মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতকে নভেম্বর থেকেই খুনের ছক কষেছিলেন তাঁর স্ত্রী মুস্কান এবং প্রেমিক সাহিল। সেই সময়েও সৌরভকে মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সৌরভ মদ্যপান না করায় সে যাত্রায় তাঁদের পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল বলে অভিযুক্তদের জেরা করে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু সৌরভকে মারার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন মুস্কান এবং সাহিল। গত ৪ মার্চ সেই সুযোগও এসে গিয়েছিল।
২৭ ফেব্রুয়ারি মুস্কানের জন্মদিন পালন করেন সৌরভ। ২৮ ফেব্রুয়ারি কন্যার জন্মদিন পালন করেন দু’জনে মিলে। ওই দিনও সৌরভকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচৈতন্য করে মুস্কান খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু সে দিনও খুনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ৪ মার্চ সৌরভের পছন্দের খাবার কোপ্তা বানিয়েছিলেন মুস্কান। সেই খাবারে ঘুমের ওষুধ এবং কড়া ডোজ়ের মাদক মেশান। সেই খাবার খেলেই যাতে অচৈতন্য হয়ে পড়েন সৌরভ।
জেরায় পুলিশ আরও জানতে পারে, সৌরভকে খুনের বেশ কিছু দিন ধরেই পরিচিত এবং বন্ধুদের মুস্কান বলেছিলেন, পুজোর কিছু জিনিস মাটিতে পুঁততে হবে। এমন কোনও জায়গা যেখানে কারও যাতায়াত নেই, তার সন্ধানও চেয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু কোনও বন্ধুই তাঁকে এ কাজে সাহায্য করতে চাননি। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, দেহ লোপাটের জন্য পুঁতে দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে মাথায় এলেও পরে সেই কৌশল বাতিল করেন মুস্কান। তার পর ড্রামের বিষয়টি মাথায় আসে সাহিলের। একটি দোকান থেকে ৫৫০ লিটারের জলের ড্রাম, ৮০০ টাকায় মাংস কাটার দু’টি ছুরি কিনে নিয়ে আসেন। ৫০ কেজি সিমেন্টও কেনেন। ৪ মার্চ সৌরভের পছন্দের খাবার কোপ্তা বানান মুস্কান। তার মধ্যে ঘুমের ওষুধ এবং কড়া ডোজ়ের মাদক মিশিয়ে সৌরভকে খেতে দেন। সেই খাবার খেয়ে সৌরভ অচৈতন্য হয়ে পড়তেই তাঁর বুকে একের পর এক কোপ বসান মুস্কান। আর মাথা কেটে আলাদা করেন সাহিল। সৌরভের দু’হাতের কব্জি কেটে নেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, সেই কব্জি এবং মাথা নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সাহিল। আর এখান থেকে তন্ত্রসাধনার প্রশ্ন উঠে আসছে। তা হলে কি তন্ত্রসাধানার জন্যই সৌরভের মাথা এবং হাতের কব্জি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সাহিল? সেই দিকটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও মুস্কানকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন সৌরভ। বাড়িতে বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন সৌরভ। সাল ২০১৬। মার্চেন্ট নেভির কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরে যদিও লন্ডনে একটি বেকারিতে কাজ করা শুরু করেন সৌরভ। পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০১৯ সাল থেকে সাহিলের সঙ্গে মুস্কানের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুস্কানের ভাড়াবাড়িতে সাহিলের নিত্য যাতায়াত ছিল। কারও যাতে সন্দেহ না হয়, তাই বাড়ির মালিক এবং পড়শিদের কাছে সাহিলকে ‘ভাই’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
কিন্তু ২০২১ সালে মুস্কানের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন সৌরভ। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির মালিকই এক দিন মুস্কান এবং সাহিলকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। মেরঠের পুলিশ সুপার আয়ুষ বিক্রম সিংহ বলেন, ‘‘জেরায় মুস্কান স্বীকার করেছেন সাহিলের সঙ্গে ২০১৯ সাল থেকেই সম্পর্ক ছিল তাঁর। ২০২১ সালে সৌরভ এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। কিন্তু পরিবার চায়নি তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যাক। বিশেষ করে একটি সন্তান হওয়ায় সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য বাড়ি থেকে বোঝানো হয় সৌরভকে।’’ কিন্তু তার পরিণতি যে এত ভয়ঙ্কর হবে, কেউ আঁচ করতে পারেননি।