ভোট দিয়ে আত্মবিশ্বাসী তরুণ গগৈ, সর্বানন্দ সোনোয়াল। সোমবার উজ্জ্বল দেব ও পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে দু’জনই নিশ্চিত, জয় আসছেই। শুধু নিজের জয় নয়, দলের জয় এবং দিসপুর দখল নিয়েও ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছেন দু’জনেই। এঁরা হলেন তরুণ গগৈ এবং সর্বানন্দ সোনোয়াল।
আজ প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের ১৭টি জেলার ৬৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হল। ভোট পড়েছে প্রায় ৭৯ শতাংশ। গত বার রাজ্যে ভোটদানের গড় হার ছিল ৭৫.৯২ শতাংশ। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি হিংসার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি স্থানে ইভিএম বিকল হয়ে থমকেছে ভোটপর্ব। এদিন করিমগঞ্জ, কাটিগড়া, হাওড়াঘাট, বৈঠালাংশু, পানেরি, রাঙাপাড়া, মাঝবাট, বিশ্বনাথ, বেহালি, লাহোয়াল, মরিয়ানি, থাওরা, মাহমারা, নাওবৈচা, টিংখং, নাহারকাটিয়া, চাবুয়ায় ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। সবচেয়ে কম ভোট হাফলঙে, ৬৭.১৮ শতাংশ।
যোরহাট জেলার তিতাবরের দেবীচরণ স্কুলে সপরিবার ভোট দেন মুখ্যমন্ত্রী গগৈ। বুথ খুলতেই সবার আগে ভোট দেন গগৈ-পরিবার। কারণ, এর পর দিনভর রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বিভিন্ন সভায় ঘুরতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। গগৈ বলেন, ‘‘নির্বাচনে জয় নিয়ে আমি একশো ভাগ নিশ্চিত। হয়তো আগের চেয়ে এবার আসন কমবে। তবে সব মিলিয়ে আমরা ৬৫ থেকে ৭০টি আসন পাবই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের লড়াই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয়। রাজ্যবাসীর উন্নয়নের জন্য। পরিবর্তন বিজেপি নয়, আমরাই আনব।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি খামোকা ভারতীয় সংখ্যালঘুদেরও বাংলাদেশি সাজিয়ে রাজনীতি করছে। গগৈয়ের দাবি, এআইইউডিএফের সাহায্য ছাড়াই কংগ্রেস সরকার গড়বে। উল্টে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও এআইইউডিএফের জনপ্রিয়তা কমায় তাদের আসন আগের চেয়ে কমবে বলে গগৈ মনে করেন।
অন্য দিকে, ডিব্রুগড়ে ভোট দেওয়ার পরে সর্বানন্দ বলেন, ‘‘রাজ্যবাসী, বিশেষ করে যুব সমাজ পরিবর্তন আনতে চলেছেন। এমনকী রাজ্যের বাইরে কর্মরত বা পাঠরত তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রীরাও ভোট দিতে রাজ্যে ফিরেছেন। সকলের ভালবাসা ও আশীর্বাদে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’’ মানুষের এই প্রত্যাশা তাঁর ও তাঁর দলের দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন সর্বা।
এ দিকে, রাজ্যের শিক্ষেত মহলের একাংশ বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানোয় রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ও বিদগ্ধ মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হীরেন গোঁহাইয়ের নেতৃত্বে বিদগ্ধ নাগরিকদেরদের একটি অংশ রাজ্যবাসীর উদ্দেশে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি ব্যক্তিস্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাস করে না। তা ছাড়া অসমে তারা পরীক্ষিত দলও নয়। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির উপরে ভরসা করে কাউকে ভোট দেওয়া উচিত নয়।’’ কিন্তু নিরুপমা বরগোঁহাই, লক্ষ্মীনন্দন বরা, নির্মলকুমার চৌধুরী-সহ ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক ওই বিবৃতির বিপক্ষে বলেন, ‘‘মানুষ কাকে ভোট দেবেন তা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। নির্বাচনের ঠিক আগে এমন আহ্বান গণতন্ত্রের প্রতি ধাক্কা।’’ বিজেপি-বিপিএফ-অগপ জোট এই আহ্বানের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সাধারণ মানুষ বিশিষ্টদের পরমার্শ মেনে ভোট দেন না। নিজেদের ভালমন্দ অসমবাসী বোঝেন। তাই তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
আজ ভোটপর্ব শুরু হওয়ার অল্প পরেই মরিগাঁও জেলার তিনটি বুথ, গোলাঘাটের দু’টি ও খুমটাইয়ের একটি বুথে ইভিএম বিকল হয়ে যায়। নতুন ইভিএম এনে ভোটপর্ব শুরু করতে বিলম্ব হয়। মেরাপানিতে কংগ্রেস ও বিজেপি সমর্থকদের মারামারিতে কয়েকজন বিজেপি সমর্থক জখম হন। মাজুলির ফুলনিতে কংগ্রেসের সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিকও মার খান। চতিয়ায় বিজেপি প্রার্থী তথা বর্তমান বিধায়ক পদ্ম হাজরিকার এজেন্টকে বুথে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে ব্যাপক গণ্ডগোল হয়। অভিযোগ, কংগ্রেস কর্মীদের মারে গুরুতর জখম হন অঞ্জু বসুমাতারি নামে এক ভোটিং-এজেন্ট।
বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস প্রার্থী প্রাণেশ্বর বসুমাতারির আত্মীয় ও সমর্থকরা পুলিশের সামনেই সাতটি বুথে বিজেপি এজেন্টদের ঢুকতে না দিয়ে ব্যাপক রিগিং চালিয়েছেন। ওই ঘটনায় আলোচনাপন্থী এনডিএফবি ও আবসুর সদস্যরাও জড়িত বলে বিজেপি-অগপ নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে।
গোহপুরের মাঝিগাঁওতে মদ্যপান করে নিজেই গোলমাল বাধান প্রিসাইডিং অফিসার পুন্যসিংহ দেউড়ি। তাঁকে সরিয়ে দিয়ে অন্য প্রিসাইডিং অফিসারকে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভোটপর্ব চলার মধ্যেই এ দিন কার্বি আংলং ও নাগাল্যান্ডের সীমানায়, লাহরিজানে শতাধিক সশস্ত্র নাগা অসমের জমি দখল করার চেষ্টা করলে পুলিশ ও আধাসেনা গুলি চালায়। পরে দখলদাররা পিছু হঠে।
বোকাখাতের লাহরি চাপোড়িতে ভোটাররা ভোট বয়কট করেন। খুমটাইয়ের ৭২ ও ৭৩ নম্বর বুথে প্রায় আড়াইশো ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় না থাকায় প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘেরাও করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। প্রিসাইডিং অফিসার জানান, গাঁওবুড়া নামগুলি ভোটার তালিকায় দেননি। ঘটনার পর থেকে গাঁওবুড়া দীপেন রবিদাস ফেরার। অন্য দিকে, তিনসুকিয়ার ইটাখুলির একটি বুথে ভোট দিতে আসা এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বুথের শৌচাগার থেকে রাকেশ মান্দা নামে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy