নরেন্দ্র মোদীর জোড়া আসনে লড়ার ধাক্কায় এ বার উত্তরপ্রদেশেরই দু’টি আসনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব।
গুজরাতের কোন আসন থেকে লড়বেন মোদী, তা কালই চূড়ান্ত করতে পারে বিজেপি। আমদাবাদ-পূর্ব বা সুরত আসনটি তাঁর জন্য বেছে রেখেছে দলের রাজ্য নেতৃত্ব। লালকৃষ্ণ আডবাণীর নামও গুজরাত থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদিও গুজরাত বিজেপির একাংশের আপত্তির কথা মাথায় রেখে ভোপাল আসন থেকেও আডবাণীর নাম ভাবা হচ্ছে। গুজরাতের আসন নিয়ে সিদ্ধান্তের আগেই মোদীর নাম পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি। এর ঠিক দু’দিন পরে মুলায়মও আজ নিজের গড় মৈনপুরীর পাশাপাশি আজমগড় থেকেও লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আজমগড়ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশে। বারাণসী থেকে ১০০ কিলোমিটার।
একাধিক আসনে লড়াইয়ের রেওয়াজ অবশ্য নতুন নয়। ইন্দিরা গাঁধীও ১৯৮০-তে অমেঠী ও অন্ধ্রের মেডক আসন থেকে লড়েছিলেন। লালুপ্রসাদ যাদবও ছপড়া ও মাধেপুরা থেকে একসঙ্গে নির্বাচন লড়েছেন। ১৯৫৭ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীও লখনউ, মথুরা ও বলরামপুর থেকে লড়েছিলেন। লখনউয়ে হেরে যান। মথুরায় জামানত জব্দ হয়। লোকসভায় যান বলরামপুর থেকে। ১৯৯১ সালেও বাজপেয়ী ও আডবাণী দু’টি করে আসন থেকে লড়েন। মোদীর এক জোড়া আসন থেকে লড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে দলে প্রশ্নের মুখে এই দৃষ্টান্তগুলিই দেখাচ্ছেন মোদী শিবিরের নেতারা।
কিন্তু মুলায়মও কেন জোড়া আসনে? সপা সূত্রের মতে, অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও গত এক বছরে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। ভোটে তাই মুলায়মকেই দলের মুখ করবে সপা। রাজ্যের সাম্প্রতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে দলের সংখ্যালঘু-ভিত কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মুলায়ম নিজে আজমগড়ের মতো একটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন বেছে নিলেন। এক সপা নেতার কথায়, “মোদীকে বারাণসীতে প্রার্থী করাটা কি শুধুই উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে প্রভাব ফেলার কৌশল? গোড়া থেকেই অযোধ্যা, মথুরা ও কাশী আরএসএসের মূল নিশানা। বারাণসীতে মোদীকে দাঁড় করিয়ে হিন্দুত্বের রাজনীতিই করতে চাইছে সঙ্ঘ। প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই মোদী সেই উস্কানি দিতে শুরু করেছেন। নেতাজি আজমগড়ে প্রার্থী হলে, তাতে আশ্চর্যের কী রয়েছে?”
মায়াবতী ও কংগ্রেসের নেতারা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, উত্তরপ্রদেশে মোদী ও মুলায়ম হাতে হাত ধরে মেরুকরণের রাজনীতি করছেন। মোদী হিন্দুত্ব ও মুলায়ম সংখ্যালঘুর রাজনীতি করছেন। যাতে অন্য দলগুলি পরিসর দখল করতে না পারে। যদিও এই কথা মানতে নারাজ বিজেপি। বরং বারাণসী থেকে মোদীর নাম ঘোষণার পর তাঁর বিরুদ্ধে অরবিন্দ কেজরীবাল ও রাহুল গাঁধীর তৎপরতাকে কটাক্ষ করে অরুণ জেটলি আজ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মোদী-বিরোধী পরিসরে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ দিচ্ছেন। তাঁর নিজের কাছে অখণ্ড ভারত ও উন্নয়নই একমাত্র লক্ষ্য।”
মোদীর টক্কর নিতে অরবিন্দ কেজরীবাল ইতিমধ্যেই বারাণসী থেকে লড়ার কথা জানিয়েছেন। আগামী রবিবার ভগৎ সিংহের মৃত্যুদিবসে সেখানে সভা করার কথা ছিল আপ নেতার। বিধান পরিষদের নির্বাচনের জন্য সেই সভা পিছিয়েছে দু’দিন। রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও আজ ঘোষণা করেছেন, “বারাণসীতে কংগ্রেস এমন চমক দিতে চলেছে যে বিজেপি-ও ঘাবড়ে যেতে পারে। সেই অবস্থায় মোদী বারাণসী থেকে লড়ার সিদ্ধান্ত বদল করলেও অবাক হব না।” যদিও আজ দলের তৃতীয় তালিকা প্রকাশ হলেও বারাণসীর আসনে প্রার্থী-রহস্য খোলসা করেনি কংগ্রেস। বারাণসীতে সংখ্যালঘু নেতা মোখতার আনসারিও মোদীকে টক্কর নিতে প্রস্তুত। মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি অবশ্য এই বহুমুখী লড়াইয়ে মোদীরই লাভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
মোদী-বিরোধিতায় এক নম্বর হওয়ার দৌড়ে পাছে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সুবিধা হয়, কংগ্রেস অবশ্য সতর্ক সে ব্যাপারে। আজও তারা সব দলকে আবেদন জানিয়েছে তাদের বারাণসীর প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য। নীতীশ কুমারের দলও ওই আবেদন করেছিল। এখনও কোনও দলই সাড়া দেয়নি তাতে। তবে কংগ্রেস আপাতত বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রার্থীর নাম না ঘোষণা করে বিজেপির উপর স্নায়ুর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে। আর অপেক্ষায় রয়েছে দ্বিতীয় আসন থেকে মোদীর নাম ঘোষণার। মোদী সে পথে হাঁটলে সেটাকেও অস্ত্র করবে কংগ্রেস। বলতে পারবে, মোদী ভোটে জিতে বারাণসীর মানুষকে ধোঁকা দিতে পারেন। তাই আজ এ নিয়ে কটাক্ষ করে সুরজেওয়ালা বলেন, “দেশে এতই মোদী হাওয়া যে এখন শুনছি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী দু’টি আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন। তবে কি সবটাই মুখেন মারিতং জগৎ!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy