প্রতীকী ছবি
কুম্ভে তীর্থে যাবেন। এই বলে ভিসা নিয়েছিলেন সুখন্দ। কুড়ি দিনের ভিসা। জোধপুর দিয়ে যখন ভারতে এলেন, ভিসার মেয়াদ বাকি মাত্র দু’দিন।
তীর্থ শুধু অজুহাত ছিল সুখন্দ প্রধানের। আসলে পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসাই ছিল লক্ষ্য। ‘‘মরি-বাঁচি, ঠিক করেছিলাম ভারতেই থাকব,’’ এক দৃষ্টিতে বললেন সুখন্দ— ‘‘নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ এখন আমাদের ভারতের নাগরিক করবেন। ভোট দেব। ছেলে-মেয়ে পড়বে, ফৌজি হবে, ডাক্তার হবে, এমএলএ হবে।’’
নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তোলপাড় দেশ। সীতারাম ইয়েচুরিই হোন বা যোগেন্দ্র যাদব, দিল্লিতে কোনও বিরোধ-জমায়েতের অনুমতি নেই। কিন্তু একটিমাত্র জমায়েতে কোনও চোখরাঙানি, বিধিনিষেধ ছিল না। রাজঘাটের ঠিক বিপরীতে আজ জড়ো হয়েছিলেন দিল্লির আনাচে-কানাচে বাস করা শরণার্থীরা। একটু পরে-পরেই মঞ্চ থেকে স্লোগান উঠছে, ‘জয় শ্রী রাম’, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’, ‘মোদী-শাহ জিন্দাবাদ’। কটাক্ষ উড়ে আসছে বিরোধীদের দিকে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপির সুর বক্তাদের কণ্ঠেও— ‘‘এই আইন কারও অধিকার কাড়ছে না, আমাদের অধিকার দিচ্ছে।’’
মঞ্চে যাঁরা বলছেন, সকলেই শরণার্থী। সামনে যাঁরা বসে, তাঁরাও গরিব শরণার্থী। তা হলে এত আয়োজন, পুলিশের অনুমতি আদায় করলেন কারা? গাছের পিছনে, ঝোপের আড়ালে, মঞ্চ থেকে দূরে দেখা যাচ্ছে বিজেপি-বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বেশ কিছু মাঝারি মাপের নেতাকে। দূর থেকে ইশারা করলেও মঞ্চে ঘেঁষছেন না। কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেই বলছেন, ‘‘আজ থাক। এঁদের জিজ্ঞাসা করুন না। আইন তো এঁদের জন্যই। এঁরাই বলুন নিজেদের কথা।’’
দিল্লির মজনু কা টিলা, আদেশনগর, রোহিনি, পাশের ফরিদাবাদ থেকে কয়েক হাজার শরণার্থী। গড়গড় করে বলছেন পাকিস্তানে অত্যাচারের কথা। ৩৭ বছরের পাঁচ সন্তানের মা ‘বেবি’। বলছেন, ‘‘১১ বছর আগে ভারতে এসেছি। হিন্দু বলে পাকিস্তানে অত্যাচার করত খুব।’’ কেমন অত্যাচার? ‘‘ভয় দেখাত, তুলে নিয়ে যাবে। এখনও আমার মা-বাবা-বোন-শ্বশুরবাড়ির সকলে ওখানেই..।’’ তাঁদের উপরেও কী ধর্মীয় নিপীড়ন হয়েছে? ‘‘এখনও হয়নি।’’ পাশের এক মহিলা খেই ধরিয়ে বললেন, ‘‘ওখানে মহিলাদের উপরে অত্যাচার হয়। এখানে আমরা নিরাপদ। আইসক্রিম বেচে রোজগার করি।’’
জনসভা মানেই মেলা। ফেরিওয়ালারা চলে আসেন গন্ধ পেয়ে। শীতের দিল্লিতেও আইসক্রিম খাচ্ছে দুই স্কুল পড়ুয়া। এক জনের নাম গোবিন্দ, অন্য জন জ্ঞানবন্ত। তোমরা কবে, কোথা থেকে এসেছো? গোবিন্দের জবাব, ‘‘পাকিস্তানের হায়দরাবাদ থেকে। গত বছরই এসেছি।’’ পাশের ছেলেটি চট করে শুধরে বলে, ‘‘পাঁচ বছর-পাঁচ বছর। পাঁচ বছর আগে এসেছি।’’ কংগ্রেসের নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা রোজগারের খোঁজে না নিপীড়নের শিকার হয়ে, কে যাচাই করবে? আইন বলছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, নাগরিকত্ব মিলবে তাঁদের। যাঁরা পরে এসেছেন?
মঞ্চে কয়েক জন শিখও ছিলেন। তাঁরা নাকি ২৮-৩০ বছর আগে যাঁরা আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন। সভা থেকে তাঁরা সোজা যান বিজেপি দফতরে। দলের কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা তৈরিই ছিলেন। সকলের সঙ্গে দেখা করলেন। পাগড়িও পরলেন। আর বললেন, ‘‘যেখানে আপনারা রয়েছেন, সেখানে ক্যাম্প বসাবে বিজেপি। খুব তাড়াতাড়ি নাগরিকত্বের কাগজ পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy