—ফাইল চিত্র।
রাজনাথ সিংহ বলছেন, গণপিটুনির ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন। আর প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ারের মতে, গো-হত্যা বন্ধ হলেই থেমে যাবে গণপিটুনি।
রাজনাথ বলছেন, গণপিটুনি রোধে সরকার আইন আনার কথা ভাবছে। তখন সঙ্ঘের মুসলিম সংগঠনের নেতা ইন্দ্রেশ কুমারের ঘোষণা, গোমাংস খাওয়া ছাড়ুন। আপনা থেকেই বন্ধ হবে গণপিটুনি। সরকার যখন গণপিটুনি রুখতে সচিব-মন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি গড়ছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে ফলাও করে রাজ্যগুলির কাছে পাঠাচ্ছে, তখন রাজস্থানের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী যশোবন্তসিংহ যাদব বলছেন, গরুর অমর্যাদা হলে হিন্দু রক্ত গরম হবেই!
তবে সঙ্ঘ বা বিজেপি নেতারা এমন কথা বলে চললেও শাসক শিবিরের একাংশ মনে করছেন, গণপিটুনির বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে। তাই গণপিটুনি রুখতে গত কাল লোকসভায় বিবৃতি দিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজও বিরোধীদের চাপে মুখ খুলতে হয় তাঁকে।
আজ শুরু থেকেই সরকারকে গণপিটুনি প্রশ্নে অস্বস্তিতে ফেলতে একজোটে সক্রিয় হয় বিরোধী শিবির। সকালে সংসদ শুরু হওয়ার আগে গাঁধী মূর্তির সামনে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদেরা। লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই সরব হয় বিরোধীরা। গণপিটুনি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অবিলম্বে কড়া আইন তৈরির সুপারিশ করেন। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হন কংগ্রেসের মল্লিকার্জ্জুন খড়্গেও। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গণপিটুনির নায়কদের মালা পরালে ওই অবস্থাই হবে।’’
গণপিটুনি নিয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ
• প্রতি রাজ্যে জেলা স্তরে ডিএসপির নেতৃত্বে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স গঠন করবেন এসপি। কারা গুজব বা ভুয়ো খবর ছড়ায়, সে-দিকে নজর রাখবে দলটি।
• জেলা/ সাব ডিভিশন/গ্রামে গত পাঁচ বছরে গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে সেই এলাকাকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের (১৭ জুলাই) তিন সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত করতে হবে।
• মাসে অন্তত এক বার জেলার সমস্ত থানা প্রধান ও গোয়েন্দা অফিসারদের সঙ্গে এসপি-র বৈঠক।
• স্থানীয় কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জনমানসে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব থাকলে তা দূর করা।
• প্রতি তিন মাসে রাজ্যের সমস্ত নোডাল অফিসারের সঙ্গে পুলিশের ডিজি বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের বৈঠক।
• অবাঞ্ছিত ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করা।
• গণপিটুনির ঘটনায় দ্রুত অভিযোগ দায়ের।
• অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
• দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার নির্দেশ।
• গণপিটুনির ঘটনায় ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রচার।
• সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা।
• গণপিটুনিতে নিহত বা আহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রকল্পের রূপরেখা আগামী ১৬ অগস্টের মধ্যে নির্দিষ্ট করতে হবে রাজ্যগুলিকে।
জবাবে আজ ফের শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন রাজনাথ। তবে গণপিটুনি নিয়ে সরকার যে উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট হয়ে যায় বিকেলের মধ্যেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, গণপিটুনি সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তা পাঠানো হয়েছে রাজ্যগুলিতে। যাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে নোডাল অফিসার নিয়োগ করে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। পুলিশ সুপার ও ডিজি পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy