ওয়াকফ (সংশোধিত) আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ওই আবেদনগুলির দ্রুত শুনানি হওয়া প্রয়োজন কি না, তা বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ। এ বার মামলাগুলি নিয়ে একতরফা কোনও রায় দেওয়ার আগে তাদের অবহিত করানোর আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করল কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৫ এপ্রিল ওয়াকফ (সংশোধিত) বিল, ২০২৫ এবং মুসলমান ওয়াকফ (প্রত্যাহার) বিল, ২০২৫-এ সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তার পরেই বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে এই আইন কার্যকর করা হয়েছে।
আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওয়াকফ (সংশোধিত) আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাগুলি আগামী ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য উঠতে পারে। যদিও পিটিআই জানিয়েছে, সু্প্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তার কোনও উল্লেখ নেই। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ওয়াকফ (সংশোধিত) আইনকে চ্যালেঞ্জ করে যে মামলাগুলি হয়েছে, তা নিয়ে রায়দানের আগে তাদের বক্তব্য শোনা হোক।
গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় পাশ হয় ওয়াকফ (সংশোধিত) বিল। পক্ষে ভোট পড়েছিল ২৮৮টি। বিপক্ষে পড়েছিল ২৩২টি ভোট। প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে বিতর্ক চলার পরে গত শুক্রবার রাজ্যসভায়ও পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ (সংশোধিত) বিল। সেখানে পক্ষে ভোট পড়েছিল ১২৮। বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়েছিল। বিল পাশ হওয়ার পরে বিরোধীরা একে ‘মুসলিম-বিরোধী’ বলে অভিযোগ করেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সংখ্যালঘুদের স্বার্থেই ‘ঐতিহাসিক সংস্কার’ হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষে মুসলমান ওয়াকফ (প্রত্যাহার) বিলও পাশ হয়ে যায়। তার ফলে ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন প্রত্যাহৃত হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন কার্যকরও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
এ দিকে ওয়াকফ বিল, যা এখন আইনে পরিণত হয়েছে, তার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ মহম্মদ জাভেদ, এআইএমআইএম সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি চ্যালেঞ্জ করে পিটিশন দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পিটিশন দায়ের করেছে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড’, ‘জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ’ও। ১০টি আবেদন জমা পড়েছে শীর্ষ আদালতে। বিহারের কিষাণগঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ জাভেদ পিটিশনে দাবি করেছিলেন, এই আইনের কারণে মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ওয়াকফ সম্পত্তির উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। ওয়েইসি দাবি করেছিলেন, এই বিল (যা এখন আইনে পরিণত হয়েছে) বৈষম্যমূলক। সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ নম্বর ধারাকে খর্ব করে।
‘জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ’-এর হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খন্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। আদালতকে তিনি জানান, ওয়াকফ সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং সেগুলির দ্রুত শুনানি হওয়া প্রয়োজন। সিব্বলের পাশাপাশি অপর দুই আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং নিজাম পাশাও দ্রুত শুনানির আবেদন জানান প্রধান বিচারপতির এজলাসে। তার পরেই ওই আবেদনগুলির দ্রুত শুনানি হওয়া প্রয়োজন কি না, তা বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। পরের দিন, মঙ্গলবার সু্প্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করল কেন্দ্রীয় সরকার।