নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
ক’দিন আগেই নরেন্দ্র মোদীর মুখে হাসি ফুটিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সহজে ব্যবসা করা যায় এমন দেশের তালিকায় ভারতকে অনেকটা তুলে এনে। আজ সেই হাসি চওড়া করল আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি’জ। ১৩ বছর পরে ভারতের মূল্যায়ন (রেটিং) এক ধাপ এগিয়ে দিল তারা। এত দিন ভারতে ঋণ দেওয়াটা মাঝারি মাপের ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করত মুডি’জ। যা আসলে তৃতীয় ডিভিশনে কোনও মতে পাশ করা। রেটিং এক ধাপ এগোলেও ভারত এখনও তৃতীয় ডিভিশনেই রয়ে গিয়েছে। তবে নম্বর বেড়েছে আগের থেকে। কিন্তু অগ্রগতি যত সামান্যই হোক, গুজরাত ভোটের মুখে প্রচারের আর একটা ঢাক পেয়ে গেল বিজেপি।
তবে এটাও ঠিক যে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলির প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ তারা নিরপেক্ষ নয়। ভারত ও চিন সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নের মাথামুন্ডু নেই। ভারতের থেকে দুর্বল অর্থনীতির বহু দেশকেই তুলনায় উঁচু রেটিং দেয় তারা।
এই অবস্থায় রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন মোদী। চিন, ব্রাজিলকে পাশে নিয়ে বলেছিলেন, দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে ব্রিক্স-ভুক্ত দেশগুলির জন্য আলাদা মূল্যায়ন সংস্থা তৈরি করবেন! তার পরই মুডি’জ মূল্যায়ন সংশোধন করে ভারতে বিদেশি অর্থ ঢালার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে বলায় প্রশ্ন উঠেছে, মোদীর চাপের মুখেই কি মাথা নত করল তারা?
ক্রেডিট রেটিং কী?
• কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তারই মূল্যায়ন। অর্থাৎ, রেটিং যত ভাল, তাকে ধার দেওয়ার ঝুঁকিও তত কম।
মূল্যায়ন করে কারা?
• বিশ্বে প্রধান তিন রেটিং সংস্থা হল— এসঅ্যান্ডপি, মুডি’জ এবং ফিচ।
এ দিন কী হল?
• ১৩ বছর পরে ভারতের রেটিং বাড়াল মুডিজ। Baa3 থেকে এক ধাপ উঠে এখন হল Baa2
তার মানে?
• এত দিন মুডিজের খাতায় ভারত লগ্নিযোগ্য দেশের তালিকার শেষ ধাপে। সেখান থেকে এক ধাপ উঠলেও মুডি’জের মতে ভারতে লগ্নি এখনও বেশ ঝুঁকির।
সংশয়ের কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নোট বাতিল, জিএসটি ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে এখন সবথেকে বেশি ডামাডোল চলছে। জিএসটি চালুর পরে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় সরকারকে আরও ধার করতে হবে কি না, রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে কি না, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেনের কথায়, ‘‘গত পাঁচ-ছয় বছরে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা এখনই সবথেকে বেশি। অথচ ঠিক এখনই মুডি’জের মূল্যায়ন একটু অদ্ভুত।’’
শেষ বার মুডি’জ-এর মূল্যায়ন ভাল হয়েছিল বাজপেয়ীর আমলে। সেই সরকারের অর্থমন্ত্রী, অধুনা মোদী-সরকারের সমালোচক যশবন্ত সিন্হা মনে করিয়ে দিয়েছেন, আর এক সংস্থা এসঅ্যান্ডপি কিছু দিন আগেই রাজকোষের অবস্থা, ঋণের বোঝা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছে। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এসঅ্যান্ডপি-কে অভিশাপ দিয়ে মুডি’জের সাফল্য উদ্যাপনে সংসদে মধ্যরাতে অনুষ্ঠান হোক!’’
প্রশ্ন হল, মোদীর হুমকিতে কি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রভাবিত হতে পারে? প্রণববাবুর মতে, ‘‘হতেও পারে। কারণ আগে ভারতের আর্থিক শক্তি তেমন ছিল না। এখন তা অনেকটাই বেড়েছে। তাই পাল্টা সংস্থা গড়ে তোলার হুমকিতে কাজ হতে পারে।’’ যদিও গত ছ’মাস ধরে মূল্যায়ন সংস্থাগুলিকে তোপ দেগে চলা মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, অনেক আগেই এই মূল্যায়ন পাওনা ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy