সীতারাম ইয়েচুরির আকস্মিক প্রয়াণের পরে সিপিএম মধ্য মেয়াদে কাউকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়নি। প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে পলিটব্যুরোর সমন্বয়ক (কো-অর্ডিনেটর) করে গত সাত মাস ধরে দলের কাজ পরিচলনা করছে দিল্লির একে গোপালন ভবন। আগামী ২-৬ এপ্রিল তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে হবে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। সেখান থেকেই নতুন সাধারণ সম্পাদক ঠিক হবে। কিন্তু কে হবেন সাধারণ সম্পাদক? পার্টি কংগ্রেসের পর প্রকাশ্য সমাবেশের বক্তাতালিকা তা নিয়ে জল্পনার জন্ম দিয়েছে সিপিএমের অন্দরে।
বক্তাতালিকায় নাম রয়েছে বিদায়ী পলিটব্যুরোর চার সদস্যের। প্রকাশ, বৃন্দা কারাট, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং তামিলনাড়ুর জি রামকৃষ্ণন। এ ছাড়াও মহিলা নেত্রী ইউ বাসুকির নাম রয়েছে তালিকায়। সভার সভাপতিত্ব করবেন তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পি শানমুগাম। এই তালিকা নিয়েই কৌতূহল এবং জল্পনা।
কেন জল্পনা? এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যিনি হবেন, তিনি পার্টি কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তৃতা করবেনই। তার মানে কি ওই চার জনের মধ্যে থেকেই কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব? আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করেন। কিন্তু সাধারণ ভাবে শীর্ষ নেতৃত্বের ঠিক করে রাখা ব্যক্তিই সর্বসম্মত ভাবে নির্বাচিত হন।
সিপিএমে যে বয়সবিধি রয়েছে, তা কঠোর ভাবে মেনে চললে বর্তমান পলিটব্যুরোর সপ্তরথীকে বাদ পড়তে হবে। তালিকায় প্রকাশ, বৃন্দা, বিজয়ন এবং রামকৃষ্ণনও রয়েছেন। ঘটনাচক্রে, এই চার জনেরই নাম রয়েছে প্রকাশ্য সমাবেশের বক্তাতালিকায়। বিজয়ন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দলীয় দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তা হলে কি প্রকাশকে ফের দায়িত্ব দেবে সিপিএম? এ প্রসঙ্গে সিপিএমের একটি অংশ যেমন বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না, তেমনই অনেকের বক্তব্য— মহিলা হিসাবে বৃন্দাকে দায়িত্ব দিতে পারে দল। কিন্তু এই চার জনের মধ্যে যাঁকেই সিপিএম দায়িত্ব দিক, তাতে সিপিএমকে বয়সবিধি ভেঙে ‘ব্যতিক্রমী’ সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিতে হবে। যেমন বিজয়নকে কেরলে এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারকে ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে রেখে ‘ব্যতিক্রম’ করে ফেলেছে সিপিএম।
তবে প্রকাশিত বক্তাতালিকা দেখে এখনই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে জল্পনার পক্ষে নন সিপিএমেরই আর একটি অংশ। তাঁদের অভিমত, এঁদের মধ্যে থেকে কেউ সাধারণ সম্পাদক হবেনই, এমনটা ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তাঁর নাম বক্তাতালিকায় যুক্ত হয়ে যাবে।
সীতারামের মৃত্যুর পরে কারাটেরা চেয়েছিলেন বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সর্বভারতীয় দলের অন্তর্বর্তী দায়িত্ব নিন। কিন্তু সেলিম রাজি হননি। তার ফলে কারাটকে কো-অর্ডিনেটর করেছিল সিপিএম। সেলিমের উপর থেকে সেই ‘চাপ’ এখন যে সরে গিয়েছে তা নয়। কারণ দিল্লির অনেকেই মনে করেন, সেলিমের বিভিন্ন ভাষায় অনর্গল বলে যাওয়ার যে দক্ষতা রয়েছে, তা অনেকের নেই। দক্ষিণী নেতাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিন্দি ভাষায়। মধ্যবর্তী সময়ে এমএ বেবিকে নিয়েও আলোচনা চলেছে সিপিএমের অন্দরে। কিন্তু কেরল লবি বেবির নামে এখনও সায় দিচ্ছে না।
শনিবার থেকে সিপিএমের দু’দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে দিল্লিতে। রবিবার শেষ হবে। সেখানে পার্টি কংগ্রেসে যে সাংগঠনিক নথি পেশ হবে তা নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে। তবে তার নীচের ধাপে বেশি আগ্রহ বা আলোচনা একটাই। পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে?