Timeline of Hathras Gangrape Case in Uttar Pradesh dgtl
Hathras Gangrape
ডেটলাইন হাথরস: ১৮ দিন, ১৮ ঝলক
উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার আমজনতা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। উন্নাও-কাণ্ডের পর আবার বড়সড় প্রশ্নের মুখে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ভূমিকা। প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশও। নির্যাতিতার ধর্ষণ, খুন এবং রাজনৈতিক টানাপড়েনের রেশ ধরে ঘটনাক্রম। ছবি: পিটিআই, এএফপি, টুইটার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার আমজনতা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। উন্নাও-কাণ্ডের পর আবার বড়সড় প্রশ্নের মুখে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ভূমিকা। প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশও। নির্যাতিতার ধর্ষণ, খুন এবং রাজনৈতিক টানাপড়েনের রেশ ধরে ঘটনাক্রম। ছবি: পিটিআই, এএফপি, টুইটার।
০২১৯
হাথরসের ছোট একটি গ্রাম বুলা গড়হী। দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় গত দু’সপ্তাহ ধরে দেশের নজরে এই গ্রাম।
০৩১৯
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে বাড়ির অদূরেই খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন বছর উনিশের ওই তরুণী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, মায়ের থেকে কিছুটা দূরেই ছিলেন তিনি।
০৪১৯
আচমকাই উচ্চবর্ণের চার যুবক সেখানে এসে তরুণীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাঁকে খেতের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়। সেখানেই গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে।
০৫১৯
অকথ্য শারীরিক অত্যাচার চালানোর পর তরুণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। তার পর তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় ফেলে রেখে সেখান থেকে পালায়।
০৬১৯
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বেশ কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মেয়ের সাড়াশব্দ না পেয়ে তরুণীর মা তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খেতের ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে সেখানে ঢুকতেই গুরুতর জখম অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পান।
০৭১৯
তরুণীকে প্রথমে স্থানীয় চাঁদ পা থানায় নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অভিযোগ না নিয়ে তাঁদের পিরিয়ে দেয় থানা। এর পর ওই তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে। ২২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মারা যান তিনি।
০৮১৯
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর মুখের একাধিক জায়গায় এবং জিভে কামড়ের গভীর ক্ষত ছিল। তাঁর শিরদাঁড়া ও ঘাড়েও মারাত্মক চোট ছিল। দু’পা আর একটি হাতে কোনও সাড় ছিল না।
০৯১৯
হাসপাতাল থেকে দেহ পাওয়া নিয়েও পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা বাধে তরুণীর পরিবারের। শেষে রাত ১০টার পর হাসপাতাল থেকে দেহটি ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবারকে কিছু না জানিয়েই পুলিশ দেহটি নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ করেছেন মৃতার বাবা ও দাদা। তার পর পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতেই চুপিসাড়ে তরুণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও করে দেওয়া হয়।
১০১৯
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তরুণীকে বারবার শ্বাসরোধ করার চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর গলায় শ্বাসরোধ করার চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, শ্বাসরোধের জেরে মৃত্যু হয়নি ওই তরুণীর। বলা হয়েছে, তরুণীর ‘সি ৬ কশেরুকা’ (ঘাড়ের অংশের হাড়) ভেঙে গিয়েছিল। সেখান থেকে অতিরিক্ত রক্তপাতই তাঁর মৃত্যুর কারণ। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়, তরুণীর গোপনাঙ্গে ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। তবে ‘পেনিট্রেটিভ রেপ’ হয়নি। ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়, মৃতার গোপনাঙ্গে শুক্রাণুর নমুনা মেলেনি।
১১১৯
তরুণীর মৃত্যুর পরেই ওই ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদে নামে আমজনতা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। পুলিশের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধী দলনেতারা।
১২১৯
ক্রমাগত চাপের মুখে পরিস্থিতি সামলাতে ময়দানে নামেন যোগী। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি যে, প্রধানমন্ত্রীর উক্তি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ কেন ওই কথা বলছেন? কেন প্রধানমন্ত্রী নিজে সে কথা বলেননি।
১৩১৯
হাথরস ধর্ষণকাণ্ডে চার অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করতে চায়নি। পরে নিগৃহীতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ওই ধারা যুক্ত করে পুলিশ। ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে যোগী প্রশাসন।
১৪১৯
অন্য দিকে, পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় বুলা গড়হীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ‘বহিরাগত’-দের প্রবেশ আটকাতে গোটা গ্রাম পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। সংবাদমাধ্যমকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
১৫১৯
হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল বুলা গড়হীর উদ্দেশে রওনা দেন।
১৬১৯
প্রথমে গ্রেটার নয়ডার কাছে রাহুল, প্রিয়ঙ্কা-সহ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের কনভয় আটকে দেয় পুলিশ। তাঁরা সেখান থেকে হেঁটে নির্যাতিতার বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে ফের রাস্তা আটকানো হয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে রাস্তায় পড়ে যান রাহুল। যোগীর পুলিশের যুক্তি ছিল, কোভিডের কারণেই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে। তাই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কনভয় আটকানো হয়েছে।
১৭১৯
উত্তরপ্রদেশের পুলিশ যাতে আগাম সতর্ক হয়ে পথরোধ করতে না পারে, সে জন্য যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে শুক্রবার সকালে পৃথক চারটি গাড়িতে দিল্লি থেকে বুল গড়হী গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তৃণমূলের তিন বর্তমান এবং এক প্রাক্তন সাংসদ। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নির্যাতিতার পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারেননি ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল এবং মমতা ঠাকুর। ধাক্কাধাক্কিতে রাস্তায় পড়ে যান ডেরেক।
১৮১৯
ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবারেই দিল্লির যন্তর মন্তরে প্রচুর সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখান। মোমবাতি মিছিলও করেন তাঁরা।
১৯১৯
চাপের মুখে শুক্রবার রাতে হাথরসের পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং আরও দুই পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করে যোগীর প্রশাসন।