সংবিধান দিবসে পুরনো সংসদ ভবনে বিশেষ অনুষ্ঠান। (বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
সুপ্রিম কোর্ট গতকালই সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমাজতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি খারিজ করেছিল। আজ পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বললেন, ‘‘আমাদের সংবিধান একটি জীবন্ত ও প্রগতিশীল দলিল।’’ আর উত্তরপ্রদেশর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁর রাজ্য বসে বললেন, ‘‘সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমাজতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ জুড়ে সংবিধানকে গলা টিপে হত্যা করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্ব।’’
‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে আজ সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, লোকসভা এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা যথাক্রমে রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। সেখানে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ উপস্থিত সাংসদেরা একসঙ্গে প্রস্তাবনা পাঠ করে সংবিধান মেনে দেশ চালানোর অঙ্গীকার করলেন।
আজ সকালে সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধান হল সজীব এবং প্রগতিশীল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংবিধান প্রণেতারা একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন যাতে পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নতুন ভাবনা অন্তর্ভুক্ত করতে সমস্যা না হয়।’’ প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেশ’ এই চিন্তা তৈরি করে দিয়েছে দেশের সংবিধান।
সংবিধান দিবসে তাল কেটেছে যোগী আদিত্যনাথ এবং উপরাষ্ট্রপতির বক্তব্যে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘স্বাধীনতার পরে বি আর অম্বেডকরের নেতৃত্বে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রী শব্দগুলি ছিল না। জরুরি অবস্থার সময়ে কংগ্রেস ওই শব্দগুলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। যারা সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, জনগণ নির্বাচনী ময়দানে তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আজ ওই কথা বলে কার্যত সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যোগী। আর সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘ফি বছরের ২৫ জুন আমাদের জরুরি অবস্থার অন্ধকারতম অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়। যখন দেশবাসীর মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছিল।’’
ধনখড়ের ওই মন্তব্য ভাল ভাবে নেয়নি বিরোধী শিবির। কংগ্রেসের মতে, আজকের দিনে ওই প্রসঙ্গ না ওঠাই বাঞ্ছনীয় ছিল। আর লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘সে সময়ে জগদীপ ধনখড় নিজে যে কংগ্রেসে ছিলেন সেই কথা বোধহয়ভুলে গিয়েছেন।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধান এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রচারে দলিত ভোটের একাংশ বিজেপির পিছনে থেকে সরে যায়। রাহুলদের মতে, ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে এখন সংবিধানকে সামনে রেখে প্রচারে নামতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ওই অনুষ্ঠান করতেই হত। কিন্তু আমি বলছি, প্রধানমন্ত্রী সংবিধান পড়েননি। সংবিধান ভারতের হাজার বছরের প্রজ্ঞার ফসল। এতে অম্বেডকর, গৌতম বুদ্ধ, জ্যোতিবা ফুলে, মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর ভাবনা রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, সংবিধানে কি সাভারকারের ভাবনা রয়েছে? হিংসার কথা আছে?’’ কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগোরের কটাক্ষ, ‘‘টিভির পর্দায় সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে আজ প্রধানমন্ত্রীকে তেরো বার দেখানো হয়েছে। অথচ সংবিধানের রচনার পিছনে যাঁরা ছিলেন তাঁদের দেখানো হয়নি।’’ আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। তাঁর মতে, ‘‘সংবিধান যেখানে বিপন্ন, সেখানে এই ধরনের অনুষ্ঠান অর্থহীন।’’
রাহুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অভব্য আচরণ করার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ তারা সমাজমাধ্যম এক্স-এ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মারক মুদ্রা প্রকাশের পরে রাষ্ট্রপতি দাঁড়িয়ে থাকলেও, রাহুল বসে পড়েন। যদিও খড়্গের হস্তক্ষেপে তিনি আবার উঠে দাঁড়ান। অন্য আর একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠান শেষের পরে খড়্গে-সহ মঞ্চের অন্য নেতারা যখন রাষ্ট্রপতিকে নমস্কার জানাচ্ছেন, তখন মঞ্চের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন রাহুল। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি হওয়ায় ‘রাজকুমার’ রাহুল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানাতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy