Who was spy Sehmat Khan of the movie Raazi in reality dgtl
raazi
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেশে ফিরেছিলেন ‘রাজি’-র গুপ্তচর সেহমত খান, কী হয়েছিল তার পর
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৪১
‘‘শ্রীনগরের প্রাসাদোপম বাড়ি ছেড়ে এখানে থাকেন কেন?’’ প্রশ্ন শুনে কিছু ক্ষণের নীরবতা। তার পর উত্তর এল, ‘‘এই গ্রামে আবদুল থাকত।’’ প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছিলেন কী পরিণতি হয়েছিল আবদুলের। উল্টো দিক থেকে উত্তর এসেছিল, আবদুল মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর কারণও জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ বার জবাব এসেছিল, ‘‘আমি তাঁকে ট্রাকের চাকায় পিষে মেরে ফেলেছি।’’ (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০২৪১
যিনি এই উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি মাঝবয়সি কাশ্মীরি। পরনে সাদা সালোয়ার কামিজ, শিফনের ওড়না। দু’চোখের অভিব্যক্তি বেশির ভাগ সময়ে ঢাকা থাকত কালো চশমার আড়ালে। নিহত আবদুল ছিলেন পাকিস্তানে তাঁর শ্বশুরবাড়ির বিশ্বস্ত ও পুরনো পরিচারক। (ছবি: শাটারস্টক)
০৩৪১
বহু সাধ্যসাধনার পর ওই মধ্যবয়সিনীর বাড়িতে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন প্রশ্নকর্তা। ২০০০ সালের কোনও এক দিন পঞ্জাবের প্রত্যন্ত মালেরকোটলায় তাঁর বাড়ির দরজায় পৌঁছেছিলেন নৌসেনার প্রাক্তন আধিকারিক হরিন্দর সিক্কা। নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৪৪১
শুনে ওই পঞ্চাশোর্ধ্ব বিনীত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, তিনি চান না তাঁর অতীতের কথা আলোচনা করতে। প্রত্যাখ্যাত হরিন্দর ফিরে যাননি। সকাল ১০টা থেকে বিকেল অবধি একটি মাত্র জলের বোতল সম্বল করে বসেছিলেন তাঁর বন্ধ দরজার সামনে। (ছবি: শাটারস্টক)
০৫৪১
অবশেষে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ আবার খুলে গিয়েছিল দরজা। এ বার মধ্যবয়সিনী বলে ছিলেন, ‘প্লিজ কাম ইন।’ তার পর অনেক বার তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন হরিন্দর। কিন্তু কোনওবারই দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয়নি। আলাপের সর্বোচ্চ মেয়াদ ছিল পাঁচ মিনিট। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৬৪১
ওই টুকরো আলাপ দিয়েই মালা গেঁথেছিলেন হরিন্দর। সেই মালা-ই রূপ পায় ‘কলিং সেহমত’ বইয়ে। যে বই আবার সেলুলয়েডবন্দি হয় ‘রাজি’ নামে। যদিও আসল সেহমতকে (পরিবর্তিত নাম) কোনওদিন রাজি করানো যায়নি বাইরের দুনিয়ার সামনে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করার জন্য। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৭৪১
সেহমতের সন্ধান হরিন্দর পেয়েছিলেন সম্পূর্ণ কাকতালীয় ভাবে। নৌসেনার লেফ্টেন্যান্ট কম্যান্ডার হরিন্দর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়েছিলেন নব্বইয়ের দশকের গোড়াতেই। এর পর তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তার পদে কর্মরত ছিলেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৮৪১
কার্গিল যুদ্ধের সময় তিনি সাংবাদিক সেজে পৌঁছেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। উদ্দেশ্য, গ্রাউন্ড জিরো থেকে যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা। সেখানেই এক বার সেনা আধিকারিকদের সামনে মেজাজ হারিয়ে সিক্কা অভিযোগ করেছিলেন, ভারতীয় সেনার গাফিলতিতেই শত্রুপক্ষ ঘাঁটি দখল করতে পেরেছে। (ছবি: আর্কাইভ)
০৯৪১
তাঁর উষ্মার প্রতিবাদ করেছিলেন এক সেনা অফিসার। বলেছিলেন, ‘‘সবাই বিশ্বাসঘাতক হয় না, স্যর। আমার মা বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না।’’ এই দুটো লাইন, বিশেষ করে ‘আমার মা’ শব্দ দুটো তাড়া করে বেড়াচ্ছিল হরিন্দরকে। দিল্লি ফিরে এসেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। আবার তিনি যান কাশ্মীর। খুঁজে বার করে ওই সেনা আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন হরিন্দর। (ছবি: আর্কাইভ)
১০৪১
কিন্তু তাঁর মায়ের কাছে পৌঁছতে আরও এক বছর সময় লেগেছিল। অবশেষে ঠিকানা যোগাড় করে মালেরকোটলায় সেহমতের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হরিন্দর। তাঁর বক্তব্য শোনার পাশাপাশি গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। উদ্দেশ্য গোপন করে অতিথি হয়ে ছিলেন এক বিচারপতির কাছে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১১৪১
ফলে সহজেই পৌঁছতে পেরেছিলেন অভীষ্ট গন্তব্যে। সন্ধান নিতে পেরেছিলেন সেহমতের। তা ছাড়া তিনি নিজে দীর্ঘদিন ছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে। ফলে সব মিলিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মালেরকোটলার বাসিন্দা কাশ্মীরি মহিলা যা বলেছেন, তা ভুল বা মিথ্যে নয়। (ছবি: শাটারস্টক)
১২৪১
সত্যি-মিথ্যের হিসেব করেননি কুড়ি বছরের সেহমতও। যখন বাবার কথায় তিনি সম্মত হয়েছিলেন পড়শি অথচ শত্রুদেশের হাই প্রোফাইল সেনা আধিকারিকের বাড়িতে পুত্রবধূ হয়ে যেতে। সংসার করার জন্য নয়। বরং ‘হিন্দুস্তানের চোখ আর কান’ হয়ে থাকতে। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৩৪১
সেহমতের বাবা হিদায়েতুল্লাহ (পরিবর্তিত নাম) ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর কারবার ছিল সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে। সে দেশের উচ্চ মহলেও ছিল তাঁর অনায়াস গতি। অথচ ব্যবসার আড়ালে হিদায়েতও ছিলেন পড়শি দেশে তাঁর জন্মভূমির চোখ এবং কান।
(ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৪৪১
ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রাথমিক পর্যায়ের গুপ্তচর হিদায়েত প্রথম জীবনে সামিল হয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও। তাঁর অভিজ্ঞ নজর ষাটের দশকের শেষে বুঝেছিল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এ বার অবশ্যম্ভাবী। এ যুদ্ধে তিনি নিজেও গুপ্তচর হিসেবে সক্রিয় থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তত দিনে শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। তাঁর ডাকে দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরলেন একমাত্র মেয়ে, সেহমত। তখনও জানতেন না আর ফিরে যাওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৫৪১
প্রেমিক অভিনব (নাম পরিবর্তিত) এবং ভবিষ্যতের সব রঙিন স্বপ্নকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিন্দে ফেলে রেখে সেহমত কাঁটাতার পেরিয়ে চলে গেলেন শ্বশুরবাড়ি। যাওয়ার আগে কঠোর অনুশীলন চলেছিল ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে। মৃত্যুপথযাত্রী বাবার শেষ ইচ্ছের অমর্যাদা করতে পারেননি তাঁর একমাত্র মেয়ে, সেহমত। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৬৪১
আগ্নেয়াস্ত্র চালানো-সহ নিজেকে বাঁচানোর সবরকম উপায়ের পাশাপাশি তাঁকে শেখানো হল মর্স কোডিংয়ের খুঁটিনাটি। যাতে তিনি সাঙ্কেতিক ভাষায় তথ্য পাঠাতে পারেন। আবার, সাঙ্কেতিক ভাষায় তাঁকে পাঠানো তথ্যের পাঠোদ্ধার করতে পারেন। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৭৪১
সেই পাঠোদ্ধারের কাজের ফাঁকে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার শেখ সৈয়দের (পরিবর্তিত নাম) পরিবারেরও মন জয় করে নিলেন সেহমত। শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেক সদস্য সেহমতের গুণমুগ্ধ। শুধু তো শ্বশুর একা পাক সেনাবাহিনীর নন। সেহমতের স্বামী ইকবাল খান (পরিবর্তিত নাম) এবং ভাসুর মেহবুব সৈয়দ (পরিবর্তিত নাম)-ও ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৮৪১
ভারতীয় ব্যবসায়ী হিদায়তের সুন্দরী মেয়েকে পুত্রবধূ করার প্রস্তাব ঠেলতে পারেননি শেখ সৈয়দ। ছোট ছেলে ইকবালের সঙ্গে সেহমতের বিয়ের পর পদোন্নতি হয়েছিল ব্রিগেডিয়ার সৈয়দের। তিনি মেজর জেনারেল হন। ফলে তাঁর বাড়িতে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা এবং সেহমতের কদর, দুই-ই বেড়ে গিয়েছিল। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
১৯৪১
সেই পরিবারকে নিজের হাতে তিলে তিলে শেষ করে ফেলার গ্লানি ও পাপবোধ সেহমতের সঙ্গী হয়েছিল জীবনভর। ‘রাজি’ সিনেমায় যেমন দেখানো হয়েছিল তেমন জিপের চাকায় নয়। তিনি আবদুলকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাকের চাকায়। শেষ মুহূর্তে নিজেকে বলেছিলেন ‘‘আমি দুঃখিত আবদুল। কিন্তু তোমার থেকেও আমি বেশি ভালবাসি মাতৃভূমিকে।’’ (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২০৪১
কিন্তু তিনি কি ভাসুরকেও খুন করেছিলেন নিজের হাতে? নিজের আসল পরিচয় বাঁচাবেন বলে? সিক্কার এই প্রশ্নের উত্তরে নীরব ছিলেন সেহমত। তবে স্বীকার করেছিলেন তাঁর জন্যই প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর স্বামী ও ভাসুর, দু’জনেই। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২১৪১
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে আন্ডারকভার এজেন্ট হয়ে যাওয়া সহজ ছিল না সেহমতের পক্ষে। নিজের শ্বশুরবাড়ির পাশাপাশি তিনি বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন আরও অনেক হাই প্রোফাইল পাকিস্তানি পরিবারের। তৃতীয় পাকিস্তানি প্রসিডেন্ট ইয়াহয়া খানের নাতি নাতনি-সহ আরও অনেক পাকিস্তানি সেনা পরিবারের সন্তানদের শিক্ষকতাও করেছেন সেহমত। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
২২৪১
ভারত থেকে স্বামীর ঘর করতে আসা তরুণী হিসেবে বিশ্বাস অর্জন এবং গুপ্তচর হয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কাজ করে যাওয়া, দু’টি দুই মেরুর কাজকে একইসঙ্গে করতে হয়েছিল সেহমতকে। তাঁর পাঠানো গোপন তথ্যের উপর ভিত্তি করেই রক্ষা করা গিয়েছিল ভারতীয় রণতরী আইএনএস বিক্রান্তকে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২৩৪১
সেহমতের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিক্রান্তকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গোপন ঠিকানায়। পাকিস্তানি আক্রমণ থেকে রক্ষা করা গিয়েছিল ভারতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সূত্রকে। শুধু তাই নয়। ভারতীয় নৌসেনা বিশাখাপত্তনমের কাছে ধ্বংস করেছিল পাকিস্তানি ডুবোজাহাজ পিএনএস গাজি-কে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২৪৪১
যদিও পাকিস্তান বরাবর দাবি করে এসেছে, তারাই তাদের ডুবোজাহাজকে ধ্বংস করেছিল। পাকিস্তানে থাকা কোনও এক এজেন্ট গুরুত্বপূর্ণ খবর পাঠাচ্ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন ভারতীয় নৌসেনার আধিকারিকরা। কিন্তু এই এজেন্ট যে সেহমত, সে খবর জানতেন উচ্চপদস্থ কিছু আধিকারিক মাত্র। (ছবি: শাটারস্টক)
২৫৪১
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ভারতের কাছে পাকিস্তানের নতিস্বীকারের পিছনে সেহমতের মতো আরও অসংখ্য গুপ্তচরের অবদান ছিল। কিন্তু তাঁরা রয়ে গিয়েছেন আড়ালেই। হয়তো সেহমতও থেকে যেতেন তাঁদের মতো অনুচ্চারিত। যদি না সিক্কার সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে দেখা হত তাঁর ছেলের। (ছবি: আর্কাইভ)
২৬৪১
যদিও একমাত্র সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধনে কোনওদিন বাঁধা পড়েননি সেহমত। ভারতে এসে জন্ম দিয়েছিলেন তাঁর এবং ইকবালের সন্তানের। কিন্তু তাঁকে বড় করেননি। তাঁর মনে হয়েছিল, এই ছেলের পরিবারের পরিজনদের তিনি খুন করেছেন। রক্তাক্ত হাতে মাতৃত্ব নিতে চাননি তিনি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২৭৪১
নিজের হাতে সবসময় রক্তের দাগ দেখতে পেতেন সেহমত। তাঁর ছেলেকে লালন পালন করে বড় করেছিলেন অভিনব। তিনি সেহমতের জন্য সারা জীবন বিয়ে করেননি। সেহমত দেশে ফেরার পর অভিনব নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে সেহমতকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেহমতের সম্মতি পাননি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২৮৪১
ইকবাল-সেহমতের ছেলে বড় হয়েছেন অভিনবের কাছে। নামের পিছনে ‘খান’ পদবি এবং ইসলাম ধর্মবিশ্বাস, কোনও কিছুতেই তাঁর স্বাধীনতা হরণ করেননি অভিনব। তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত প্রৌঢ় দিল্লিবাসী। চান না, তাঁর বা সেহমতের আসল পরিচয় প্রকাশিত হোক। সিক্কাকে তিনি বাধা দিয়েছেন সেহমতের প্রকৃত নাম সামনে আনতে। (ছবি: শাটারস্টক)
২৯৪১
সেহমতের ছেলে সমর ( পরিবর্তিত নাম) ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন কয়েক বছর। কিন্তু তারপর নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে অবসর নিয়ে মন দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজে। শুধু ছেলের সঙ্গেই নয় সেহমত বাকি পৃথিবীর সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। (ছবি: শাটারস্টক)
৩০৪১
ভারতে ফিরে চরম অবসাদের শিকার হয়েছিলেন। এক শিখ সাধকের সান্নিধ্য তাঁকে ধীরে ধীরে অবসাদমুক্ত করেন। বাকি জীবনটা শিখ ধর্ম ও ধর্মগুরুদের নিয়ে গভীর পড়াশোনা করেছেন সেহমত। সিক্কা দেখেছিলেন, তাঁর ঘরে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং শিখ—সবরকম ধর্মাচরণের সহাবস্থান। সেহমতের মা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ফলে শৈশব থেকেই উদার সহাবস্থানে বড় হয়েছিলেন তিনি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩১৪১
তাঁর জীবনের কথা আট বছর ধরে লিখেছেন সিক্কা। সেহমত পাণ্ডুলিপি পড়তেন এবং বেশির ভাগ অংশ আন্ডারলাইন করে বাদ দিতে বলতেন। বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন পছন্দ করতেন না। ২০০৮ সালে প্রথম বার প্রকাশিত হয় ‘কলিং সেহমত’। ২০১৮-এ মুক্তি পায় ‘রাজি’। (ছবি: শাটারস্টক)
৩২৪১
তার আগে সেহমতের কথায় সিক্কা তৈরি করেন ‘নানক শাহ ফকির’। সেহমতের কথামতো এই ছবির লভ্যাংশ দান করে দিয়েছিলেন সিক্কা। পরে ‘রাজি’-র কাহিনিকার হিসেবেও মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক তিনি দান করে দিয়েছিলেন, সেহমতের ইচ্ছাকে সম্মান দিতেই। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩৩৪১
সিক্কা চেয়েছিলেন তাঁর গল্প পরিচালনা করুন গুলজার। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন বর্ষীয়ান পরিচালক। শেষে অক্ষয়কুমারের সূত্রে সিক্কার সঙ্গে আলাপ হয় গুলজারকন্যা মেঘনার। তিনি পরিচালনা করেন ‘রাজি’। তবে ছবিটি নিয়ে ভাললাগার পাশাপাশি সিক্কার মনে ক্ষোভও আছে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩৪৪১
তাঁর কথায়, সেহমত যখন দেশে ফেরেন তখন দিল্লি বিমানবন্দরে লাল কার্পেট ও গোলাপবৃষ্টি করে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। তিনি কার্পেট গুটিয়ে জাতীয় পতাকার সামনে নতজানু হয়ে দেশের মাটি স্পর্শ করেছিলেন। সিনেমায় এই অংশ দেখানো হয়নি বলে ক্ষুব্ধ সিক্কা। তা ছাড়া ছবির সঙ্গে তাঁর নামও কোথাও জড়িয়ে নেই বলে মেঘনাকে দোষারোপ করেন সিক্কা।
(ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩৫৪১
নামের পরোয়া কোনওদিন করেননি সেহমত নিজে। তিনি জানতেন, গুপ্তচরের কাজ দেশের সেবা করে যাওয়া। কিন্তু দেশ তাঁকে কোনওদিন বাকি দেশপ্রেমী বা শহিদের মতো স্বীকৃতি দেবে না। বরং, ধরা পড়লে দেশ হয়তো তাকে অস্বীকার করবে। এই অস্বীকৃতিকেই ঈশ্বরের দান বলে মাথায় করে নিয়েছিলেন সেহমত। ভারতে ফিরে নিজের বাবার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির প্রায় সবটাই দান করে দিয়েছিলেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩৬৪১
জীবনের শেষ দিন অবধি মালেরকোটলায় সেহমতের বাড়ির ছাদে উড়ত ভারতের জাতীয় পতাকা। ঠিক এ ভাবেই পতাকা উড়ত তাঁর বাবা হিদায়েতুল্লার সময়েও। শ্রীনগরে তাঁদের অট্টালিকার উপরে। আড়ালে থেকে এ ভাবেই দেশকে ভালবেসে গিয়েছেন সেহমত। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
৩৭৪১
আলিয়া ভট্টকে তাঁর পছন্দ হয়েছিল নিজের চরিত্রে। যদিও সিক্কার অভিমত, আলিয়ার সঙ্গে সেহমতের চেহারাগত সাদৃশ্য নেই। আলিয়াও চেয়েছিলেন তাঁর ছবি দেখতে। কিন্তু সিক্কা দেখাননি। কথা রেখেছেন সেহমতের। সেহমত চাননি, তাঁর পরিচয় বা ছবি প্রকাশিত হোক। আলিয়া চেয়েছিলেন এক বার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। সে সুযোগ একটুর জন্য হারান তিনি। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
৩৮৪১
‘রাজি’-র শুটিং সেটে এক দিন গিয়েছিলেন সেহমত। আলিয়া খবরও পান একজন অতিথি এসেছেন দেখা করতে। কিন্তু তিনি যে সেহমত, সেটা জানতেন না আলিয়া। তিনি মেক আপ রুম থেকে বাইরে বার হতে দেরি করেছিলেন। তত ক্ষণে অন্তরালবাসিনীর গাড়ির ঘুরে চলে গিয়েছিল অন্য দিকে। পরে আলিয়া বলেন, এই আক্ষেপ তাঁর জীবনভর রয়ে যাবে। (ছবি: ‘রাজি’ ছবির ভিডিয়ো থেকে)
৩৯৪১
সেহমত অবশ্য সব ক্ষোভ-আক্ষেপের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিলেন। ভারতে ফেরার পরে জীবনের বাকি তিন দশকের বেশি সময় সন্ন্যাসজীবন কাটিয়ে, রাতের ঘুমের মধ্যেই তিনি পাড়ি দেন জীবনের কাঁটাতার পেরিয়ে অনন্তের পথে। ২০১৮-র এপ্রিলে, ‘রাজি’-র মুক্তির কয়েক দিন আগে। (ছবি: শাটারস্টক)
৪০৪১
মা, তেজি খানের ( নাম পরিবর্তিত) পাশে ঘুমিয়ে আছেন তাঁর একমাত্র আদরের মেয়ে, সেহমত। জীবনের পরেও নিরাপত্তার কারণে গোপন সেহমতের শেষ আশ্রয়ও। সেই সেহমত, যাঁকে দেখে সিক্কার মনে হয়েছিল এ রকম অপূর্ব ও নিষ্পাপ সুন্দরীর হাতে মানুষ তো দূর অস্ত্, একটা মাছিকেও মারতে পারবে না। (ছবি: শাটারস্টক)
৪১৪১
তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন সেহমতকে, ‘‘কেন আপনি এই ত্যাগস্বীকার করলেন?’’ স্মিত হেসে অতীতের গুপ্তচর বলেছিলেন, ‘‘কারণ দেশের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে আর কিছুই নয়।’’ (ছবি: শাটারস্টক)