Advertisement
E-Paper

ধসের এক মাস পরেও বদলায়নি হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের হাল

গভীর ফাটল ধরা কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে এখনও বিপদ মাথায় যাতায়াত করছেন এলাকার বাসিন্দারা। এই তীব্র গরমে সরকারি ব্যবস্থাপনার কন্টেনারের ঘরে থাকতে না-পেরে বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়া বাড়িতেই ফের সংসার পেতেছেন বাসিন্দারা।

ভূমি ধসের ঘটনার পরে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলার কাজ।

ভূমি ধসের ঘটনার পরে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলার কাজ। —ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩২
Share
Save

ভূমি ধসের ঘটনার পরে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলার কাজ। কিন্তু এত দিনেও বদলায়নি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির ছবি। গভীর ফাটল ধরা কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে এখনও বিপদ মাথায় যাতায়াত করছেন এলাকার বাসিন্দারা। এই তীব্র গরমে সরকারি ব্যবস্থাপনার কন্টেনারের ঘরে থাকতে না-পেরে বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়া বাড়িতেই ফের সংসার পেতেছেন বাসিন্দারা। অন্য দিকে, গত এক সপ্তাহ ধরে ত্রাণসামগ্রী আসা বন্ধ থাকায় বিপাকে
পড়েছেন তাঁরা। আবার আয়ের উৎস ভাগাড় বন্ধ থাকায় রোজগার কমে গিয়েছে অনেকেরই। এক বেলা খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের নতুন করে পার্শ্ববর্তী লিলুয়া, বি রোড, সি রোড, কলাবাগান এলাকা নর্দমার উপচে পড়া জলে প্লাবিত হয়েছে। পুরসভা জানিয়েছে, ওই এলাকায় সিড পাইলিং করে যে নর্দমা তৈরি করা হচ্ছে, মাঝপথে কোনও জায়গায় বাধা (অবস্ট্রাকশন) পড়ায় তা আটকে গিয়েছে। তাই এলাকা ফের জলে ডুবেছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২০ মার্চ বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার জেরে এলাকার রাস্তাঘাট যে ভাবে ফেটে গিয়ে উঁচুতে উঠে যায়, তাতে মনে হবে, বোধহয় বড়সড় ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে। ওই ভূমি ধসের জেরে ঝিল রোডের পাঁচটি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া, সরকারি হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ৭০টি বাড়ি। ওই ঘটনার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং কেএমডিএ-র পদস্থ অফিসার ও হাওড়া পুরসভার কর্তারা দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু সে সবের পরেও বুধবার ওই ভাগাড়ে গিয়ে দেখা গেল, এক মাস আগের চিত্র কিছুমাত্র পাল্টায়নি। ভাঙা ঘরের মেঝেতে বসেই পড়াশোনা করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা মিনা পাসোয়ানের ছেলেকে। এখনও ত্রিপলের নীচে আশ্রয়ে রয়েছেন সমীর পাসোয়ান, রাখি পাসোয়ানেরা।

এ দিন মিনা পাসোয়ান বলেন, ‘‘এই গরমে আমাদের কন্টেনারে থাকতে বলেছিল প্রশাসন। আমরা থাকিনি। কোনও মানুষের পক্ষেই থাকা সম্ভব নয়। ধস নামার পর থেকে আজ পর্যন্ত
নেতা-মন্ত্রীরা অনেকেই এসে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা একই অবস্থায় পড়ে রয়েছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ১১৩টি পরিবার এখনও এলাকার একটি স্কুল ও ক্লাবে রাত্রিবাস করছে। এলাকা থেকে ধসের আতঙ্ক আজও যায়নি। আংশিক ভেঙে পড়া বাড়িগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ আর নেই। ঘটনার পরে কিছু দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে খাবারদাবার, জামাকাপড় ও পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছিল এলাকায়। কিন্তু এখন সেই সব সাহায্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা শুকদেব রজক বললেন, ‘‘ভাগাড় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। আমাদের পেশা ছিল, আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক, লোহা, তামা বা অন্যান্য জিনিস খুঁজে বার করে বিক্রি করা। ফলে, আমরা অনেকেই এখন কার্যত এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’’

এ দিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার এক মাস পরেও মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি। হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরেই এলাকার উন্নয়নের কাজে হাত দেওয়া হবে। আমরা ঠিক করেছি, ভাগাড় সংলগ্ন এলাকাতেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ছোট আকারের কটেজ তৈরি করে দেব।’’ এ দিন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী জানান, বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিকল্প ভাগাড় তৈরির জন্য জমির সন্ধান মিলেছে। রাজ্য সরকার ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে জয়পুরের বাইগাছি মৌজায় একটি ১৬ একর জায়গা দিয়েছে। সেখানেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট তৈরি করে পুরসভার আবর্জনা ফেলা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Slum garbage dump Howrah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}