লোকসভায় বাঘ হলে রাজ্যসভায় যে বাঘের মাসি হয়েই থাকতে হবে, নরেন্দ্র মোদীকে আজ তা সমঝে দিলেন সনিয়া গাঁধী। আর এমন একটি ইস্যুকে হাতিয়ার করে, যাতে মোদীর বিরুদ্ধে দলিত-বিরোধী, মহিলা-বিরোধী প্রচারকে আরও তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়।
ঠিক কী ভাবে?
রাজ্যসভায় এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই সরকারের। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় ধন্যবাদ বিতর্কে কংগ্রেস চাইলে বাম বা অন্য বিরোধী দলের মত সংশোধনী এনে ভোটাভুটি না-ও চাইতে পারত। কিন্তু গতকালই মহিলা দিবসে সনিয়া গাঁধী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি শাসিত হরিয়ানা, রাজস্থানে যে ভাবে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার অছিলায় আসলে দলিত-মহিলাদের ভোটে লড়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকে দিয়ে তাই সংশোধনীতে ভোটাভুটি চেয়ে সরকারের বিড়ম্বনা বাড়ানোর বিষয়ে অনড়ই থাকলেন সনিয়া। মায়াবতীর দল অনুপস্থিত থাকলেও, তৃণমূল ভোট না দিলেও বাকি বিরোধী দলের সাহায্যে সরকারকে পরাস্ত করে সংশোধনী রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হল।
এর ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন সনিয়া। এক, লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে যতই আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হন, সওয়া ঘণ্টা ধরে রাহুল গাঁধীকে বিষয় ধরে ধরে নিশানা করার সুযোগ পান, রাজ্যসভায় যে মোদীকে সমঝে চলতে হবে, সেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন সনিয়া গাঁধী। আর দুই, পঞ্চায়েতে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দিয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে দলিত ও মহিলারা যে বঞ্চিত হবেন, সেই রাজনৈতিক প্রচারের ভিতটিও আজ তৈরি করে রাখলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। ভবিষ্যতে শুধুমাত্র এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক প্রচারই নয়, কেন্দ্রে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল আনার জন্যও চাপ বাড়ানো হবে সরকারের উপর। রাহুল গাঁধীও আজ বলেন, ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করে এ দেশে সব নাগরিকের ভোটে লড়ার অধিকার আদায় করে নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতে কেন? বিধায়ক-সাংসদ, এমনকী, কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাও তো তা হলে বেঁধে দেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন- আমার কাজ অনুবীক্ষণে, তোমাদের কাজ দূরবিনেও নেই: কটাক্ষ মোদীর
কংগ্রেস যে এই সংশোধনী আনতে চলেছে, সেটি অজানা ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। তাই নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি আবেদন করেন, সংশোধনী প্রত্যাহার করে নিতে। অনুরোধ করেন, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত লোকসভা যখন এটি স্বীকার করে নিয়েছে, রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত রাজ্যসভারও উচিত এটির স্বীকৃতি দেওয়া। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলেই মোদীর গলায় আজ লোকসভার মতো ঝাঁঝও ছিল না। যদিও কংগ্রেসকে বিঁধতে মাঝে মাঝে থাবা মারার চেষ্টা করেছেন তিনি। বলেছেন, মৃত্যুর কোনও বদনাম হয় না। কেউ ক্যান্সারে মারা গেলে রোগের দোষ দেয়, মৃত্যুর নয়। অনেক বয়সে মারা গেলে বয়সের দোষ দেওয়া হয়। তেমনই কংগ্রেসকে আক্রমণ করলে লেখা হয়, বিরোধীদের নিশানা করা হয়েছে। কংগ্রেসের বদনাম হয় না। সে দিক থেকে কংগ্রেস আশীর্বাদধন্য।
কিন্তু ওইটুকুই। বাকি সময়টি মোদীর গলায় ভেসে উঠেছে খানিক হতাশারই সুর। বলেন, ‘‘মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আমার কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কংগ্রেস নিজেরা ক্ষমতায় থাকলে বাইনোকুলার নিয়ে কাজ করলে আমাকে এত পরিশ্রম করতে হত না।’’ ঝাঁঝালো আক্রমণের থেকে মোদী নিজের বক্তব্য শেষ করলেন নিদা ফাজলির গজলের লাইন দিয়ে। ‘মুঝে গিরাকে আগর তুম সম্ভল সাকো তো চলো।’ সেই অভিনব ভঙ্গিতেই কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, তাঁকে পরাস্ত করেও কি নিজেদের সামাল দিতে পারবে বিরোধীরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy