আনন্দ মিশ্র। — নিজস্ব চিত্র।
যাঁর কথায় ভরসা রেখে আইপিএসের মতো সম্মানের চাকরি, লোভনীয় কেরিয়ার ফেলে রেখে রাজনীতি করার পথ বেছে নিয়েছিলেন অসমে ‘দাবাং’, ‘সিংঘম’ তকমাপ্রাপ্ত এসপি আনন্দ মিশ্র, সেই হিমন্তবিশ্ব শর্মাই কি না জনসভায় এসে তাঁর মু্ণ্ডপাত করছেন! বিহারের বক্সার কেন্দ্র নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়তে নামা আরএসএস-অনুরাগী আনন্দ তাই এ বার অভিমানে মুখ খুললেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে।
অসমে থাকতে গিটার বাজিয়ে গান, মার্শাল আর্ট, মোটরবাইক চালানোর ভাইরাল ভিডিয়ো, পেপ টক্, ভক্তদের সঙ্গে নিজস্বী এই সব নিয়ে সর্বদাই খবরে থাকতেন আনন্দ। কিন্তু অতিরিক্ত জনপ্রিয়তাই কাল হল। সরকারের নজরে পড়ে শাস্তিমূলক বদলি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই কিছুই বাদ যায়নি। শেষ পর্যন্ত লখিমপুরের এসপি থাকাকালীনই ‘স্বাধীন ভাবে মানুষের জন্য কাজ করা’র কথা বলে পদত্যাগ করেন আনন্দ। ফিরে আসেন নিজের রাজ্য বিহার, নিজের ঘর বক্সারে। কিন্তু আনন্দ ও হিমন্তের চাপানউতোরে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই অসম ছেড়েছিলেন ‘উত্তরপাড়ার ছেলে’ আনন্দ।
পশ্চিমবঙ্গে জন্মানো, বড় হওয়া, লেখাপড়া করা আনন্দ ২০০৫ থেকে ২০১১ সালে আইপিএস হওয়ার আগে পর্যন্ত বঙ্গে ডব্লুবিসিএস অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।
১৮ মে বক্সারে প্রচারে এসে আনন্দকে ‘আরজেডির এজেন্ট’, ‘লালুর লোক’ ইত্যাদি বলে দাগিয়ে দেন হিমন্ত। প্রশ্ন তোলেন আনন্দের পয়সার উৎস নিয়েও।
আনন্দ বলেন, “এমন অভিযোগের পরে মুখ খুলতেই হবে। এটা সত্যি যে আমি নিজে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি আরএসএস করেছি। মনেপ্রাণে সঙ্ঘী, দেশপ্রেমী, জাতীয়তাবাদী। অসমে হিমন্ত আশ্বাস দিলে চাকরি ছাড়ার পরে অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। টিকিট দেওয়া তো দূরের কথা, দলেও যোগ দেওয়ানো হয়নি আমায়। পরে দলনেতারা যখন দেখলেন যে আমি নিজের দমেই জনপ্রিয় হচ্ছি, শেষ মুহূর্তে ডাকা হল। কিন্তু তখন একলাই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।” তাঁর কথায়, “মানুষের ন্যূনতম আত্মসম্মান তো থাকবে। বিজেপি বড় দল। কিন্তু তারা মানুষকে সম্মান করতে শিখুক।”
হিমন্ত অবশ্য বলছেন, “ভোটের টিকিট চেয়ে নয়, বিজেপির সেবা করবেন বলে বিহার আসেন তিনি। এখানে এসে দেখা গেল, দল বা মোদীজির কথা নয়, তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছেন আর বলছেন “আমায় ভোট দেবেন।” হিমন্তের অভিযোগ, “আনন্দ বিহারে এসে এখন লালু যাদবের কথায় চলছেন, তাই বিজেপির ভোট কাটতে নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তিনি মিথ্যে বলছেন জানলে স্বেচ্ছাবসরের অনুমতি দিতামই না। সদিচ্ছা থাকলে অপেক্ষা করতেন তিনি। কিন্তু সেই ধৈর্য্য ছিল না আনন্দের। তাঁকে লড়ার টাকা কে জোগান দিচ্ছে, জানতে ফোন ট্যাপ করা দরকার।”
আনন্দ জবাবে বলেন, “আমার কল রেকর্ড চাইলে আমিই হাসতে হাসতে দিতে তৈরি। কে আমায় টাকা দেয়, তা নিয়েও তদন্ত হোক। তবে, সত্যিটা যেন জনসমক্ষে আনার সাহস থাকে। এখন হিমন্ত আমায় আবার অসমে ফেরাতে চাইলেও আমি আর ফিরতে চাই না। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছি। এখানকার মানুষের আমাকে দরকার।”
জঙ্গি দমন, মাদক দমন, দুষ্কৃতীদমনের চেনা সিলেবাসের বাইরে প্রথম বার খেলতে নেমেই ধাক্কা খাওয়া আনন্দ তাঁর প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন জ্ঞানবৃক্ষের ফল আপেলকে। জনসভায় ঝাড়া তিন মিনিট শুধু আনন্দকে নিয়েই হিমন্তের কথা বলা থেকে স্পষ্ট বক্সারের যুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়লেও বিজেপি শিবিরে কাঁপুনি ধরাতে সফল জনসংযোগ বিশারদ এবং একদা সঙ্ঘকর্মী আনন্দ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy