Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Uttar Pradesh Assembly Election 2022

UP Election & Covid Bodies: পলি পড়েছে সময়ের, গঙ্গায় ভেসে-আসা কোভিডদেহের কথা আর ভাবে না গাজিপুর

২০২১ সালের মাঝামাঝি যে ঘটনা সারা দেশের পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে তীব্র অভিঘাত তৈরি করেছিল। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার স্রোতে ভেসে এসেছিল একের পর এক মৃতদেহ। কোভিডে মৃতদের দেহ। সর্বাঙ্গে পরিজনদের অসহায়তা বয়ে নিয়ে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গায় ভাসতে থাকা সেই সব বেওয়ারিশ লাশ গভীর সঙ্কটে ফেলেছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে।

শুধু উন্নাওয়েই ৯০০ দেহ গঙ্গার চরে বালিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ৪০০টি কানপুরে। কনৌজে ৩৫০টি। ২৮০টি গাজিপুরে।

শুধু উন্নাওয়েই ৯০০ দেহ গঙ্গার চরে বালিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ৪০০টি কানপুরে। কনৌজে ৩৫০টি। ২৮০টি গাজিপুরে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
গাজিপুর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৪২
Share: Save:

কোভিডের বডিগুলো কোথায় ভেসে এসেছিল?

‘‘গাজিপুর চলে যান। এখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার। একটা পুল পাবেন। সেটা পার হয়ে একটা চৌরাহা। সেখান থেকে ডানদিকে চলে যাবেন। তার পর বাঁ-দিকে। তার পরে কাউকে একটা জিজ্ঞাসা করে নেবেন। গঙ্গার কিনারা কিনারা দিয়েও যেতে পারেন।’’

বললেন হাইওয়ের পার্শ্বস্থিত এক ছোট্ট দোকানে বসে-থাকা নিস্পৃহ মানুষটি। অতঃপর গাড়ি চলল তাঁর দেখানো ধূলি ধূসরিত পথে।

গোরক্ষপুর থেকে বারাণসী যাওয়ার রাস্তায় একটু ঘুরপথে চলেছি। কারণ, সেই এলাকাটা দেখতে চাই। উত্তরপ্রদেশের ভোট-বুকে যে এলাকা বা সেই ঘটনার উল্লেখ থাকবে না, তা তো হতে পারে না! ২০২১ সালের মাঝামাঝি যে ঘটনা সারা দেশের পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে তীব্র অভিঘাত তৈরি করেছিল। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার স্রোতে ভেসে এসেছিল একের পর এক মৃতদেহ। কোভিডে মৃতদের দেহ।

লাশের পর লাশ ভাসছে। দেশ, বিশ্ব শিউরে উঠেছিল এমন সব দৃশ্য সামনে আসার পর। গাজিপুরে ১৫ মে, ২০২১ তোলা ড্রোনচিত্র। গঙ্গা এখানে বাঁক নিয়েছে আধখানা চাঁদের মতো। বাঁক জুড়ে বিশাল চড়া। চড়ায় এসে এ ভাবেই আটকে গিয়েছিল কোভিডে-আক্রান্তদের মৃতদেহ।

লাশের পর লাশ ভাসছে। দেশ, বিশ্ব শিউরে উঠেছিল এমন সব দৃশ্য সামনে আসার পর। গাজিপুরে ১৫ মে, ২০২১ তোলা ড্রোনচিত্র। গঙ্গা এখানে বাঁক নিয়েছে আধখানা চাঁদের মতো। বাঁক জুড়ে বিশাল চড়া। চড়ায় এসে এ ভাবেই আটকে গিয়েছিল কোভিডে-আক্রান্তদের মৃতদেহ। ছবি: রয়টার্স।

সর্বাঙ্গে পরিজনদের অসহায়তা বয়ে নিয়ে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গায় ভাসতে থাকা সেই সব বেওয়ারিশ লাশ গভীর সঙ্কটে ফেলেছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কোভিড মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল।

প্রায় বছর ঘুরে যাওয়ার মুখে। উত্তরপ্রদেশে চলছে মহাগুরুত্বপূর্ণ বিধানসভার ভোট। কারও মনে আছে সেই সব বেওয়ারিশ লাশের কথা? মনে পড়ছে? কে জানে কোথা থেকে ভাসতে ভাসতে এসে গঙ্গার বিভিন্ন চরে আটকে-থাকা যেসব লাশ কামড়ে, খুবলে খাচ্ছিল কুকুর আর কাকের ঝাঁক। যেসব লাশ তাদের সঙ্গে করে বয়ে এনেছিল মৃত্যুর কটূগন্ধ।

হইহই পড়ে গিয়েছিল দেশে। গাজিপুরের তৎকালীন জেলাশাসক মঙ্গলাপ্রসাদ সিংহ বলেছিলেন, রোজই একটার পর একটা দেহ ভেসে আসছে গঙ্গায়। নজরদারির জন্য পুলিশি টহল শুরু হয়েছিল। যোগী আদিত্যনাথের সরকার ‘স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স’ আর জলপুলিশ নিয়োগ করেছিল গঙ্গা-সহ সমস্ত নদীতে টহল দেওয়ার জন্য। সমস্ত এলাকার লোকদের গঙ্গার জলে নামতে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল। গঙ্গার জলের যে কোনও ধরনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল।

গাজিপুরের গঙ্গাতট এখন। স্রোতস্বিনী কি মুছে দিতে পেরেছে একের পর এক পচা শবের সেই ভয়ানক দৃশ্য আর দুর্গন্ধ!

গাজিপুরের গঙ্গাতট এখন। স্রোতস্বিনী কি মুছে দিতে পেরেছে একের পর এক পচা শবের সেই ভয়ানক দৃশ্য আর দুর্গন্ধ! —নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গায় তেমন দেহ নজরে এলে পুলিশই তা জল থেকে তুলত। তার পর ডাম্পার, পে-লোডারে গাদাগাদি করে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হত অন্ত্যেষ্টির জন্য। পুলিশই সেগুলির অন্তিম দাহ-সংস্কার করত। তথ্য বলছে, সে সময়ে উত্তরপ্রদেশ-বিহারের সীমানায় প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ২০টি দেহ গঙ্গা থেকে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২,০০০ বেওয়ারিশ লাশ। দু’হাজার!

গাজিপুরের পাশাপাশিই লাশের ভিড় জমেছিল গাজিয়াবাদ, কানপুর, উন্নাও, কনৌজ এবং বালিয়ায়। শুধু উন্নাওয়েই মোট ৯০০ দেহ গঙ্গার চরে বালিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ৪০০টি কানপুরে। কনৌজে ৩৫০টি। ২৮০টি এই গাজিপুরে।

এই গাজিপুরে? এই গাজিপুরে! সাধারণ মানুষ আর পুলিশকে প্রশ্ন করতে করতে পৌঁছনো গেল গাজিপুরের সেই চরের কাছে। ভিড়ে থইথই রাস্তায় মাস্কবিহীন জনতার মধ্য দিয়ে পথ করে যেতে যেতে সংখ্যাগুলো মাথায় ঘুরঘুর করছিল— উন্নাও ৯০০, কানপুর ৪০০, কনৌজ ৩৫০, গাজিপুর ২৮০। পাশাপাশিই মনে হচ্ছিল, সেই ঘটনার অভিঘাত কি এখনও অবশিষ্ট আছে?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা দেশে সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছিল ২ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষের। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গঙ্গার ধারে ভেসে-আসা লাশ কি সেই গুনতিতে পড়েছিল? সম্ভবত না। দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের কিছু নাচার এবং প্রান্তিক মানুষ অনন্যোপায় হয়ে তাঁদের পরিজনদের অচ্ছুত মৃতদেহ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন গঙ্গাবক্ষে। যার যায়, তারই যায়। কে আর অত খোঁজ রাখে!

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ২০২১ সালের ১০ মে প্রথম ৭১টি দেহ পাওয়া গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ-বিহার সীমানার চৌসায়। জলে ভাসতে ভাসতে ফুলেফেঁপে উঠেছে। পচে গিয়েছে। গলে গিয়েছে। ভেসে-আসা সেই দেহগুলি গঙ্গা থেকে তুলে এনেছিল বিহারের বক্সার জেলার পুলিশ। আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, নিয়মমাফিক পচাগলা দেহগুলির ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। ডিএনএ নমুনাও নেওয়া হয়েছে। তার পর নদীর ধারে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।

তার একদিন পর, ১১ মে চৌসা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের গাজিপুর জেলার গহমার গ্রামে গঙ্গার জলে ভেসে এসেছিল আরও কয়েক ডজন পচাগলা দেহ। বেওয়ারিশ সেই লাশ খুবলে খাচ্ছিল কুকুর আর কাকের দল। মনে হচ্ছিল, ওই দেহগুলো তো কারও পুত্র, কারও কন্যা, কারও মা, কারও বোন, কারও বাবা বা ভাই ছিল। মৃত্যুর পর তাদের একটু সম্মান প্রাপ্য ছিল।

কিন্তু এ তো এই পোড়া দেশের গ্রামজীবনের চিরন্তন পিকচার পোস্টকার্ড!

ভেসে আসার লাশ গণচিতায়। ইলাহাবাদে (অধুনা প্রয়াগরাজ) ২৫ জুন, ২০২১-এর দৃশ্য।

ভেসে আসার লাশ গণচিতায়। ইলাহাবাদে (অধুনা প্রয়াগরাজ) ২৫ জুন, ২০২১-এর দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স।

পরিভাষায় বলা হয় ‘জলপ্রবাহ’। যা হিন্দুদের মধ্যে কোনও কোনও জাতের রেওয়াজ।

সাধারণ ভাবে হিন্দুরা মৃতদেহের দাহ-সংস্কারই করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও কোনও জাত ‘জলপ্রবাহ’ করে। অর্থাৎ, মৃতদেহ দাহ না-করে সেটি জলে ভাসিয়ে দেওয়া। সাধারণত শিশু, কুমারী (অবিবাহিতা) কন্যা, সর্পাঘাতে বা সংক্রমণে মৃতদের দেহ দাহ না-করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কখনও কখনও সেই দেহ ভাসানো হয় কাপড়ে মুড়ে। কখনও এমনিই। জনশ্রুতি হল, এই রেওয়াজের জন্ম দাহ করার সংস্থান বা সামর্থ্য না-থাকার কারণে। ভাসিয়ে দেওয়া দেহ যাতে ফুলে উঠে জলের উপর ভাসতে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে অনেক সময় মৃতদেহের সঙ্গে পাথর বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে পাথরের ওজনে দেহটি নদীর তলদেশে চলে যায়। ভেসে না-ওঠে।

বালি এবং পলিমাটি খুঁড়ে এ ভাবেই চরে পুঁতে দেওয়া হচ্ছিল শবের পর শব। সেই সব দেহ কুকুরের দল আর কাকের ঝাঁক খুবলে খেয়েছে অনেক জায়গাতেই। ১৭ মে, ২০২১ উন্নাওয়ের দৃশ্য।

বালি এবং পলিমাটি খুঁড়ে এ ভাবেই চরে পুঁতে দেওয়া হচ্ছিল শবের পর শব। সেই সব দেহ কুকুরের দল আর কাকের ঝাঁক খুবলে খেয়েছে অনেক জায়গাতেই। ১৭ মে, ২০২১ উন্নাওয়ের দৃশ্য। ছবি: এএফপি।

গঙ্গায় ভাসতে ভাসতে গাজিপুরের এই চরে এসে ঠেকে-যাওয়া দেহগুলোর সঙ্গে পাথর বাঁধা ছিল না। স্থানীয় লোকজনেরই প্রথম চোখে পড়ে নিরুপায় দেহগুলো। তাঁরা খবর দেন গঙ্গার অনতিদূরে গাজিপুর জেলাপুলিশের সদর দফতরে। পুলিশ নৌকা করে গিয়ে ভাসতে-থাকা দেহগুলো পাড়ে টেনে আনে। কী ছিল তাদের অবস্থা? সেই সময়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে মহিলা শবদাহক বলেছিলেন, ‘‘এমন দৃশ্য আমি আগে কখনও দেখিনি! পুরো এলাকা জুড়ে পচাগলা দেহের গন্ধ। মৃত্যুর গন্ধ!’’

পিচ রাস্তার ডানপাশে একটা মলিন আবাসন। তিনতলা হলদে রঙের ফ্ল্যাটবাড়ি। গায়ে সরকারি আবাসন-আবাসন গন্ধ। যাই-যাই শীত দ্বিপ্রহরের রোদ্দুরে বারান্দায় শুকোচ্ছে জামাকাপড়। অন্তত চারটে প্রমাণ সাইজের ফুটবল মাঠের সমান চর পড়েছে গঙ্গায়। বালি পেরিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছে কত কত দূর! এক বছর আগের ঘটনার ছায়ামাত্রও নেই কোথাও।

গঙ্গা এখানে বাঁক নিয়েছে আচমকা। আধখানা চাঁদের মতো। সেই বাঁক জুড়েই বিশাল চড়া। যে চড়ায় এসে আটকে গিয়েছিল কোভিডে-আক্রান্তদের মৃতদেহ।

আজ গাজিপুরের এই ঘাটের কাছে কারও সে ভাবে মনেই নেই সেই দিনের কথা! নাকি তাঁরা মনে করতে চান না? মাত্রই দশ মাস আগের ঘটনা। এই দৃশ্য গাজিপুরে ১৯ মে, ২০২১ তোলা।

আজ গাজিপুরের এই ঘাটের কাছে কারও সে ভাবে মনেই নেই সেই দিনের কথা! নাকি তাঁরা মনে করতে চান না? মাত্রই দশ মাস আগের ঘটনা। এই দৃশ্য গাজিপুরে ১৯ মে, ২০২১ তোলা। ছবি: রয়টার্স।

কেন গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোভিডে মৃতদের দেহ? এই প্রশ্নের জবাব গ্রামীণ ভারতে বহুযুগ ধরে একই— অর্থাভাব। কোভিডে মৃতদের দেহ দাহ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। আগে যে চিতা জ্বালানো যেত ৫০০ টাকায়, সেই চিতা তখন জ্বালানোর খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকায়। পুরো অন্ত্যেষ্টির খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১০,০০০ টাকায়। কারণ, তখন কেউ কোভিডে মৃতের দেহ ছুঁতে চাইছিলেন না। কাঠের দামও ছিল আকাশছোঁয়া।

কী করবেন নাচার, প্রান্তিক গঞ্জের মানুষ? যে মা গঙ্গা তাঁদের সব পাপ ধুয়ে নিয়ে যান, সেই মায়ের স্রোতে প্রিয়জনকে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া!

ধু-ধু করছে বালি। বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ির মতো। অনেকটা দূরে বয়ে চলেছে গঙ্গা। পারে দাঁড়িয়ে প্রাণপণে ভাবতে চেষ্টা করছিলাম কোথায়, কোন জায়গায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠেকেছিল দেহগুলো। মনে পড়ছিল, সেই দেহের ভিড়ে স্থানীয় এক মদ্যপের দেহও কয়েক হাত মাত্র বালি এবং পলিমাটি খুঁড়ে এই চরে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। এক রাতের প্রবল বৃষ্টিতে সেই বালি ধুয়ে গিয়ে যা বেরিয়ে পড়েছিল। রাস্তার কুকুর এসে খুবলে খাচ্ছিল সেই মদ্যপের দেহ।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায়। এটি দশম কিস্তি।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায়। এটি দশম কিস্তি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নদীর পারে অচেনা চেহারা দেখে গুটি গুটি এসে ভিড় জমালেন এলাকার কিছু মানুষ। তাঁরা কৌতূহলি। কিন্তু স্মৃতিবিভ্রংশে ভুগছেন। কোভিডে মৃতদের দেহ ভেসে আসার কথা, কী আশ্চর্য, কারও সেভাবে মনেই নেই! নাকি তাঁরা মনে করতে চান না? মাত্রই দশ মাস আগের ঘটনা। অথচ মনে নেই! কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফিরে আসছে মাস্ক-হীন যাপন। রাস্তায় রাস্তায় চিলুবিলু ভিড়। গাড়ি-ঘোড়া-রিকশা-টোটো আর অটোর ভিড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। জীবন যেমন চলছিল চলছে। কোথাও কোনও হেলদোল নেই। কোনও বিচলন নেই। বৈকল্য নেই।

স্বাভাবিকতার পিছনে আকুল হয়ে দৌড়তে-থাকা এই জীবনে কি আর দশ মাস আগের ঘটনা ছাপ ফেলতে পারবে? ইভিএমের সামনে দাড়িয়ে মনে পড়বে কুকুর আর কাকের ঝাঁকের খুবলে-খাওয়া দেহগুলোর কথা? গাদাগাদি করে যেগুলো ডাম্পারে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আবর্জনার মতো!

দুঃস্বপ্নের স্মৃতির বর্ষণ কি সময়ের নির্লিপ্তির পলি সরিয়ে পুঁতে-রাখা পচাগলা অতীত বার করে আনতে পারে? কে জানে! (চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy