জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। তার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তানও বৃহস্পতিবার জানায়, ভারতের সঙ্গে তারা বাণিজ্য বন্ধ করছে। ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে শাহবাজ় শরিফের সরকার। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টালমাটাল। পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির সমস্যা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, যদি অনুরূপ পদক্ষেপ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা হত, তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়ত?
পাকিস্তানের অনেক যাত্রিবাহী এবং মালবাহী বিমান ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করে। এ ছাড়া আরবের উপসাগরীয় এলাকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় অংশে পাকিস্তানের বিমানের যাত্রাপথ ভারতের আকাশ দিয়ে। ভারত যদি পাকিস্তানের জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, তবে সেখানকার বিমানগুলিকে অনেকটা ঘুরে ইরান, আফগানিস্তান কিংবা মধ্য এশিয়ার উপর দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছোতে হবে। তাতে অনেক বেশি সময় যেমন লাগবে, জ্বালানিও বেশি খরচ হবে। বেড়ে যাবে বিমানের ভাড়া। ঠিক যে সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় সংস্থাগুলির।
আরও পড়ুন:
আকাশপথে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হলে বিমানগুলিতে আরও বেশি জ্বালানি রাখতে হবে। তার ফলে সার্বিক ভাবে বিমানের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় যাত্রীসংখ্যা, নয়তো জিনিসপত্রের ওজন কমাতে হবে। যাত্রীসংখ্যা কমিয়ে দিতে হলে বিমানসংস্থাগুলির আয় কমবে। ফলে সেগুলি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। ভারত পাল্টা পদক্ষেপ করলে ওই সংস্থা আরও বিপদে পড়তে পারে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ভারতের বিমানগুলিকে যে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, ভারত অনুরূপ পদক্ষেপ করলে পাকিস্তানের জন্য সেই ঘুরপথের দৈর্ঘ্য আরও বেশি হবে। অর্থাৎ, ভারতের আকাশ এড়াতে তুলনামূলক বেশি পথ অতিক্রম করতে হবে পাক বিমানকে। পরোক্ষে এর ফলে ক্ষতি হতে পারে পাকিস্তানের বাণিজ্যেও।
আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংগঠনের (আইসিএও) নিয়ম অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলি একে অপরকে বাণিজ্যিক বা যাত্রী পরিবহণের প্রয়োজনে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিতে বাধ্য। ভারত এবং পাকিস্তানও এই দেশের তালিকায় আছে। তবে জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে এই নিয়মে ব্যতিক্রম হতে পারে।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। পাকিস্তানিদের ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। পাল্টা হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ এবং আকাশসীমা বন্ধের কথা ঘোষণা করে ইসলামাবাদ। দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হলে আরও পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।