Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ত্রিপুরা সিপিএমে আত্মসমীক্ষা

দুর্নীতি থেকে স্বজনপোষণ, ত্রুটি কবুল

আগরতলায় ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর ত্রিপুরা সিপিএমের ২২তম রাজ্য সন্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনের আলোচনা ও গৃহীত সিদ্ধান্ত পার্টি চিঠি (৩/২০১৮) আকারে দলের কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মোট ৩০ পাতার ওই পার্টি চিঠিতে রয়েছে বিবিধ আত্মসমালোচনা।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৩
Share: Save:

রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার ২৫ বছরে দলের নেতৃত্বের একাংশ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। নেতা-কর্মীদের একাংশের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন জীবনযাত্রা মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তুলেছিল। এক দিকে দলের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতা এবং অন্য দিকে বিজেপির নানা চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি— এ সবের জেরে রাজ্যের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের মানসিকতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো তার আঁচ দলের নেতারা পাননি! রাজ্য সম্মেলনের আলোচনার নির্যাস নিয়ে তৈরি ত্রিপুরা সিপিএমের পার্টি চিঠিতে ধরা পড়ল এই আত্মসমালোচনার সুর।

আগরতলায় ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর ত্রিপুরা সিপিএমের ২২তম রাজ্য সন্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনের আলোচনা ও গৃহীত সিদ্ধান্ত পার্টি চিঠি (৩/২০১৮) আকারে দলের কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মোট ৩০ পাতার ওই পার্টি চিঠিতে রয়েছে বিবিধ আত্মসমালোচনা।

আড়াই দশক সরকার চালাতে গিয়ে ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ হয়েছিল বলেই সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য। কিন্তু সব অংশের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়নি বলেই বিজেপির ‘চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি’তে রাজ্যের মানুষ ‘মোহগ্রস্ত’ হয়েছিলেন। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ত্রুটি

স্বীকার করে নিয়েই বলেছেন, জনগণের থেকে দলের ‘বিচ্ছিন্নতা’ এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে, বিধানসভা ভোটের পরে ও গণনার পূর্বে রাজ্য কমিটির বৈঠকেও মানুষের পরিবর্তনের মানসিকতা আলোচনায় আসেনি! রাজ্য বামফ্রন্ট সরকারই যে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে, দলের কোন স্তরেই সংশয় ছিল না। এমনকী, দলীয় সমর্থকদের মধ্যে ছিল না।

সিপিএমের দলিলেই বলা হয়েছে, পার্টি নেতা ও কর্মীদের একাংশের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জীবনযাত্রার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দলকে জনগণের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। সরকারি সাহায্য বিলিবন্টনে জনগণকে যুক্ত করা ও ‘শ্রেণি ঐক্য’ গঠন করার জন্য দলের আবেদন সব জায়গায় যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়নি| ‘রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা’ দলের উপরের দিকের নেতৃত্বের একাংশকে গ্রাস করেছিল। তা ছাড়া, স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থাগুলোর কাজে কোনও কোনও অংশের ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে দলের সংগ্রাম দুর্বল ছিল। বিভিন্ন এলাকায় তৎকালীন শাসক দলের দায়িত্বশীল কর্মীদের একাংশের বিরুদদ্ধে স্বজনপোষণ, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং দলীয় স্তরে ঠিকমতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এ সবের জেরে দলেরই ক্ষতি হয়েছে বলে সিপিএম স্বীকার করেছে।

ঢালাও প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিজেপি বিধানসভা ভোটের আগে অঢেল অর্থ খরচ করেছিল। সিপিএমের অভিযোগ, জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়়ানোর কাজও হয়েছিল। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে বাস্তবে কী হচ্ছে, মানুষ দেখছেন। আমরা নির্বাচনী পর্যালোচনা করে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করি। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Tripura State Conference Self Criticism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE