করোনাভাইরাস এখন আমাদের জীবনের ভেতরে বাইরে, কাজে অবসরে বিনোদনে, সর্বত্র তার ছাপ রেখে যাচ্ছে। জানলা বা বারান্দা থেকে বাইরে উঁকি দিলেই দেখি একটা অন্য ভুবনের ছবি। আর বাইরে বেরোনোর সুযোগ হলে তো কথাই নেই। মানুষের জীবিকার ধরনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও পাল্টাচ্ছে বলে মনে হয়।
সুতরাং, সামনে কঠিন সময়। সেই কথা মাথায় রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করে বেরোনো ছাত্রদের, আবার কেরিয়ারের মাঝামাঝি থাকা পেশাদার কর্মীদেরও। সকলকেই খুব তাড়াতাড়ি এমন সব দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যা আগামী দিনে তাঁদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু পড়াশোনা করতে গিয়ে এই অনিশ্চিত সময়ে বেশি অর্থ ব্যয় করাও বুদ্ধির কাজ হবে না। তাই দেখতে হবে কোথায় বিনামূল্যে বা কম খরচে নতুন দক্ষতা অর্জন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটা ভাল পথ— ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্সেস বা এমওওসিএস।
অনেকেই ইতিমধ্যে তা নজর করেছেন। করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অনলাইন বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে যায়। যেমন, গত পাঁচ মাসে জনপ্রিয় মার্কিন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম ‘কোর্সেরা’য় প্রায় আড়াই কোটি ইউজ়ার যোগ দেন! সাইবার সিকিয়োরিটি, ডেটা সায়েন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু কোর্স আছে, যেগুলি চাহিদা খুবই বেশি। এই সব কোর্স করে রাখলে পরবর্তী কালে কাজের জায়গায় পদোন্নতি এবং বেশি আয় করার সম্ভাবনাও থাকে।
বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলি ঠিক এই জায়গাতেই বাজার ধরার চেষ্টা করেছে। অনেকেই কম খরচের এমন কোর্স চালু করেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বৃত্তিও দিচ্ছে।
এই মাসেই গুগল তিনটি সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম শুরু করেছে, যেগুলির প্রশিক্ষণ দেবেন তাদের এখনকার পূর্ণ সময়ের কর্মীরাই। সামান্য অর্থের বিনিময়ে এই কোর্সে যোগ দেওয়া যাবে। কোনও কলেজ ডিগ্রিরও প্রয়োজন নেই। এই সার্টিফিকেট যে কোনও সাধারণ কলেজ ডিগ্রির সমতুল্য এবং এর সাহায্যে গুগল কিংবা অন্য কোনও সংস্থায় চাকরির জন্যে আবেদনও করা যাবে। একই রকম ভাবে মাইক্রোসফ্টও তাদের বিশ্বব্যাপী উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে, যেখানে ভিডিয়ো কোর্সের মাধ্যমে তারা কম্পিউটারের সাধারণ জ্ঞান থেকে উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেবে কম খরচে। একই পথে হাঁটছে আমাজ়ন-ও। তারাও তাদের এক লক্ষ কর্মীকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছে।
সবার প্রযুক্তির বিষয় পছন্দ না-ও হতে পারে। চিন্তা নেই, অন্যান্য কোর্সও আছে। আপনি চিনা ভাষাও শিখতে পারেন, আবার ফিনানশিয়াল প্ল্যানিং-এর দক্ষতাও শানিয়ে নিতে পারেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল থাকার ও ভাল রাখার বিজ্ঞান সংক্রান্ত কোর্সে এ বছরই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ যোগ দিয়েছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় মে মাসে চালু করে ‘কোভিড কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ কোর্স। এক মাসের মধ্যে প্রায় চার লক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন সেখানে। এ ছাড়াও অন্যান্য জনপ্রিয় কোর্সগুলির মধ্যে রয়েছে ফান্ডামেন্টালস অব ডিজিটাল মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট, ফিনানশিয়াল প্ল্যানিং এবং স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিসিস।
অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়ার একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল, এখানে আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে, নিষ্ঠাবান হতে হবে এবং নিজের মধ্যে রাখতে হবে সফল হওয়ার খিদে। কোনও সতীর্থের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার তাগিদে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এখানে নেই, যেমন নেই কোনও সমস্যা নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করার সুবিধা। আবার একা সব কিছু করতে সবাই পারে না। কিন্তু এই অতিমারি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, রিমোট-ওয়ার্ক ও রিমোট লার্নিং-এর সংস্কৃতি আজ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।
একটা কথা নিশ্চিত, করোনা-পরবর্তী বিশ্বে স্কুলের ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর বা দুর্দান্ত কলেজ ডিগ্রি চাকরিতে উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না। চাকরিপ্রার্থী পড়াশোনায় কত সফল, সে দিকে আজ আর নজর দেয় না অনেক সংস্থাই। তারা অনেক বেশি জোর দেয় ব্যবহারিক দক্ষতার ওপরে, যেগুলি এই সব অনলাইন কোর্স থেকে পাওয়া যায়। ইন্টারনেটের সৌজন্যে বাড়ি বসেই এই সুযোগ মিলছে। তা হলে আর দেরি কেন? পছন্দের কোর্স খুঁজে নিয়ে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলার কাজটা এখনই শুরু হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy