গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মঙ্গলবার সকালে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স)-র সঙ্গে তুলনা করলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে। তুললেন ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রসঙ্গও। তিনটি ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করলেন তিনি। বিকেলে সেই ‘ইন্ডিয়া’র বৃহত্তম দল কংগ্রেসের রাজ্যসভা এবং লোকসভার নেতাকে সুষ্ঠু ভাবে সংসদে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে চিঠি পাঠালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিনভরের এই ঘটনা পরম্পরা জাতীয় রাজনীতিতে তুলে দিল নতুন প্রশ্ন— তবে কি মণিপুর পরিস্থিতি আর ‘ইন্ডিয়া’-র চাপে একটু হলেও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে বিজেপি? এরই মধ্যে মঙ্গলবার জানা গিয়েছে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য বুধবার নোটিস দেবে ‘ইন্ডিয়া’।
মণিপুরে গত পৌনে তিন মাসের হিংসাপর্ব এবং দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) এবং গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবারও লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন বিরোধী সাংসদেরা। আর জবাবে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান-সহ কয়েকটি বিরোধী শাসিত রাজ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে বিজেপি সাংসদেরা স্লোগান দিয়েছেন। সংঘাতের এই আবহে কার্যত টানা পাঁচ দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে সংসদে। এই পরিস্থিতিতে শাহের মঙ্গলবারের চিঠিকে ‘চাপের মুখে সমঝোতার বার্তা’ বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী আগামী ৩১ জুলাই থেকে এনডিএ সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেছিলেন, ‘‘মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে সরকারের কোনও আপত্তি নেই।’’ যদিও সেই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদী অংশ নেবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। কোন ধারায় সেই আলোচনা হবে, সে বিষয়েও সুস্পষ্ট ভাবে কিছু জানাননি তিনি। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিবৃতির দাবিতে অনড় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সোমবার শাহের প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি। ২৬৭ ধারায় লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সব কর্মসূচি বন্ধ রেখে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ‘ঘটনা’-সহ মণিপুরের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবিতে শুক্রবার নোটিস দিয়েছিল কংগ্রেস-সহ কয়েকটি বিরোধী দল। কিন্তু তাতে এখনও রাজি হয়নি মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ২৬৭ ধারার পরিবর্তে ১৭৬ ধারায় আলোচনা চেয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা তাদের দাবিতে অনড়।
গত বৃহস্পতিবার বাদল অধিবেশনের সূচনার আগে সংসদ ভবন চত্বরে প্রথম বার মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মোদী। মণিপুরের মহিলাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদের পাশাপাশি বাংলা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যে মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি। এর পর শুক্রবার থেকেই লকেট চট্টোপাধ্যায়, স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুরেরা ধারাবাহিক ভাবে মণিপুরের হিংসা, নারী নির্যাতনের জবাবে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে নিশানা করেছেন। একে বিরোধীদের চাপের মুখে বিজেপির প্রতিআক্রমণ বলেই মনে কার হচ্ছিল। কিন্তু দিনের শেষে শাহের চিঠি ‘অন্য বার্তা’ দিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই।
মোদীর মুজাহিদিন মন্তব্য
সোমবার সকালে সংসদ ভবনে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদী নিষিদ্ধ দুই কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র তুলনা টানেন। সেই সঙ্গে তোলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র প্রসঙ্গও। তিনটি ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তিনি। বৈঠক শেষের পরে মোদীর ওই মন্তব্য সংবাদমাধ্যমকে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এবং বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তার পরেই জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয় নয়া বিতর্ক।
মণিপুরে শান্তি ফেরানোর বার্তা রাহুলের
‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জবাব কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার দুপুরে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘শ্রীযুক্ত মোদী, আপনি যে নামেই আমাদের ডাকুন, আমরা ‘ইন্ডিয়া’। আমরা মণিপুরের ক্ষত প্রশমন করতে, প্রত্যেক মহিলা এবং শিশুর চোখের জল মোছাতে সহায়তা করব। আমরা মানুষের মধ্যে শান্তি এবং ভালবাসা ফিরিয়ে আনব। আমরা মণিপুরে ভারতীয়ত্বের চেতনা পুনর্নির্মাণ করব।’’মোদীর মন্তব্যের জেরে মঙ্গলবার সংসদে প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদেরা। সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য তাঁর ‘আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ’। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘পটনা এবং বেঙ্গালুরুতে আমাদের সফল বৈঠক দেখে প্রধানমন্ত্রী চাপে পড়ে গিয়েছেন। তাই এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, ‘‘সংসদের অধিবেশন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর যা বলার, তা তিনি তো অধিবেশনে এসেই বলতে পারেন। আমরা চার দিন ধরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু তিনি অধিবেশনে এসে মুখ খুলছেন না।’’
মোদীর পছন্দ ‘ইন্ডিয়া’, মমতার খোঁচা
মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোদীর মুজাহিদিন-মন্তব্য সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। মনে হয় ‘ইন্ডিয়া’ নামটা ওঁর পছন্দ হয়েছে। গ্রহণ করেছেন।’’ মোদীর শ্লেষ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও প্রতিআক্রমণ করেননি তৃণমূল নেত্রী। বরং প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের ‘সম্ভাব্য কারণ’ জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘তোমরা প্রশ্ন করেছ, কিছু তো বলতে হবে।’’ তবে সেই সঙ্গেই মোদীর মন্তব্যের জবাব দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘জনসাধারণ (পাবলিক) ‘ইন্ডিয়া’ নামটি গ্রহণ করেছে। ইন্ডিয়া টিম যখন খেলতে নামে তখন ‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে কেউ মুজাহিদিন বলে? যত বলবে, বুঝতে হবে পছন্দ হয়েছে।’’ অন্য দিকে, লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।’’
শাহের চিঠি খড়্গে, অধীরকেমঙ্গলবার রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং লোকসভার বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে চিঠি পাঠিয়ে সংসদ চালাতে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। টুইটারে সে কথা জানিয়ে শাহ লিখেছেন, ‘‘আমি আজ সংসদের উভয় কক্ষের বিরোধী নেতা শ্রী অধীরজি এবং শ্রী খড়্গেজিকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সব পক্ষের সাহায্য চায়। আমার আশা, এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের জন্য সব পক্ষ আমাদের সহযোগিতা করবে।’’তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শাহ তাঁর চিঠিতে অধীরকে ‘বিরোধী নেতা’ বলে সম্বোধন করলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে ‘বিরোধী নেতা’র মর্যাদা দেয়নি। এ ক্ষেত্রে বার বারই সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ‘‘বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের কাছে লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ পাওয়ায় জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ সাংসদ নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে শাহের সম্বোধন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। পাশাপাশি, মোদীর মন্তব্য শাহের চিঠির মধ্যে যোগসূত্রও রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে সনিয়া-মমতা-ইয়েচুরি-নীতীশদের ‘ইন্ডিয়া’ যে বিজেপিকে চাপে ফেলেছে, জোড়া ঘটনায় তা পরিষ্কার।
শাহের চিঠি খড়্গে, অধীরকে
মঙ্গলবার রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং লোকসভার বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে চিঠি পাঠিয়ে সংসদ চালাতে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। টুইটারে সে কথা জানিয়ে শাহ লিখেছেন, ‘‘আমি আজ সংসদের উভয় কক্ষের বিরোধী নেতা শ্রী অধীরজি এবং শ্রী খড়্গেজিকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সব পক্ষের সাহায্য চায়। আমার আশা, এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের জন্য সব পক্ষ আমাদের সহযোগিতা করবে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শাহ তাঁর চিঠিতে অধীরকে ‘বিরোধী নেতা’ বলে সম্বোধন করলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে ‘বিরোধী নেতা’র মর্যাদা দেয়নি। এ ক্ষেত্রে বার বারই সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ‘‘বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের কাছে লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ পাওয়ায় জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ সাংসদ নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে শাহের সম্বোধন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। পাশাপাশি, মোদীর মন্তব্য শাহের চিঠির মধ্যে যোগসূত্রও রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে সনিয়া-মমতা-ইয়েচুরি-নীতীশদের ‘ইন্ডিয়া’ যে বিজেপিকে চাপে ফেলেছে, জোড়া ঘটনায় তা পরিষ্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy