শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার ন্যায়বিচার দফতর ও শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিউ ইয়র্কের আদালতে ঘুষ দিয়ে বরাত আদায়ের অভিযোগ দায়ের করলেও এত দিন নরেন্দ্র মোদী সরকার বলে এসেছে, এটি ‘বেসরকারি সংস্থা, কয়েকজন ব্যক্তি ও আমেরিকার ন্যায়বিচার দফতর’-এর মধ্যে আইনি বিষয়। বিদেশ মন্ত্রক দাবি করেছিল, আমেরিকা এ বিষয়ে ভারতকে কিছু জানায়নি।
এ বার আমেরিকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি (সিকিয়োরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) নিউ ইয়র্কের আদালতে জানাল, তারা এ বিষয়ে ভারত সরকারের সাহায্য চেয়েছে। যে হেতু ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে বরাত আদায়ে অভিযুক্ত শিল্পপতি গৌতম আদানি, তাঁর ভাইপো সাগর আদানি ভারতে থাকেন, তাই তাঁকে অভিযোগের নোটিস পাঠানোর জন্য ভারতের আইন মন্ত্রকের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি এসইসি আদালতে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছে।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, এ বার মোদী সরকার প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আদানিকে নিয়ে কী করবে? কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগকে ব্যক্তিগত বিষয় বলেছিলেন। এখন কি তিনি এসইসি-কে সাহায্য করে বাধিত করবেন?”
আমেরিকার সিকিয়োরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর আগে আদানিদের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল। আমেরিকার ন্যায়বিচার দফতরও গৌতম আদানি, সাগর আদানি ও অন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের চার্জশিট দায়ের করেছে। অভিযোগ ছিল, আদানিরা ২৬৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০৩০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাজারের থেকে বেশি দামে সৌর বিদ্যুৎ বেচার বরাত আদায় করেছিলেন। এর থেকে ২০ বছর ধরে ২০০ কোটি ডলার মুনাফার পরিকল্পনা ছিল। ঘুষ দিয়ে বরাত আদায়ের তথ্য গোপন রেখে, এই প্রকল্পের জন্য আদানিরা ঋণ, ঋণপত্রের মাধ্যমে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ঘরে তুলেছিলেন।
এসইসি এ বার নিউ ইয়র্কের আদালতে জানিয়েছে, ভারতকে ‘হেগ সার্ভিস কনভেনশন’ অনুযায়ী সাহায্যের অনুরোধ করা হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, কোনও আইনি সংস্থাকে অন্য দেশের নাগরিককে আইনি নোটিস পাঠাতে হলে সে দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে পাঠাতে হয়। ভারত, আমেরিকা-সহ ৯০টি দেশ এই চুক্তি মেনে চলে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)