সাইবার প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের তথ্য-ভাণ্ডারের নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার বলে সামরিক বিশেষজ্ঞেরা বারবার সওয়াল করছেন। এ বার একই সুরে তথ্য-ভাঁড়ার সুরক্ষিত করার প্রয়োজনের কথা বললেন প্রাক্তন টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অরুণ শৌরি।
রবিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-এ একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শৌরি জানান, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই তথ্য-ভাণ্ডারের সুরক্ষা দরকার। দরকার পর্যাপ্ত পরিকাঠামোরও। শৌরি মনে করেন, তথ্য-ভাঁড়ারের সুরক্ষায় যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই ভারতে। চিনা হ্যাকারদের বাড়বাড়ন্তের কথা তুলে তিনি জানান, হ্যাকার বা সাইবার-দস্যুদের থাবা থেকে দেশের তথ্য বাঁচাতেই চাই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো।
তথ্য-ভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে দেশে আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সাইবার প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, লম্বা হয়ে চলেছে সাইবার-দস্যুদের হাতও। সেই জন্যই দেশের তথ্য-ভাণ্ডারের নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলছেন, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ দফতরই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই ভারতের তথ্য-ভাণ্ডার বা যোগাযোগ ব্যবস্থা শত্রু পক্ষ কিংবা জঙ্গিদের নিশানা হতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একাংশের আশঙ্কা। তথ্য-ভাঁড়ারে হানা দিয়ে জঙ্গিরা জরুরি পরিষেবাও বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
শত্রু পক্ষ তথ্য-ভাণ্ডারে থাবা বসিয়ে কী ভাবে জরুরি পরিষেবায় আঘাত হানতে পারে, তার উদাহরণ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তার এক বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহের গ্রিড চলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। তাই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে দিতে ওই সফটওয়্যারকে নিশানা করতে পারে হ্যাকারেরা। “এর জন্য বোমা-গুলি নিয়ে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। শুধু কম্পিউটারই যথেষ্ট,’’ বলছেন ওই বিশেষজ্ঞ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ একাধিক মন্ত্রকের কম্পিউটারে হ্যাকার হানা হয়েছে। হ্যাকারেরা থাবা বসিয়েছে দলাই লামা-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কম্পিউটারেও। এই ধরনের হানা কী ভাবে ঠেকানো যেতে পারে, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেনা সূত্রের খবর, তথ্য-সুরক্ষা বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেনা, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনার উদ্যোগে সাইবার কম্যান্ড গড়ে তোলা হচ্ছে। সীমান্ত পাহারার জন্য ওই তিন বাহিনীরই তিনটি কম্যান্ড আছে। দেশের তথ্য-ভাঁড়ারে নিরাপত্তা দেওয়ারও কাজ করবে তিন বাহিনীর বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে গড়া সাইবার কম্যান্ড। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
দেশের তথ্য-নিরাপত্তার জন্য গবেষণা করছে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। আইএসআই-এ ‘ক্রিপ্টোলজি অ্যান্ড সিকিওরিটি’ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্রের শিলান্যাস করেন শৌরি। আইএসআই-এর অধিকর্তা বিমল রায় জানান, এই গবেষণা কেন্দ্র নাগরিক ও প্রতিরক্ষা দু’টি ক্ষেত্রেই কাজ করবে। কাজ শুরু হবে বছর দুয়েকের মধ্যেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy