Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

এনসেফ্যালাইটিস, পুরসভার ব্যর্থতায় সরব বিরোধীরা

শিলিগুড়িতে এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষকে বিঁধছে বিরোধীরা। ডেঙ্গিতে গত বছর শহরের অন্তত দশ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর উত্তরবঙ্গ জুড়ে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ শুরু হলেও পুর কর্তৃপক্ষ রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে এখনও কোনও সদর্থক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে বিরোধী বামেদের অভিযোগ।

অসুস্থ পরিজনের পাশে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

অসুস্থ পরিজনের পাশে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

শিলিগুড়িতে এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষকে বিঁধছে বিরোধীরা।

ডেঙ্গিতে গত বছর শহরের অন্তত দশ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর উত্তরবঙ্গ জুড়ে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ শুরু হলেও পুর কর্তৃপক্ষ রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে এখনও কোনও সদর্থক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে বিরোধী বামেদের অভিযোগ। তাদের দাবি, বাসিন্দারা বারবার বলায় বাম কাউন্সিলররা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সোমবার পুর কমিশনারকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘেরাও করেন বাম কাউন্সিলররা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “বারবার বলার পরেও পুরসভার টনক নড়ছে না। এ দিনও পুরসভার তরফে কোনও রকম ব্যবস্থা নিতে তৎপরতা দেখা যায়নি।”

পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো শহরের বসতি এলাকা থেকে শুয়োর পালন বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ দিন ৫টি বরোতে আলাদা করে দল তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় ভাবে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। আজ, বুধবার থেকেই দলের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথায় শুয়োর পালন হচ্ছে তা চিহ্নিত করবেন। সেই সঙ্গে শুয়োরের খামারগুলি এক দুই দিনের মধ্যেই সরিয়ে নিতে নোটিস দেবেন। বিরোধী বামেদের অভিযোগ, দল তৈরি করে বসে থাকলে হবে না। এ দিন থেকে কাজে নামা উচিত ছিল। সোমবার পুর কমিশনারকে দুপুর ২ টো থেকে রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন বাম কাউন্সিলররা। তাদের অভিযোগ, বেহাল পুর পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। তাঁরা সুষ্ঠু পুর পরিষেবা চালুর দাবিতে পুর কমিশনারের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে বোর্ড মিটিং ডাকার দাবি জানিয়েছেন। পুর কমিশনার বলেন, “বোর্ড মিটিং ডাকার বিষয়ে যে কেউ সরাসরি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করতে পারেন। চেয়ারম্যান নির্দেশ দিলে আমি সেই মতো কাজ করব। তবে পুরসভার তরফে বিভিন্ন জায়গায় ফগিং মেশিন দিয়ে মশা তাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে।” আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোর কারণে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তদের যথাযথ চিকিসা হচ্ছে না। সোমবার বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পরিদর্শন করেন। দলের চিকিৎসক সেলের একটি দলও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। একটি রিপোর্টরাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছে জেলা কমিটি। দলীয় সূত্রের খবর, সাংগঠনিক নিয়ম মেনে রাজ্য কমিটি সেই রিপোর্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাবে। দলের জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু অভিযোগ করে বলেন, “হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরই দূষণের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে।” হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার পরিকাঠামোগত কিছু খামতি স্বীকার করে বলেন, “ওঁরা যে ভাবে সংক্রমণের কথা বলছেন, তা বাস্তবে সম্ভব নয়। শয্যার অভাবেই রোগীদের অনেক সময়ে মেঝেতে রাখতে হয়। পরিকাঠামো উন্নতি করার চেষ্টা চলছে।”

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে, মালবাজার ব্লক হাসপাতাল, শুল্কাপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে পরিস্থিতির খোঁজখবর করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে বিশ্বরঞ্জনবাবু জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা এবং হাসপাতাল সুপার সুশান্ত রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত গ্রামে বাসিন্দারা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে সমীক্ষা করবেন। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবেন। সেই কাজ শুরু হয়েছে। আক্রান্তদের ফিভার ক্লিনিকে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিশ্বরঞ্জনবাবুবলেন, “বসতি এলাকা থেকে শুয়োর সরাতে শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। গ্রামে মশা মারার তেল ছড়াবে স্বাস্থ্য দফতর। শহরে পুরসভাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওরা চাইলে আর্থিক সাহায্য করা হবে।” মঙ্গলবার ১০ জন জ্বর নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের এনসেফ্যালাইটিস উপসর্গ দেখা গিয়েছে।

বিভিন্ন পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য শুয়োর আর মশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। কোথাও সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুয়োর দেখলেই তুলে দেওয়া হবে বন দফতরের হাতে। কোথাও বা বাসিন্দারাও সরব হয়েছেন শহর থেকে শুয়োর সরানোর দাবিতে। হলদিবাড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ নাগ জানান, পুর এলাকায় যাঁরা শুয়োর পালন করেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে। শহরের রাস্তায় শুয়োর দেখলেই তা ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়ে বলা হয়েছে। বনাঞ্চল এলাকায় সেগুলি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হবে। কোথাও জমা জল থাকলে মশা মারার তেল স্প্রে করা হবে। আলিপুরদুয়ারে বাসিন্দারা শুয়োর সরানোর দাবিতে স্মারকলিপিও দিয়েছেন জেলাশাসককে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE