ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ইটালি।—ছবি এএফপি।
গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা। দীর্ঘ দু’মাস পরে যে দিন ইটালিতে লকডাউন তোলা হয়েছিল, সে দিন বিকেলে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। মনে অনেক ভয়, অস্বস্তি ও আশঙ্কা ছিল— লকডাউন তোলার ফল কী হবে? আবার কি বাড়বে কোভিডের প্রকোপ? রাস্তায় আমারই মতো অনেক মানুষ বেরিয়ে পড়েছিলেন ফিরে পাওয়া স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে সেই মানুষজনের সান্নিধ্যে কেমন যেন ভয় করছিল— ওদের বেশি কাছে চলে যাচ্ছি না তো? পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকছে তো? সে দিন সকলেরই চোখেমুখে আনন্দের থেকে বেশি যেন একটা আতঙ্কের ছাপ ছিল। নিজেই আবার ভাবছিলাম, রাস্তাঘাটে মানুষ দেখে ভয় পাব, এটা কি কখনও ভেবেছিলাম!
সেটা অবশ্য তিন মাস আগের কথা। গত কয়েক মাস ধরে দেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে। ‘আনলকের’ এক এক ভাগে একটু একটু করে খুলেছে অফিস, দোকানপাট, পার্ক, বার, রেস্তরাঁ। ভয় কেটেছে অনেকটাই। ইউরোপের গ্রীষ্মকালের স্বাভাবিক ছন্দ না-ফিরলেও তার কিছুটা ঝলক দেখা গিয়েছে জুলাই-অগস্টের ছুটির মরসুমে। বোলোনিয়ায় খোলা আকাশের নীচে রেস্তরাঁগুলোয় যথেষ্ট পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে খানাপিনা। ওয়েটারদের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস। অনেক রেস্তরাঁ আবার ‘ওপেন কিচেন’-এর ব্যবস্থা করেছে যাতে গ্রাহকদের চোখের সামনেই সমস্ত রান্নাবান্না হয়। শহরের কেন্দ্রে ‘পিয়াৎজ়া মাজিয়োরে’-তে প্রতি বছরের মতো এ বছরও হয়েছে খোলা আকাশের নীচে ফিল্ম ফেস্টিভাল। সেল-এর মরসুমে জামাকাপড়ের দোকানের সামনে লম্বা লাইন, তবে তা-ও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেই। প্রতিটি দোকানে গেটের সামনে স্যানিটাইজ়ারের বোতল, দোকানে ঢোকার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক, এক সঙ্গে বেশি লোক ঢোকাতেও নিষেধাজ্ঞা।
শুধু দোকানবাজার নয়, কর্মক্ষেত্রেও এই সাবধানতা বজায় রাখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এখনও ‘স্মার্ট ওয়ার্ক’-কেই (অর্থাৎ বাড়ি বসে কাজ, এখন সেটাই তো বুদ্ধিমানের) বেছে নিতে বলছেন। আমরা গবেষণার কাজে ল্যাবরেটরি যাচ্ছি, কিন্তু তা আগে থেকে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ করে, তা-ও বড় জোর সপ্তাহে দু’তিন দিন। গবেষণাগারে এক সঙ্গে চার জনের বেশি থাকতে পারবেন না, এই বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। এ ভাবেই কাটছে দিন, বুঝতে পারছি, এ ভাবেই কাটবে আগামী দিনগুলো।
সামনে দীর্ঘ শীতকাল আসছে, আর তার সঙ্গে আশঙ্কা বাড়ছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের। কারণ এ দেশেও ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। অগস্টের গোড়ায় দিনে গড়ে দু’শোটি কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে এক হাজার-সওয়া এক হাজারে। তাই সামনে অনেক লম্বা লড়াই আসছে। তবে আমরা জানি সেই লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। কারণ ইটালি আমাদের শিখিয়েছে যে যাবতীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে কোভিডকে সঙ্গী করেই স্বাভাবিকের দিকে কিছুটা হলেও পা-বাড়ানো সম্ভব।
(লেখক বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy