Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Uttar Pradesh Assembly Election 2022

UP Election & Ram Mandir: দোকান ভাঙে ভাঙুক, রামলালার মন্দির তো হবে! বুলডোজার যোগীর পাশেই আছে অযোধ্যা

যোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রামমন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বানাতে বুলডোজার নামাবেন। যে কারণে অযোধ্যার অলিগলিতে তাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘বুলডোজার যোগী’। যোগীর বুলডোজারে যাঁদের দোকান গুঁড়িয়ে যাবে, তাঁদের অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। বলছেন, ‘‘দোকান ভাঙে ভাঙুক! রামলালার মন্দির তো হবে।’

মন্দিরশহর যোগী আদিত্যনাথের ভক্ত। অযোধ্যার ভোট পদ্ম ছাড়া অন্য কোনও লতাপাতায় যাবে না।

মন্দিরশহর যোগী আদিত্যনাথের ভক্ত। অযোধ্যার ভোট পদ্ম ছাড়া অন্য কোনও লতাপাতায় যাবে না। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৫৬
Share: Save:

গাড়ি আর যাবে না। হাত তুলে আটকে দিলেন রাম জন্মভূমি থানার কর্তব্যরত কনস্টেবল। তার পর ‘হাই সিকিউরিটি জোন’ লেখা ভয়ালদর্শন ব্যারিকেডের ওপার থেকে মুখ বাড়িয়ে আদেশ দিলেন, ‘‘পিছে করো গাড়ি! আভি পিছে করো!’’

আরে! পত্রকার তো। রামলালার মন্দিরে যেতে চাই! কার্ড দেখাব?

দেখা গেল, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ (আসলে রাম জন্মভূমি থানার পুলিশ) পত্রকার-টত্রকার বিশেষ বোঝে না। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও নয়। তারা শুধু বোঝে হলুদ পাস। যেটা কিছু দূরের কোতোয়ালি থানা থেকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সেই চক্করে একবার পড়লে তো গোটা দিনটাই মাটি। অতএব মানে মানে গাড়ি পিছিয়ে রওনা হয়ে পড়া গেল ঘুরপথে।

রামলালার মন্দিরে যাওয়ার অনেক পথ। কিন্তু একটি ছাড়া সব ক’টিতেই কড়া প্রহরা। সেই ভয়ঙ্কর দেখতে ব্যারিকেড। পদে পদে ঠোক্কর। দীর্ঘ তিন দশক আগে কারসেবকদের (‘কার’ অর্থাৎ, ‘ঘর’। ঘরের সেবক। যা অপভ্রংশে ‘করসেবক’ বলে সাধারণ্যে পরিচিত) হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল এই শহরে। গোটা ভারতের রাজনীতিকে পাল্টে দিয়েছিল যে ঘটনা। যে ঘটনার ক্ষত এখনও, এতদিন পরেও বহন করছে গোটা দেশ। ভবিষ্যতেও করবে। যে ঘটনার কথা ভুলিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিজেপি। ভবিষ্যতেও করবে।

বাবরি মসজিদ নিশ্চিহ্ন। ৫ অগস্ট, ২০২০ বহুবিতর্কিত সেই জমিতে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বাবরি মসজিদ নিশ্চিহ্ন। ৫ অগস্ট, ২০২০ বহুবিতর্কিত সেই জমিতে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।

‘উত্তরপ্রদেশের ভোট-বুক’ সিরিজ লিখতে এসে সরযূ নদীর তীরে অযোধ্যায় আসা স্বাভাবিক। এটা জেনেই যে, এই মন্দিরশহর যোগী আদিত্যনাথের ভক্ত। অযোধ্যার ভোট পদ্ম ছাড়া অন্য কোনও লতাপাতায় যাবে না। তবু অযোধ্যায় আসা, যোগী-বর্ণিত ‘ভব্য রামমন্দির’ নির্মাণের কাজ কতটা এগোল তা সরেজমিনে দেখতে। আরও দেখতে যে, অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সারা শহরে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে, তার কী অবস্থা। বিশেষত, যখন যোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রামমন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বানাতে বুলডোজার নামাবেন। যে কারণে অযোধ্যার অলিগলিতে তাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘বুলডোজার যোগী’।

বড় রাস্তার পাশেই ‘সুগ্রীব কিলা’ (রামচন্দ্র লঙ্কাজয়ের পর যখন অযোধ্যায় ফেরেন, তখন তাঁর সঙ্গেই এসেছিলেন ভ্রাতা লক্ষ্মণ, ভক্ত হনুমান, বানররাজ সুগ্রীব, জাম্বুবান। সকলকেই জমি-বাড়ি দিয়ে অযোধ্যায় থিতু করেন রাম। হনুমানকে ‘কোতোয়াল’ পদ দিয়ে তাঁকে দেন ‘হনুমানগড়ী’। সুগ্রীবকে দেন ‘সুগ্রীব কিলা’)। তার পাশ বরাবর ধুলো-ওড়া কাঁচা মাটির জমি দিয়ে যেতে হয় মন্দিরে। সেই জমিতে ঢোকার মুখে একটা আস্ত বাস ভর্তি ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো। নিশ্চয়ই কোনও ভিভিআইপি-র জন্য হবে। ধুলো-ওড়া জমিতে দাঁড়িয়ে বুলডোজার, পে-লোডার। তার ধার ঘেঁষে চলেছেন পুণ্যার্থীর দল। পথের ধারে পসরা নিয়ে বসেছেন লোকজন। প্রতিটি ডালায় উড়ছে উজ্জ্বল গেরুয়া ঝান্ডা। রামচন্দ্রের ছবি এবং তার পাশে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা সিল্কের কাপড়ে পিছলে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারির রোদ্দুর।

যেমন হবে রামমন্দির।

যেমন হবে রামমন্দির। গ্রাফিক: রাম জন্মভূমি ট্রাস্ট প্রকাশিত।

ধুলোবালির জমি গিয়ে শেষ হয়েছে কংক্রিটের বাঁধানো রাস্তায়। চওড়ায় মেরেকেটে ফুটদশেক। রাস্তার পাশে টিয়াপাখি নিয়ে সার সার জ্যোতিষী। যদিও তাঁদের খুব একটা পসার আছে বলে মনে হল না। রাস্তাটা যেখানে সামান্য ডানদিকে বেঁকেছে, সেখানে বাঁদিক থেকে শুরু হয়েছে প্রায় দু’মানুষ উঁচু হলদে রঙের লোহার রেলিং। গারদের মতো। তার উপরে আবার কাঁটাতারের বেড়া। তারও ১৫ ফুট ভিতরে হুবহু একই রকমের লোহার রেলিং। সুপ্রাচীন সেই দুই গারদের মধ্যে অজস্র লতাগুল্ম গজিয়ে উঠেছে। ঝোপঝাড়ে ঢাকা। সেই রাস্তা দিয়ে আরও এগোলে একটা মর্চে-ধরা ড্রপগেট। তার পরেই শুরু হয়ে গেল গলির দু’পাশে অজস্র ভক্তিমূলক দোকান। যেমন যে কোনও তীর্থক্ষেত্রে হয়। অযোধ্যার অবশ্য মাহাত্ম্যই আলাদা। হিন্দু ধর্মের সাতটি মহাগুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের একটা, সেটা বড় কথা নয়। রাজনৈতিক মহিমায় অযোধ্যা পয়লা নম্বরে।
ঢুকতে গিয়ে সেটাই মনে হল, নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতেও!

সরু রাস্তাটা গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে একটা সাদা একতলা বাড়িতে। হিন্দিতে পরিচয় লেখা ‘রঘুপতি লাড্ডু প্রসাদম’। অর্থাৎ, এখানে রঘুপতির লাড্ডু প্রসাদ পাওয়া যায়। সাদা পাঁচিল-ঘেরা চত্বর। সেই পাঁচিলের উপর ভাঙা কাচের টুকরো বসানো। ভিতরে অম্বাদেবীর মন্দির। বাইরে সার সার দোকান। প্রতিটিতে ‘লকার’ রয়েছে। নিরাপত্তার বিধিনিষেধ মেনে ওই লকারে নিজের জিনিসপত্র রেখে তালা দিয়ে চাবিটি নিয়ে যাওয়া যায় ভিতরে।

মন্দির তৈরির কর্মশালায় যাওয়ার রাস্তা। ঢোকার মুখে রয়েছে ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর।

মন্দির তৈরির কর্মশালায় যাওয়ার রাস্তা। ঢোকার মুখে রয়েছে ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর। —নিজস্ব চিত্র।

কোনও ইলেকট্রনিক বস্তু নিয়ে ঢোকা যাবে না। ঘড়ি, মোবাইল, ক্যামেরা, কলম, ল্যাপেল যাবতীয় কিছু, যার মধ্যে ছবি তোলার কোনও মাধ্যম থাকলেও থাকতে পারে। তবে চামড়ার বেল্ট বা ওয়ালেটে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। জুটো-টুতোও খুলতে হল না। কিন্তু তিন-তিন বার তন্ন তন্ন করে দেহতল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হল (প্রত্যেককেই যেতে হচ্ছে। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে)। তিন বারই ওয়ালেট খুলে দেখাতে হল যে, তার মধ্যে কোনও লুকনো ক্যামেরা বা ওই ধরনের কিছু নেই।

তার আগে ছবি তুলতে তুলতে সম্ভবত ‘নিষিদ্ধ এলাকা’র মধ্যে খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। পোক্ত চেহারার একজন এগিয়ে এসে হাতটা খপ করে ধরলেন— ‘‘হো গ্যয়া? অব ডিলিট কিজিয়ে!’’

রুখে উঠতে যাচ্ছিলাম। হাট্টাকাট্টা চেহারা গলা নিচু এবং কঠিন করে বলল, ‘‘ইউপি পুলিশ। এখানে ছবি তোলা বারণ। তুললে মুছতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা সব দেখছে।’’

সত্যিই। দশ পা অন্তর সিসিটিভি ক্যামেরা। ওয়াচ টাওয়ার। থিকথিক করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং সিআইএসএফের জওয়ান। মনে হচ্ছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে এসে পড়লাম নাকি!

পাথর কেটে তৈরি করা হচ্ছে মন্দিরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পাথর আসছে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে।

পাথর কেটে তৈরি করা হচ্ছে মন্দিরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পাথর আসছে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে। —নিজস্ব চিত্র।

‘রামমন্দির দর্শন মার্গ’-এর দু’পাশে একের পর এক মন্দির। রাম-সীতার মন্দির। রাধা-কৃষ্ণের মন্দির। শেষতম তল্লাশির পর শুরু হয়েছে একটা শুঁড়িপথ। একটা লম্বা খাঁচার মতো। দু’পাশে জাল। মাথা উপরে জাল। খানিক এগিয়ে সেই জালের ডানদিকে দেখা গেল কর্মভূমি। বিশাল এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে দানবীয় ক্রেন। মন্দিরের ভিত তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিশাল চাতাল। এক পাশে নীল তার্পোলিনে ঢাকা বিশাল বিশাল পাথরের ব্লক। গোটা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাথায় হেলমেট-পরা ইঞ্জিনিয়াররা।

স্বাভাবিক। ২০২৪ সালের মধ্যে রামমন্দির নির্মাণ সারতে হবে। যোগী স্বয়ং নাকি মাসে দু’তিন বার এসে কাজের তদারকি করে যান। গুঁড়িয়ে-যাওয়া বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর জুড়েই হবে রামমন্দির। আর পুরো এলাকা? ১০৮ একর। ৩০৩ বিঘা।

খাঁচার ভিতর দিয়ে খানিক এগিয়ে রামলালার মন্দির। কৌণিক ছাদ। দেওয়ালে কাচ-বসানো জানালা। মন্দিরের বাইরের চত্বরটা ঢাকা লাল কার্পেটে। ভিতরে রামলালার মূর্তি। তীব্র আলোয় ঝলমল করছে। পটভূমিকায় ঝকমকে জরির কাপড়ই হবে। সেই কারণে মূর্তির আশেপাশে বাড়তি একটা জেল্লা তৈরি হয়েছে। একটা ঐশী বিভ্রম।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে পাথরে নকশা খোদাই করছেন কারিগরেরা। রোজ। ছুটি মাসে একবার। অমাবস্যা তিথিতে।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে পাথরে নকশা খোদাই করছেন কারিগরেরা। রোজ। ছুটি মাসে একবার। অমাবস্যা তিথিতে। ছবি: এএফপি।

তারের জালে আবদ্ধ মন্দিরের সামনে বসে রয়েছেন গেরুয়াধারী পুরোহিত। ভক্তিভাবপূর্ণ দর্শনার্থীদের হাতে তিনি দিচ্ছেন ছোট ছোট কাগজের প্যাকেট। ভিতরে কয়েকটা সাদা নকুলদানা। প্যাকেটের উপর গেরুয়া রঙে ছাপা ‘প্রসাদ শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির, অযোধ্যাজি’। শহর অযোধ্যাকেও ভক্তিমূলক ‘জি’ সম্বোধন! অবশ্য হবে না-ই বা কেন। রামজির মাহাত্ম্যে তাঁর জন্মস্থানও ‘জি’ তো হতেই পারে।

মন্দির ছেড়ে আরও একটু এগিয়ে জালের বাঁ পাশে কাচের বাক্সে রাখা প্রতিষ্ঠিতব্য রামমন্দিরের মডেল। দেখলে তাক লেগে যায়! তার একটু পরে রাখা আছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। যা অযোধ্যায় খননকার্য চালাতে গিয়ে পাওয়া গিয়েছিল। একটু পরেই খাঁচা শেষ। আবার ঘুরে সেই দোকানের সামনে, যার লকারে রাখা আছে বিভিন্ন ইলেট্রনিক সামগ্রী।

দোকান চালান প্রদীপ নারায়ণ যাদব। ১৯৯৬ সালে জন্ম। অতএব, বাবরি ভাঙার সময় ছিলেন না। কিন্তু গড়গড়িয়ে ইতিহাস বলে যান। সেই মুলায়ম সিংহ যাদবের কারসেবকদের উপর গুলিচালনার ঘটনা থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত। যোগীর বুলডোজারে তাঁর দোকানও গুঁড়িয়ে যাবে। রামমন্দিরে ঢোকার রাস্তা চওড়া করতে হবে তো। রাস্তার মাঝবরাবর থেকে দু’পাশে ৪০ ফুটের মধ্যে যত দোকান আছে, সব ভাঙা পড়বে। কিন্তু প্রদীপদের হেলদোল নেই। তাঁরা বলেন, ‘‘দোকান ভাঙে ভাঙুক! রামলালার মন্দির তো হবে। রামলালা চাইলে দোকান আবার হয়ে যাবে। অযোধ্যায় সবই ভগবানের ইচ্ছায় চলে।’’

এগুলো কি সেই কারসেবার সময়ের ইট? বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিশ্র’জি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। ৩০ বছর আগেকার ইট এখনও রয়ে গিয়েছে? মিশ্র’জি অবিশ্বাসীর দিকে তাকালেন, ‘‘কেন? ৩০ বছর একটা বাড়ি টেকে না?”

এগুলো কি সেই কারসেবার সময়ের ইট? বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিশ্র’জি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। ৩০ বছর আগেকার ইট এখনও রয়ে গিয়েছে? মিশ্র’জি অবিশ্বাসীর দিকে তাকালেন, ‘‘কেন? ৩০ বছর একটা বাড়ি টেকে না?” —নিজস্ব চিত্র

প্রদীপদের দেখতে দেখতে ৮০০ মিটার দূরের হনুমানগড়ীর কথা মনে পড়ছিল। লাল রঙের সিঁড়ি উঠে গিয়েছে মন্দিরে। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে ভিক্ষুকের দল। পুণ্যার্থীরা আরও পুণ্যার্জনের আশায় যদি দু-চার টাকা দিয়ে যান। সিঁড়িতে ওঠার মুখে ফটকের উপর হনুমানের খোদাই করা বরাভয় দানকারী মূর্তি। নীচে লেখা ‘শ্রী হনুমতে নমঃ’। অষ্টপ্রহর লাউড স্পিকারে নাম-সঙ্কীর্তন চলছে।

ভগবান হনুমানের দিনলিপি শোনালেন সচিন সৈনি। মন্দিরের পাদদেশে তাঁর ফুলের দোকান। সচিনের থেকে জানা গেল, মন্দির খোলে ভোর ৩টেয়। তার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ভগবান হনুমানকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য সাধ্যসাধনা করতে হয়। ৫টায় ঘুম ভাঙার পর আরতি আর ফলভোগ। বেলা ১১টায় পুরি-সব্জি-হালুয়া দিয়ে খাবার। তার পর এক ঘণ্টা কাগজ পড়েন ভগবান। ভক্তিভরে কপালে হাত ঠেকিয়ে সচিন বললেন, ‘‘সমস্ত হিন্দি কাগজ আসে প্রতিদিন। ভগবানের পড়ার জন্য।’’ তার পর বিশ্রাম। বেলা ৩টেয় চিড়ে আর দেশি ঘিয়ের ভোগ। রাত ৮টায় আরতি। তার পর ভগবানকে ফিলের সাজে সাজানো হয় ৫১টি মালা পরিয়ে। সচিনের সতর্কবাণী, ‘‘কোনও বাসি বা পুরোন মালা পরানো যাবে না। নো রিপিট!’’ রাত ১০টায় দিনের শেষ আরতি। সঙ্গে অমৃতি আর রাবড়ির ভোগ। তার পর হনুমান’জি শুয়ে পড়েন। পরদিন ভোর ৩টে থেকে আবার তাঁর ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা শুরু হয়।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায়। এটি ষষ্ঠ গন্তব্য থেকে লেখা।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায়। এটি ষষ্ঠ গন্তব্য থেকে লেখা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সচিনই বললেন, ‘‘কারসেবাপুরমে দিনরাত কাজ চলছে। রামমন্দির তৈরির পাথরে নকশা তৈরির কাজ। ২০২৪ বা ২০২৫ সালের মধ্যে মন্দির পুরোপুরি শেষ করে ফেলতে হবে। যান না, দেখে আসুন। কাছেই তো।’’

এর পরেও সে কাজ দেখতে যায় না কোন আহাম্মক। তা, কাজ হচ্ছেও বটে। সেই ‘শ্রীরাম জন্মভূমি ন্যাস মন্দির নির্মাণ কার্যশালা’-তে ঢোকার মুখেও ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য মিশ্র’জি মহারাজ সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। থাকে-থাকে রাখা রয়েছে বিশাল বিশাল পাথরের আয়তাকার চাঁই। আসছে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে। মাথায় হেলমেট পরিহিত ইঞ্জিনিয়ার সেই পাথরের গুণমান খতিয়ে দেখছেন। পাস করলে পে-লোডার দিয়ে সে সব পাথরের চাঁই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাজের জায়গায়। রয়েছে পাথর কাটার বিশালাকার করাত। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে সেই পাথরে নকশা খোদাই করছেন কারিগরেরা। রোজ। ছুটি মাসে একবার। অমাবস্যা তিথিতে।

অদূরে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির তলায় ডাঁই করে রাখা রয়েছে ইটের পাঁজা। প্রতিটির উপরে লেখা ‘শ্রীরাম’। এগুলো কি সেই কারসেবার সময়ের ইট? মিশ্র’জি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। ৩০ বছর আগেকার ইট এখনও রয়ে গিয়েছে! মিশ্র’জি অবিশ্বাসীর দিকে তাকালেন, ‘‘কেন? ৩০ বছর একটা বাড়ি টেকে না? বাড়ি তো ইটেরই তৈরি হয়। তা হলে ইট কেন ৩০ বছর থাকবে না!’’

ঠিক কথা। সত্যিই তো।

রামলালা আছেন। যোগী আদিত্যনাথ আছেন। বুলডোজার আছে। শুধু সে অযোধ্যা আর নেই। ‘অযোধ্যাজি’ হয়ে গিয়েছেন। (চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy