সমাজবাদী পার্টি ছাড়লেন স্বামীপ্রসাদ মৌর্য। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি সমাজবাদী পার্টি। সেই আবহেই এ বার ভাঙন ঘটল অখিলেশ যাদবের দলে। এসপি ছাড়লেন স্বামীপ্রসাদ মৌর্য। মঙ্গলবার নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশের কাছে। শুধু তা-ই নয়, বিধান পরিষদের সদস্য (এমএলসি) পদও ছাড়লেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।
দিন কয়েক ধরেই মৌর্যের দল ছাড়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। অখিলেশের দলে তিনি গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী। পাশাপাশি, অখিলেশের দল চালানোর পদ্ধতি নিয়েও তাঁর অভিযোগ ছিল বিস্তর। সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ-ও খবর ছিল যে, মৌর্য নাকি নতুন দল গঠন করবেন। নাম এবং প্রতীকও ঠিক হয়ে গিয়েছে বলে খবর।
মৌর্য এর আগেই দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পরই তাঁর দল ছাড়ার জল্পনা শুরু হয়। যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, কোনও পদ ছাড়াই তিনি সমাজবাদী পার্টিতে সাধারণ কর্মী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি, সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন মৌর্য।
মঙ্গলবার অখিলেশকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘‘আমি আপনার (অখিলেশ যাদব) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। সেই কারণেই আমি দলের সাধারণ সদস্য পদ ছেড়ে দিচ্ছি।’’ সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বিধান পরিষদের চেয়ারম্যানকেও চিঠি লিখে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তিনি।
ইস্তফার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মৌর্য বলেন, ‘‘আমি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমার সঙ্গে অখিলেশ যাদবের মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। আমি মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি অন্য মানুষ ছিলেন। তবে তাঁর উত্তরাধিকারী তাঁর আদর্শ অনুসরণ করছেন না।’’ এর পরই তিনি জানান, ‘‘আমার সমর্থকেরা নতুন দল করতে চান। ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে একটি বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
মৌর্যের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার ইচ্ছে ছিল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের। সেই ইচ্ছেতে ‘পাত্তা’ দেননি অখিলেশ। সম্প্রতি অখিলেশ তাঁর দলের রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেই তালিকায় নাম ছিল না মৌর্যের। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সেই কারণেই ক্ষুণ্ণ হয়ে সমাজবাদী পার্টি ছাড়লেন তিনি।
একদা মায়াবতী-ঘনিষ্ঠ স্বামীপ্রসাদ দু’দফায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের পড্রৌনা থেকে টানা তিন বার বিধানসভা ভোটে জিতেছেন তিনি। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের আগে তিনি বিএসপি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে জিতে যোগী সরকারের শ্রম এবং জনকল্যাণ মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে স্বামীপ্রসাদের মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা, বদায়ুঁ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি ছেড়ে অখিলেশের দলে নাম লিখিয়েছিলেন মৌর্য। ‘সাইকেল’ প্রতীকে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর জেলার ফাজ়িলনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে বিজেপির কাছে হেরে যান।
মৌর্যের নতুন দল গড়ার জল্পনার মধ্যেই আবারও তাঁর পুরনো দল বিজেপিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। তবে তাঁকে ফের দলে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরেই। অতীতে দেবদেবীদের নিয়ে করা তাঁর মন্তব্য বার বার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে হিন্দু ধর্ম নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে সমাজবাদী পার্টির মধ্যেই অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy