প্রতীকী ছবি।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আলাদা শৌচালয় নেই দেশের কোনও বিমানবন্দরেই। আকাশপথে নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা ওই মানুষগুলোর জন্য প্রতিটি বিমানবন্দরে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় তৈরির কথা ভাবতে শুরু করেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
দিল্লি থেকে ফোনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অরবিন্দ সিংহ বললেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট প্রস্তাব এসেছে। ঠিক কবে আমরা দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় তৈরি করে দিতে পারব, জানি না। তবে, প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।” দেশের মধ্যে যে ক’টি বেসরকারি বিমানবন্দর রয়েছে, সেই দিল্লি, মুম্বই ও হায়দরাবাদও জানিয়েছে, তাদের বিমানবন্দরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আলাদা শৌচালয় নেই।
শুধু ভারত কেন, বিশ্বের বিভিন্ন তাবড় দেশের চিত্রও প্রায় এক রকম। ইউরোপের কোথাও বিমানবন্দরে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আলাদা শৌচালয় নেই। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশের শপিং মলে এবং সাধারণের ব্যবহারের জন্য তৈরি শৌচালয়ে আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, ইউরোপের অন্যত্র তা-ও নেই।
বিদেশে নিয়মিত ঘুরে বেড়ান চিকিৎসক শুভজিৎ দত্তরায়। ম্যাঞ্চেস্টারের প্রবাসী এই বাঙালি বললেন, “আমি যতটা ঘুরে দেখেছি, সিয়াটেল, কেপটাউন, সান ফ্রান্সিসকো এবং সান দিয়েগো বিমানবন্দরে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় রয়েছে। সেখানে পুরুষ বা মহিলাদের জন্য আলাদা শৌচালয় নেই। পর পর ছোট ছোট শৌচালয়। সেখানে যে কেউ যেতে পারেন। এমনকি, প্রতিবন্ধীরাও। আমার-আপনার বাড়িতে যেমন শৌচালয় থাকে, তেমন।”
সমাজকর্মী অচিন্ত্য নিজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। শরীরে পুরুষ হলেও মনে মনে নারী। তাঁর কথায়, “মাঝেমধ্যেই বিমানে এখানে-সেখানে যেতে হয়। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগেই শৌচালয়ে ঘুরে আসি। জানি, বিমানবন্দরে সমস্যা হবে। একেবারে বিমানে ওঠার পরে প্রয়োজনে আবার শৌচালয় ব্যবহার করি।”
অসুবিধা হয় কেন?
অচিন্ত্যের কথায়, “আমি নিজে স্বচ্ছন্দ বোধ করি মহিলাদের শৌচালয়ে যেতে। আমার পোশাকও তো মহিলাদেরই। কিন্তু, সেখানে অন্য মহিলাদের আমাকে নিয়ে অস্বস্তি হতে পারে। আবার শরীরের দিক থেকে আমি যে হেতু পুরুষ, তাই পুরুষদের শৌচালয়ে যেতে পারি। কিন্তু, নারীর পোশাকে সেখানে গিয়ে আমি নিজে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে পারব না। আমি তো মনে মনে নারীই।”
কলকাতার বাসিন্দা এবং রূপান্তরকামী আন্দোলনের মুখ অপর্ণার কথায়, “তা-ও তো দেশের বিমানবন্দরগুলির শৌচালয়ে আলাদা আলাদা ইউনিট আছে। খুব বাধ্য হলে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অন্যত্র খুব অসুবিধা হয়। আমাদের কথা ভেবে বিমানবন্দরে যদি সত্যিই আলাদা শৌচালয় তৈরির পরিকল্পনা হয়, তা হলে পুরুষ ও নারী রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচালয় করা হোক।”
কলকাতা বিমানবন্দরে ডিপারচার এবং অ্যারাইভাল মিলিয়ে এখন ২৫টি শৌচালয় রয়েছে। বিমানে ওঠার মুখে বোর্ডিং গেটের কাছে শৌচালয়গুলি পরিসরে ছোট ছিল। এখন সেই পরিসর ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “টার্মিনালে নতুন করে শৌচালয় তৈরি করা মুশকিল। তবে যতটা জায়গা রয়েছে, তার মধ্যেই পরিকল্পনা করে কিছু একটা করা দরকার। আমার কাছেও মৌখিক ভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কথা মাথায় রেখে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় তৈরির প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy