সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে দলের পতাকা উত্তোলনে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কান্নুরের জওহর মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়ামে। —নিজস্ব চিত্র।
মতাদর্শ বা সংগঠনের রীতি-নীতি শেখানোর জন্য মার্ক্স-লেনিনের চর্চা চিরকালই হয়ে থাকে পার্টি ক্লাসে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় পার্ট ক্লাসে সঙ্ঘ পরিবারকে নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছে সিপিএম!
বাংলা বা ত্রিপুরার মতো রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে বামের ভোট রামে গেলেও কমিউনিস্ট পার্টি এখন আরএসএসের আদর্শের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে, ঘটনা অবশ্য এমন নয়। সিপিএমের যুক্তি হল, গোটা দেশে প্রবল প্রতাপশালী হয়ে ওঠা বিজেপিকে পরাস্ত করতে গেলে তাদের চালিকা শক্তি আরএসএসের মোকাবিলা করতে হবে। আর সেই কাজ করতে গেলে আগে জানতে ও বুঝতে হবে, আরএসএস কী ভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাই সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে পেশ করার জন্য তৈরি দলের সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্টে পার্টি ক্লাসে সঙ্ঘ-সংক্রান্ত শিক্ষা গুরুত্ব দিয়ে চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির মোকাবিলা করার জন্য কেবল সংসদে বিরোধী শক্তির সমন্বয় বা বাইরে নির্বাচনী সমঝোতাই যে যথেষ্ট নয়, সে কথাই বলা হয়েছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। আরএসএস যে ভাবে সমাজের সর্ব স্তরে মিশে গিয়ে তাদের প্রভাব তৈরি করছে, মানুষের মগজে ঢুকে পড়ছে, তারই রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে বিজেপি। তাই সামাজিক ও আদর্শগত ভাবে আরএসএসের মোকাবিলার পাঠ নিতে হবে, যার জায়গা হতে পারে পার্টি ক্লাস।
আরএসএস-কে একেবারেই হাল্কা ভাবে না নেওয়ার কথা দলের অন্দরে বলে থাকেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। পলিটবুরোর তরফে তাঁরই হাতে তৈরি সাংগঠনিক রিপোর্টে এ বার সঙ্ঘ-মোকাবিলার বার্তা পার্টি কংগ্রেসেও উঠে আসছে। দলীয় সূত্রের খবর, সাংগঠনিক দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে না পারায় বিদায়ী পলিটবুরোকেও রেয়াত করা হয়নি ওই রিপোর্টে। কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সংশোধনমূলক দলিল তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।
সাংগঠনিক রিপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে সিপিএমের সদস্য-সংখ্যা এখন ৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭৫৭। তার মধ্যে কেরলেই ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ১৭৪। বাংলায় সদস্য ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮২৭। তরুণ প্রজন্মকে দলের সদস্য হিসেবে টেনে আনায় যে ব্যর্থতা ঘিরে সিপিএম উদ্বিগ্ন, সেই ক্ষেত্রেও কেরলের ছবি তুলনায় ভাল। দক্ষিণী এই রাজ্যে গত বারের সম্মেলনের পরে ৩১ বছর বয়স পর্যন্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেরলে ক্ষমতায় থাকার কিছু সুবিধা অবশ্যই আছে। কিন্তু গোটা দেশে বিজেপির অগ্রগতির মধ্যে কেরলে বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবির একটাও আসন পায়নি। কেরলের মানুষের পাশাপাশি এই কৃতিত্ব অনেকটা পার্টিরও প্রাপ্য!’’
বার্নাশেরির ই কে নায়নার হলে আজ, বুধবার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির উদ্বোধনী ভাষণের পরে বার্তা দেবেন অন্যান্য বাম দলের নেতৃত্ব। তবে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিএম তৈরির পরে এ বারই প্রথম কোনও পার্টি কংগ্রেসে থাকছেন না ভি এস অচ্যুতানন্দন। শারীরিক কারণে তিনি আপাতত ঘরবন্দি। দল প্রতিষ্ঠার সময়ের সৈনিক হিসেবে গত বার হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল ভি এস-কে। এ বারের পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস নিয়ে নানা চর্চা এবং রাস্তাঘাটে অতীতের বিভিন্ন বাম মুখ্যমুন্ত্রীর মুখ পোস্টারে দেখা গেলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এসের ছবি অবশ্য এড়িয়েই চলছেন পিনারাই বিজয়নেরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy