Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জেভিএমের দুর্গ দখলে মরিয়া অর্জুন

আড়াই বছরে কচ্ছপ অনেকটাই এগিয়েছে। সেই ‘দৌড়’ সপ্তাহ খানেক আগে মাঠে নেমেছে খরগোস। পরিণতি প্রচলিত গল্পের মতোই হবে, না কি ব্যতিক্রম ঘটবে জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রে তা নিয়েই চলছে জল্পনা। ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ছোট্ট জনপদ, নারগা মোড়। জামশেদপুর আর ঘাটশিলার মধ্যে নারগা। রাস্তার ধারে মোবাইল রিচার্জের দোকানে রাখা ছিল গেরুয়া রঙের লিফলেট। এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর মুখ। অন্য দিকে বিজেপি প্রার্থীর।

ভোটের প্রচারে অজয় কুমার। জামশেদপুরে।  ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

ভোটের প্রচারে অজয় কুমার। জামশেদপুরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
জামশেদপুর শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৯
Share: Save:

আড়াই বছরে কচ্ছপ অনেকটাই এগিয়েছে। সেই ‘দৌড়’ সপ্তাহ খানেক আগে মাঠে নেমেছে খরগোস।

পরিণতি প্রচলিত গল্পের মতোই হবে, না কি ব্যতিক্রম ঘটবে জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রে তা নিয়েই চলছে জল্পনা।

৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ছোট্ট জনপদ, নারগা মোড়। জামশেদপুর আর ঘাটশিলার মধ্যে নারগা। রাস্তার ধারে মোবাইল রিচার্জের দোকানে রাখা ছিল গেরুয়া রঙের লিফলেট। এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর মুখ। অন্য দিকে বিজেপি প্রার্থীর। দোকানের মালিক শ্যাম অগ্রবাল বললেন, “আড়াই বছর আগের ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জামশেদপুর লোকসভা আসন জেভিএমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অর্জুন মুণ্ডা। উপ-নির্বাচনে বিজেপি নিজের জমানতটুকুও বাঁচাতে পারেনি।”

তারপরেই জামশেদপুরের রাজনীতিতে ‘ইতিহাস’ হয়ে গিয়েছেন অজয় কুমার। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার সাংসদ। সেই শহরে দলের বর্তমান সাংসদ পদ প্রার্থী। এক সময় তাঁর হাতে ‘এনকাউন্টার’ হওয়ার ভয়ে জামশেদপুর থেকে পালিয়েছিল এলাকার সমাজবিরোধীরা। সেই ভাবমূর্তিই প্রাক্তন পুলিশ সুপার অজয়কে আড়াই বছর আগে সাংসদ পদে বসিয়ে দেয়। দারুণ ইংরেজি বলেন। সারা বছর কাজের মধ্যে থাকেন।

তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ডাক্তারই (অজয় কুমার চিকিৎসকও। এলাকায় তাঁকে ডাক্তার বলেন অনেকেই) গ্রামে গ্রামে সৌর আলোও বসিয়েছেন।

অন্য দলের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার আগেই তাঁর সমর্থকরা নিশ্চিত, ফের দিল্লি যাচ্ছেন অজয়ই। তাঁর সঙ্গে লড়াই এড়াতে জামশেদপুরে প্রার্থী হতে চাননি বিরোধী শিবিরের অনেক বড় নেতাই। এমনকী, পরাজয়ের ভয়ে অর্জুন মুণ্ডাও জামশেদপুরে লড়তে চাননি বলেই গুঞ্জন।

এমন পরিস্থিতিতে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারলেন মুণ্ডাই। জেভিএমকে পিছনে ফেলতে এক সপ্তাহ আগে থেকে এখানে খরগোসের দৌড়ে নেমেছে বিজেপি। কার্যত এই কেন্দ্রের লড়াই এখন বিজেপি আর জেভিএমের মধ্যে দাঁড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিধায়ক বিদ্যুৎবরণ মাহতোকে দল ভাঙিয়ে এনে জামশেদপুরে দলীয় প্রার্থী করেছেন মুণ্ডা। ইস্পাতনগরীর বাইরে বিস্তীর্ণ গ্রাম এলাকায় আদিবাসী আর বঙ্গভাষীদের বসবাস। ইতিহাস বলছে, ওই সব জায়গার ভোটই এই কেন্দ্রের প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করে। বিদ্যুৎ রাঢ় বাংলায় কথা বলেন। বিধানসভায় বাংলাতেই শপথ নিয়েছিলেন। ফলে তিনি স্থানীয় মানুষের কাছের লোক বলেই দাবি বিজেপির। তার সঙ্গে মোদী ম্যাজিক তো রয়েছেই।

জামশেদপুরের বিজেপির প্রথম সারির নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামীর কথায়, “মুণ্ডাজির এটা সম্মানের লড়াই। উনি এই আসনের জন্য নিজে নেমেছেন। বিদ্যুৎ যদি নিজের ব্যক্তিগত ক্যারিশমার ভোটটা টেনে দেন তবে জয় নিশ্চিত।”

বিদ্যুৎ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় জামশেদপুরে লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। একনিষ্ঠ জেএমএম সমর্থকও দলীয় প্রার্থী নিরূপ মহান্তি জিতবেন বলে দাবি করছেন না। এমনকী শনিবার সন্ধ্যায় টেলকোয় জেএমএম এর নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বক্তব্যে কার্যত হতাশার সুরই শোনা গেল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি নিজে প্রার্থী দিতে পারল না। আমাদের লোককে নিয়ে গেল।”

১৪ মাস আগে মুণ্ডা সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন হেমন্ত। এ বার তাঁর দল থেকেই বিধায়ক ভাঙিয়ে পাল্টা চাল দিলেন মুণ্ডা। তাঁর ভুলেই এক সময় জামশেদপুর হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপি-র। এ বার মুণ্ডার প্রার্থীই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন অজয়ের দিকে।

প্রায়শ্চিত্ত না প্রতিশোধ?

ঘাটশিলায় নির্বাচনী প্রচারে আদিবাসীদের সঙ্গে মঞ্চে মাদল বাজানোর পর মুণ্ডার সহাস্য মন্তব্য, “এটা রাজনীতি।”

অন্য বিষয়গুলি:

jvm arjun munda prabal gangyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE