Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রজস্বলা রুখেও পুজো প্রথম মায়ের 

অবশেষে পেরিয়ে এলাম সেই আঠারো ধাপ। সোনার জলে রং করা, সোনা, রুপো, তামা, টিন ও লোহার পঞ্চধাতুতে তৈরি এই সিঁড়ি বেয়ে ঢুকতে হবে গর্ভগৃহে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাঁদের মাথায় ইরুমুদি আছে, শুধু তাঁদেরই এখান দিয়ে ঢোকার অধিকার। বাকিদের অন্য দরজা দিয়ে। 

দর্শনে: শবরীমালায়। পিটিআই

দর্শনে: শবরীমালায়। পিটিআই

গৌতম চক্রবর্তী
শবরীমালা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

অবশেষে পেরিয়ে এলাম সেই আঠারো ধাপ। সোনার জলে রং করা, সোনা, রুপো, তামা, টিন ও লোহার পঞ্চধাতুতে তৈরি এই সিঁড়ি বেয়ে ঢুকতে হবে গর্ভগৃহে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাঁদের মাথায় ইরুমুদি আছে, শুধু তাঁদেরই এখান দিয়ে ঢোকার অধিকার। বাকিদের অন্য দরজা দিয়ে।

সামনে অন্ধ্রের বয়স্কা মারিয়াম্মা। বাবার হাত ধরা আট-ন’বছরের বালিকাও। আঠারো সিঁড়ি় আসলে প্রতীক। প্রথম পাঁচটি পঞ্চেন্দ্রিয়ের রূপক। পরের আটটি কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য, অসূয়া, স্বার্থপর প্রতিযোগিতার। তারও পরের তিনটি সত্ত্ব, রজ ও তমোগুণের। শেষ দু’টি, বিদ্যা ও অবিদ্যার। এই ধাপগুলি পেরোলে আমরা নির্গুণ ব্রহ্মে পৌঁছব। নারী-পুরুষ ভেদ নেই, সবই নির্গুণ ব্রহ্ম। প্রায় শঙ্করাচার্যের তত্ত্ব। রজস্বলাকে যতই অন্ত্যজ করে রাখা হোক, শঙ্করাচার্য বাদ দিয়ে কেরলের শবরীমালা কী ভাবেই বা হিন্দু ধর্মে নিজেকে বজায় রাখবে?

গর্ভগৃহে আয়াপ্পনের মূর্তিটি ছোট, বাইরে থেকে অনেক কষ্টে নিচু হয়ে নজর করতে হয়। উবু হয়ে বসে বরাভয় মুদ্রায় এক বালক।

মন্দির চত্বর জুড়ে আলোর বন্যা। তিরুঅনন্তপুরমের ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এর অধ্যাপিকা দেবিকা জে বলছিলেন, ‘‘আগে জঙ্গলে একটা ছোট্ট মন্দির ছিল। সেটা পুড়ে যায়। ১৯৫২-তে নতুন মন্দির হওয়ার পর শবরীমালার রমরমা।’’ মন্দির চত্বরের নাম ‘সন্ধিদানম্’। বোঝাই গেল, নতুন। আসতে হয় আন্ডারপাস-ওভারব্রিজের গোলকধাঁধা পেরিয়ে। ‘অষ্টাদশ সোপান’-ও আটের দশকে তৈরি। মূল মন্দিরের সোনার জল রঙের চালাটাও নতুন। দু’জায়গায় লেখা, সেটি ‘ডক্টর’ বিজয় মাল্যর অর্থানুকূল্যে তৈরি।

মন্দির নতুন, পুজো-পদ্ধতিও। সারা ক্ষণই বাজে যেসুদাসের গাওয়া আয়াপ্পা ভজন। ১৯২০ নাগাদ গানটা লিখেছিলেন এক মহিলাই— আলাপুঝার জানকী আম্মা। তখনও শবরীমালা জঙ্গলের এক ছোট্ট মন্দির। নারী-পুরুষ ভেদাভেদহীন এই সঙ্গীতমূর্ছনাই শবরীমালার বৈশিষ্ট।

কিন্তু গল্পটা অন্যত্র। আয়াপ্পা নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী। ‘মহিষী’ দানবী তাঁর হাতে মারা গেলে বেরিয়ে আসে সুন্দরী এক নারী, মালিকাপুরথাম্মা। বিরক্ত আয়াপ্পা বলেন, ‘‘যে দিন কোনও কানি আয়াপ্পন এই মন্দিরে আসবে না, তোমাকে বিয়ে করব।’’ ফলে প্রথম বারের যাত্রী ‘কানি আয়াপ্পন’দের অন্যতম দায়িত্ব, মন্দিরের আগে শরমকোঠি বলে এক জায়গায় খেলনা তির বা বর্শা রেখে যাওয়া। যাতে মালিকা বোঝেন, কানিরা এসেছিল।

ঘি ভর্তি নারকেল দিলাম আয়াপ্পাকে। পিছনে মালিকার মন্দির। প্রধান পুরোহিত বললেন, ‘‘ইরুমুদির চাল, হলুদ ঢেলে দিন মালিকা মন্দিরে।’’ সমাজ এবং পুরাণকথা যা-ই বলুক, শবরীমালার পুজো-পদ্ধতি নারীকে স্বীকার করে নিয়েছে। মালিকাকে অর্ঘ্যদান ছাড়া আয়াপ্পার মন্দিরে আসা বৃথা। ফোনে দেবিকা সাধে একটি মলয়ালম শব্দ শিখিয়ে দেননি। ‘পুরথাম্মা’। মানে, প্রথম মা।

আয়াপ্পার মন্দিরে মালিকা প্রথম মায়ের সম্মানেই বিরাজমান। এর পর নারীর রজস্বলা দশা, অশুচি অবস্থা নিয়ে তর্ক নিষ্প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Sabarimala Woman Ayyappa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE