Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জীবিত রোগিণীকে মৃত ঘোষণা মালদহে

দেহে প্রাণ থাকা সত্ত্বেও এক রোগিণীকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মালদহ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ির লোকজন তাঁর দেহ নিতে গিয়ে দেখেন, ওয়ার্ডের মেঝেয় চাদর দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা রোগিণী নড়াচড়া করছেন। তখনই তাঁরা চেঁচামেচি শুরু করেন। যে চিকিত্‌সক ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন, তাঁকে ডেকে আনা হয়। উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

দেহে প্রাণ থাকা সত্ত্বেও এক রোগিণীকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মালদহ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ির লোকজন তাঁর দেহ নিতে গিয়ে দেখেন, ওয়ার্ডের মেঝেয় চাদর দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা রোগিণী নড়াচড়া করছেন। তখনই তাঁরা চেঁচামেচি শুরু করেন। যে চিকিত্‌সক ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন, তাঁকে ডেকে আনা হয়। উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই রোগিণীকে হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই মহিলার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

পুলিশ জানায়, রোগিণীর নাম মমতা সরকার। তিনি মালদহ শহরের রবীন্দ্র ভবন মোড়ের বাসিন্দা। মমতাদেবীর স্বামী পেশায় কাঠ মিস্ত্রি সুনীল সরকার। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়। মেডিক্যাল কলেজের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ বলেন, “ওই রোগিণী বেঁচে রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজের বদনাম হয়ে গেল। যে চিকিত্‌সক জীবিত রোগিণীকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি তাঁর দায় এড়াতে পারেন না। অভিযুক্ত চিকিত্‌সকের যদি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয় কিংবা সাসপেন্ড করা হয় তাতে কিছুই বলার থাকবে না।”

তবে অভিযুক্ত চিকিত্‌সক অনিমেষ মন্ডল জানান, সোমবার রাতে ওই রোগীকে তিনি দেখেছিলেন। তিনি বলেন, “তখন ওই রোগীর পালস বিট, হার্ট বিট কিছুই পাচ্ছিলাম না। আমি রোগীর চোখ, মুখ সবই দেখেছি। কোনও কিছুতেই ওই রোগী সাড়া দিচ্ছিলেন না। এরপর ভোর চারটে নাগাদ একই অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছিল রোগিণী বেঁচে নেই। রোগিণী মারা গিয়েছেন ভেবে আমি ওই রোগীর টিকিটে ‘ডেথ’ কথাটা লিখে চলে আসি। এর পরে সকাল ৮ টা নাগাদ আমার লেখার ভিত্তিতে অন্য একজন চিকিত্‌সক ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে। আমি স্বীকার করছি আমার ভুল হয়েছে।”

চিকিত্‌সক মৃত বলে জানিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পরে ওই মহিলা সারারাত ওয়ার্ডের মেঝেতেই পড়েছিলেন। সে সময়ে কর্তব্যরত নার্সেরা কি তাঁকে নড়াচড়া করতে দেখেননি? হাসপাতাল সূত্রের খবর, নার্সদের বক্তব্য ওয়ার্ডে এত ভিড় রয়েছে যে, ওই মহিলার দিকে সেই রাতে আর কারও নজর পড়েনি। একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তবে তাতে ওই মহিলার নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, যে চিকিত্‌সক ওই মহিলার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন, তিনি ওই মহিলাকে দেখতেও যাননি। অনিমেষবাবুর বক্তব্য, “ওই চিকিত্‌সক স্রেফ টিকিটের উপরে আমার লেখার উপরে ভিত্তি করেই সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। তিনি ওই মহিলাকে নিজে একবার দেখলে এই বিপত্তি ঘটত না।” সেই চিকিত্‌সক ওই হাসপাতালের হাউসস্টাফ মহম্মদ আক্তারুজ্জামান সকাল আটটায় মমতাদেবীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লেখেন। তাঁর বক্তব্য, “অনিমেষবাবু মমতা সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। তারই ভিত্তিতে আমি ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ইস্যু করেছি।” সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় কি রোগীকে দেখেছিলেন? তখন “আমি জানি না” বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সকদের কয়েকজনের বক্তব্য, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। রোগিণীর রক্তে শর্করা হঠাত্‌ করে কমে গেলে তাঁর দেহে জীবনের লক্ষণগুলি আর সাময়িক ভাবে না-ও পাওয়া যেতে পারে। সে সময়ে তাঁকে দেখলে মৃতা বলে মনে হতে পারে। এক্ষেত্রেও বোধহয় তাই হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চিকিত্‌সকের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, “অধ্যক্ষকে বলেছি যে চিকিত্‌সক এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার কাছে কৈফিয়ত তলব করুন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE