবে তার পরেও কেউ আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যত্র চলে যান। এই প্রবণতা চিকিত্সকরা নিজেরাই বন্ধ না করলে মুশকিল।” শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট এক চিকিত্সককে পুরুলিয়ায় বদলি করায় তিনি কাজে আসছেন না। ইএনটি রেডিওলজি বিভাগে একজন করে ডাক্তার। সব দিন বহির্বিভাগে চিকিত্সা পরিষেবা মেলে না।
চা বাগানগুলিতে চিকিত্সা পরিষেবার মান নিয়েও সমালোচনা করেন চিকিত্সকরা। অধিকাংশ চা বাগানে চিকিত্সা পরিষেবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কোথাও চিকিত্সক নেই। রোগীদের বাগান থেকে অনেকটা দূরে হাসপাতালে যেতে হয়। ওষুধ পত্রও বাগানের হাসপাতালগুলিতে ঠিক মতো সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy