গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি সাংবাদিক বৈঠক। প্রথম এবং দ্বিতীয়টি দিল্লিতে। তৃতীয়টি বিহারে। তিনটিতেই হাজির নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন মন্ত্রী। সোমবার গান্ধীজয়ন্তীতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নয়াদিল্লিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধর্না কর্মসূচির দিনেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতাদের এই উদ্যোগ তুলে দিয়েছে এক ঝাঁক প্রশ্ন। কারণ, সাম্প্রতিক কালে কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল বা নেতার কর্মসূচিকে এতটা গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। যার জবাবে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, এই ঘটনাতেই তাঁদের নৈতিক জয় প্রমাণিত।
অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের ‘মিশন দিল্লি’ কর্মসূচি কেন ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘লোকদেখানো’ তা জানাতেই সোমবার বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেছিল বিজেপি। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ সাহায্য বন্ধ করার কারণ হিসাবে বাংলার সরকারের ‘দুর্নীতি’কেই দায়ী করেন বিজেপি নেতারা। সাংবাদিক বৈঠকে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও। সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেককে কার্যত বাংলার প্রশাসকের মর্যাদা দিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তো নামেই। পিছন থেকে তো সরকার চালান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই!’’
সোমবার দুপুরে বিহারের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ দ্বিতীয় সাংবাদিক বৈঠকটি করেন। ‘বাংলার প্রতি বঞ্চনার’ অভিযোগে অভিষেক তথা তৃণমূলের নিশানায় থাকা গিরিরাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করার সময় এসে গিয়েছে।’’ একশো দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়ছয় করেছে বলে অভিযোগ তুলে গিরিরাজ বলেন, ‘‘২৫ লক্ষ ভুয়ো ‘জব কার্ড’ তৈরি করানো হয়েছে। সেই টাকা চুরি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, গরীবের টাকা ফেরত দিন।’’
সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের অভিযোগ, ‘‘বাংলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের অন্তর্গত বক্ষরোপণ কর্মসূচির গাছ ‘হাতিতে খেয়ে নিয়েছে’ বলে অসত্য ব্যাখ্যা দিয়ে টাকা চুরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে তিনি টাকা পেয়েছেন। অন্য দিকে, প্রকৃত গরীব যাঁর আবাস যোজনার টাকা প্রাপ্য, বঞ্চিত হয়েছেন।’’ পাশাপাশি, নানা ‘তথ্য-পরিসংখ্যান’ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজের দাবি ‘‘ইউপিএ জমানার তুলনায় বর্তমান সরকার অনেক বেশি টাকা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে।’’
সোমবার বিকেলে তৃতীয় সাংবাদিক বৈঠকেও তৃণমূলকে ‘দুর্নীতি অস্ত্রে’ নিশানা করেন আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘সারদা-নারদা-রোজভ্যালির পরে মনরেগা (একশো দিনের কাজের প্রকল্প)-র নামেও টাকা লুট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। দোতলা-তিনতলা বাড়ির মালিক প্রধানমন্ত্রী যোজনার টাকা দেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে, তা হলেই ভাবুন তার মধ্যে কত টাকা লুট করেছে ওই রাজ্যের শাসকদল।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল অবশ্য বিজেপির এই ‘সক্রিয়তা’র নেপথ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক জয় দেখছেন। সোমবার দিল্লিতে তিনি বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের সাফল্য। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার দাবিতে দিল্লি কাঁপিয়ে দিচ্ছে, আর বিজেপি নেতাদের দিল্লি উড়ে আসতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের নিয়ে বাংলার দিল্লি অভিযান সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গভীর ছাপ ফেলেছে। বিজেপি কোণঠাসা হচ্ছে। তাই বাংলার অপদার্থ বিজেপি নেতাদের দিল্লি উড়িয়ে এনে ভুল, মিথ্যা বিবৃতি দেওয়াতে হচ্ছে।’’
দিল্লিতে তৃণমূলের দু’দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনেই তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক সম্পর্কে তৃণমূলের সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি ভয় পেয়েছে। অভিষেককে ডেকে পাঠানো (ইডির), ট্রেন না দেওয়া, বিমান বাতিল করা, রামলীলা ময়দানে অনুমতি না দেওয়া, গিরিরাজ সিংহের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দেওয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে তারা ভয় পেয়েছে। যাঁরা মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম রাজঘাটে গডসেকে পুজো করেন তাঁদের দিল্লি পুলিশ রাজঘাটে যে অকথ্য অত্যাচার করল, তা থেকে স্পষ্ট তাঁরা (বিজেপি নেতৃত্ব) আতঙ্কগ্রস্ত। এটা অবশ্যই আমাদের নৈতিক জয়।’’
অন্য দিকে, তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক অভিষেককে ‘বাড়তি রাজনৈতিক গুরুত্ব’ দেওয়ার নজির কি না জানতে চাওয়া হবে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলার বুকে তারা (তৃণমূল) বললে এতটা কিছু হত না। কিন্তু তারা দিল্লি এসে মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। ভুল তথ্য দিচ্ছে। গিরিরাজ সিংহ, অনুরাগ সিংহের মতো মন্ত্রীরা তাই সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন।’’ সেই সঙ্গে অভিষেককে বাড়তি রাজনৈতিক গুরুত্ব দেওয়ার জল্পনা উড়িয়ে লকেটের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কীসের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? আমার মনে হয় সত্যিটা মানুষের সামনে তুলে ধরাই বড় কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy