রঙের ব্যবসায়ী চম্পক তখন বেশ সফল। তাঁর ১৮ বছরের পুরনো রঙের কোম্পানি ‘এশিয়ান পেইন্টস’ বছরে ২৩ কোটি টাকার আয় দেয়। প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেডেও উত্তরণ হয়েছে সংস্থার। কিন্তু চম্পক সেখানে থেমে থাকতে চাননি। তিনি চাইছিলেন ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে উঠুক। কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নেরই জবাব ছিল— সুপার কম্পিউটার।
একঝলকে এই অঙ্ক জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে জলবৎ তরলং। অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর সোজা সাপ্টা হিসেব। সাধারণ সংসারে মা-কাকিমারা যা আকছার করে থাকেন। প্রয়োজনীয় জিনিসে খরচ বাড়িয়ে অদরকারি খরচ বাদ দেওয়া। চম্পকও তা-ই করেছিলেন। যার ফল তাঁর মৃত্যুর ২২ বছর পরেও প্রতি মুহূর্তে হাতে পাচ্ছে ‘এশিয়ান পেন্টস’।
সাধারণত সংস্থার উৎপাদনজাত পণ্য ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের কাছে মজুত করা থাকে। গ্রাহক কী ধরনের জিনিস চান তা ডিলার জানালে, প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে যায় ডিলারের হাতে। চম্পক দেখেন, এই প্রক্রিয়ায় রঙের দামের ২০ শতাংশ দিতে হয় ডিস্ট্রিবিউটারদের। হোল সেলারদের কাছে যায় আরও ১০ শতাংশ। এরপর ডিলারদের ভাগ দিয়ে সংস্থার হাতে আসে রঙের দামের ৬০ শতাংশ। ফলে কম লাভ। চম্পক গোটা প্রক্রিয়াটাই বদলে দেন।
তিনি ঠিক করেন ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের তিনি মাঝে রাখবেন না। তাঁর সংস্থা সরাসরি যোগাযোগ রাখবে ডিলারদের সঙ্গে। ডিলারদের রঙ মজুত রাখার জায়গা বা ক্ষমতা নেই। চম্পক জানিয়ে দেন মজুত করার দরকারও নেই। যে সময়ে যে ডিলারের কাছে যে রঙ পৌঁছনো দরকার তা সময়মতো পৌঁছে দেবে তার সংস্থাই। এমনকি রং বিক্রি না হলে তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করবে। চম্পক জানান, প্রতি তিনঘণ্টা অন্তর দিনে চার বার সংস্থার গাড়ি যাবে ডিলারের কাছে। তারাই এই কাজ করবে।
তথ্য বলছে, চম্পক যখন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তখন এশিয়ান পেন্টসের ৪০ হাজার ডিলার। তাঁদের কাছে দিনে চার বার পৌঁছনো মানে দিনে ১ লক্ষ ৬০ হাজার বার গাড়ি পৌঁছবে ডিলারের কাছে। চম্পক এই হিসেব করেননি তা নয়, তবে পিছিয়ে আসেননি। কারণ তিনি জানতেন বিষয়টি অসম্ভব নয়। কেন না তাঁর কাছে তথ্য আছে। আর আছে সুপার কম্পিউটার।
৫০ বছর ধরে গ্রাহকদের পছন্দ অপছন্দের হিসেব গুলে খেয়েছে সুপার কম্পিউটার। কোন রঙের বিক্রি সর্বাধিক, কোন রং কত পরিমাণে বিক্রি হয়, কোন রঙের কোন আকারের টিনের সবচেয়ে বেশি চাহিদা এই সব তথ্য রয়েছে চম্পকের সুপার কম্পিউটারের কাছে। ফলে ভুলের কোনও জায়গা নেই। জায়গা নেই অনিশ্চয়তার। এমনকি অকারণ রং মজুত করারও। ডিস্ট্রিবিউটার এবং হোল সেলারদের তাই অনায়াসেই পাশ কাটাতে পেরেছে এশিয়ান পেন্টস। রঙের দামের ৩ শতাংশ ডিলারদের দিয়ে বাকি ৯৭ শতাংশই ঘরে তোলে এই সংস্থা। সৌজন্যে সুপার কম্পিউটার।
এশিয়ান পেন্টসই ভারতে এক মাত্র সংস্থা যারা উৎপাদিত পণ্যের ৯৭ শতাংশ মূল্যই নিজেরা পায়। বাকি সমস্ত সংস্থা যাদের মজুতকরণের উপর নির্ভর করতে হয়, তাদের হাতে আসে মোট পণ্য মূল্যের ৬০ শতাংশ। এমনকি ভারতে রঙ প্রস্তুতকারী প্রথমসারির বাকি দুই সংস্থাও এ ব্যাপারে এশিয়ান পেন্টসের ধারে কাছে নেই। আর তার একমাত্র চম্পকের ভাবনা এবং তাঁর সুপার কম্পিউটার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy