ছবি: পিটিআই
সীমান্তের ও-পারে পানামা নথিতে নাম জড়িয়ে গদি হারালেন নওয়াজ শরিফ। সীমান্তের এ-পারে প্রশ্ন উঠল, নরেন্দ্র মোদী পানামা নথিতে নাম থাকা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের পুত্র, বিজেপি সাংসদ অভিষেক সিংহ থেকে নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ছিল পানামা নথিতে। যাঁরা বিদেশের বিভিন্ন কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে টাকা লগ্নি করেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘যে অভিযোগে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হয়েছে, একই কারণে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত। একই সংস্থা থেকে ফাঁস হওয়া নথি, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?’’
করের ক্ষেত্রে শিথিল নিয়মের জন্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বাহামার মতো দেশগুলি কালো টাকার কারবারিদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য। কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে লগ্নির একটি তালিকা পানামার আইনজীবী সংস্থা ‘মোজাক ফঁসেকা’-র দফতর থেকে ফাঁস হয়। বিশ্বের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম একজোট হয়ে এর তদন্তে নেমেছিল। সেই তদন্তেই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো ব্যক্তিদের নাম উঠে আসে। নথিতে এ দেশেরও ৫০০ জনের নাম এসেছে। অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন থেকে মোদী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির দাদা বিনোদ আদানির নামও ছিল। নথি বলছে, রমন-পুত্র অভিষেক ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের একটি সংস্থার মালিক। সিঙ্ঘভির যুক্তি, ‘‘বিরোধীদের দুর্নীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন মোদী। কিন্তু নিজেদের বেলায় চুপ।’’ বিজেপি নেতারা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, রমন-অভিষেক অনেক আগেই বিদেশে কালো টাকা গচ্ছিত রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের কটাক্ষ, পানামা নথিতে ব্যক্তিরাই সরকারের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’।
অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, পানামা নথি প্রকাশ্যে আসার পরেই মোদীর নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আয়কর দফতর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের অফিসাররা রয়েছেন। প্রতিটি নাম ধরে ধরে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু এটাও স্পষ্ট হওয়া দরকার, বিদেশে সংস্থা তৈরি করা শেয়ার কেনা মানেই বেআইনি কাজ নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কই বিদেশে সংস্থা গড়া, যৌথ উদ্যোগ শুরু করা বা শেয়ার কেনার অনুমতি দিয়েছে। তবে বিদেশে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেআইনি পথ নেওয়া হয়েছে কি না বা বিদেশে লগ্নি থেকে আয়ের ক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয়েছে কি না, তার তদন্ত হচ্ছে।
কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই তদন্ত? অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী জেটলি নিজেই সংসদে জানিয়েছেন, সুইৎজারল্যান্ডে এইচএসবিসি-র অ্যাকাউন্ট মালিকদের ফাঁস হওয়া তথ্যের তদন্তে ১৯ হাজার কোটি কালো টাকার সন্ধান মিলেছে। সংবাদমাধ্যমের তদন্তে পানামা নথি থেকে বিদেশে গচ্ছিত ১১,০১০ কোটি কালো টাকার সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া, ৮,৪৩৭ কোটি টাকার আয়ে কর বসানো হয়েছে। ১,২৮৭ কোটি টাকার জরিমানা আদায় হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বা বিচারবিভাগীয় তদন্ত না হলে বিজেপি তথা মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের গায়ে কোনও দিনই আঁচ আসবে না। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের দাবিতে শীর্ষ আদালতে আর্জিও জানানো হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, সরকারের রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy