Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শ্রীমুথুভেল করুণানিধি (১৯২৪-২০১৮)

১৯৬৯ থেকে ২০১১। করুণা পাঁচ বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু টানা ক্ষমতা ভোগ করেননি।  চোদ্দো বছর বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি।

শ্রীমুথুভেল করুণানিধি (১৯২৪-২০১৮)

শ্রীমুথুভেল করুণানিধি (১৯২৪-২০১৮)

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৫
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের কথা। ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে। তামিলনাড়ুর সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তামিল ছবির নমস্যদের নাম পড়ছেন। ‘কালাইনার’ করুণানিধির নাম নেই।

ডিএমকে এ নিয়ে রাগ কম করেনি। তামিল রাজনীতির লোকজন শুধু বলেছিলেন, করুণানিধি মুখ্যমন্ত্রী থাকলে জয়ার নামটা বাদ পড়ত!

১৯৭২ থেকে তামিল রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক এই বৈরিতা, যা করুণা বনাম এমজিআর থেকে করুণা বনাম জয়ায় প্রবাহিত। অথচ জয়ললিতার ‘গুরু’, এডিএমকে-র প্রতিষ্ঠাতা এম জি রামচন্দ্রন কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত করুণানিধির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বন্ধু ছিলেন। চল্লিশের দশক থেকে দু’জনের সম্পর্ক। এমজিআর নায়ক আর করুণা চিত্রনাট্যকার। করুণার চোখা সংলাপ পর্দায় বহু বার জীবন্ত করে তুলেছেন এমজিআর— ‘রাজাকুমারী’,‘অভিমন্যু’, ‘মরুধানাত্তু ইলাবরসি’, ‘মন্ত্রিকুমারী’...। শিবাজি গণেশনের প্রথম ছবিও করুণার লেখা, ‘পরাশক্তি’। তামিল ছবিকে দ্রাবিড় অস্মিতা ও রাজনীতির মুখপাত্র করে তোলার কাজটা যাঁরা সুচারু ভাবে করেছিলেন, করুণা তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে। ব্রাহ্মণ্যবাদ আর অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা তার প্রধান উপজীব্য।

দেখুন ভিডিয়ো

১৯৬৯ সালে আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পরে করুণা প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হলেন। এমজিআর দলের কোষাধ্যক্ষ। তাঁর মনে হতে লাগল, বড় ছেলে মুথুকে সামনে আনতে গিয়ে করুণা তাঁকে কোণঠাসা করছেন। এই শুরু বিরোধের। প্রকাশ্যে করুণার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন এমজিআর। করুণা তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন। জবাবে এডিএমকে তৈরি করে আন্নার নামটা নিজের দলের সঙ্গে জুড়ে নিলেন এমজিআর।

আরও পড়ুন: থামলেন দ্রাবিড় রাজনীতির শিল্পী কলাইনার, অন্ত্যেষ্টির জমিতে জট

১৯৬৯ থেকে ২০১১। করুণা পাঁচ বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু টানা ক্ষমতা ভোগ করেননি। চোদ্দো বছর বয়সে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ওই প্রজন্মের অনেকের মতোই তিনিও পেরিয়ারের দ্রাবিড় আত্মসম্মান আন্দোলনের সন্তান। নাগপট্টিনমের গরিব ঘরের ছেলেটি লিখেছেন—পেরিয়ারের যুক্তি, আলাগিরিস্বামীর সাহস আর আন্নার ভাষা— তখনকার বক্তৃতায় এই তিনটে জিনিস তাঁকে টানত সবচেয়ে বেশি। তিরিশের দশকের শেষ থেকে করুণা হিন্দি-বিরোধী আন্দোলনে জড়ালেন। দ্রাবিড় আন্দোলনের প্রথম ছাত্র সংগঠন তাঁর তৈরি। তাঁর উৎসাহে ছাত্রদের জন্য যে কাগজ বার করা হয়, তা-ই পরে ডিএমকে-র দলীয় মুখপত্র ‘মুরাসলি’।

হাহাকার: প্রিয় নেতা করুণানিধির মৃত্যুতে শোক। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের হাসপাতালের সামনে। পিটিআই

ময়দানি রাজনীতিতে করুণার বড় মাপের পরিচিতি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কাল্লাকুডি শহরের নাম বদলে ডালমিয়াপুরম করার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে বড় ভূমিকা নিয়ে গ্রেফতার হলেন। চার বছর পরেই ভোটে জিতে বিধায়ক। রাজনীতিই এ বার জীবনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিল। কিন্তু কলম থামেনি। সিনেমার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, স্মৃতিকথা সবই লিখেছেন কয়েক বছর আগে পর্যন্ত। ২০১১ সালে বি‌শ্ব তামিল কনফারেন্সে করুণার লেখা গানেই সুর দিলেন এ আর রহমান।

সমবেদনা: করুণা-পুত্র স্ট্যালিন এবং কন্যা কানিমোঝির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে করুণানিধির বাসভবনে। —নিজস্ব চিত্র।

করুণার ডিএমকে ছিল একমাত্র দল যারা শাসক হয়েও জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে বরখাস্ত হয়। ১৯৭৭-এর ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন এমজিআর। তার পর থেকে এএডিএমকে-র সঙ্গে করুণার লড়াই অবিরত। জয়া চলে গিয়েছেন, করুণাও গেলেন। মেরিনা সৈকতে আন্নার অন্ত্যেষ্টিস্থলের পাশে তাঁর জায়গা মিলবে কি, সেই প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে সাগরের হাওয়ায়।

দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE