রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন বিরোধী দলের সাংসদরা। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই চিড় ধরে গেল বিরোধী ঐক্যে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে মোদী সরকারের ‘স্বৈরাচারী নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল সমাজবাদী পার্টি (সপা), বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা), এনসিপি, ডিএমকে এবং বামপন্থী দলগুলি। তৃণমূল, আরজেডি এবং জেডিইউ সাংসদদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পত্র পেশ করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
নোট বাতিল এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েই এ দিন রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি। কিন্তু সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকে বিরোধী পক্ষে ঐক্যের ছবিটা যতটা মজবুত ছিল, অধিবেশনের শেষ দিনে কিন্তু তা আর রইল না। লোকসভা বা রাজ্যসভার ভিতরে এ দিনও বিরোধীদের সম্মিলিত বিক্ষোভই দেখা গিয়েছে। কিন্তু সংসদের বাইরে পরিস্থিতিটা অন্য রকম হয়ে গেল। শুধু মাত্র কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে নিয়ে রাহুল গাঁধী এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন কেন? এই প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেকা করতে যাওয়ার কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াল বেশ কয়েকটি দল।
নোট বাতিলের পর থেকে কৃষকরা প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কৃষিকাজ মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে বলে প্রায় সবক’টি বিরোধী দলই মনে করছে। রাহুল গাঁধী সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে ‘কিসান যাত্রা’ কর্মসূচি শেষ করেছেন। নোট বাতিলের জেরে সে রাজ্যের কৃষকরা কী ধরনের সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন, তা জানানোর জন্য রাহুল এ দিন কংগ্রেসের বড়স়ড় প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। কয়েকটি বিরোধী দল, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের দলগুলি, রাহুলের এই পদক্ষেপকে ভাল চোখে দেখেনি। সে রাজ্যে ক্ষমতাসীন সপা এবং প্রধান বিরোধী বসপার বক্তব্য, কৃষকদের সঙ্কট নিয়ে সব দলই ভাবিত। তাই শুধু কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া রাহুলের উচিত হয়নি। নোট বাতিল নিয়ে সবক’টি বিরোধী দল যে হেতু ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকারের বিরোধিতায় নেমেছে, সে হেতু সব বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া উচিত ছিল রাহুলের। কংগ্রেস সহ-সভাপতি তা না করায়, বিরোধী ঐক্য ধাক্কা খেল বলে সপা, বসপার দাবি। একই মত এনসিপি, ডিএমকে এবং বামপন্থী দলগুলিরও।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিরোধী দলগুলির। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গাঁধীদের দেখা হওয়ার পর দুপুরে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল বিরোধী দলের সাংসদদের। কিন্তু গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে সাংসদদের যে সময়ে রওনা হওয়ার কথা ছিল, তার একটু আগে থেকেই একে একে সপা, বসপা, এনসিপি, ডিএমকে এবং বামেদের সরে দাঁড়ানোর খবর আসতে শুরু করে। তৃণমূল, আরজেডি, জেডিইউ-এর মতো দলগুলি অবশ্য পিছিয়ে আসেনি। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে যান। যে পদ্ধতিতে নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তার পরেও বিরোধীদের কোনও দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে যে পথে সরকার এগোচ্ছে, বিরোধী সাংসদরা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে তার প্রতিবাদ জানান।
যে দলগুলি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ কিন্তু তাদের পদক্ষেপের অন্য তাৎপর্য দেখছেন। সপা, বসপার সরে দাঁড়ানোর প্রধান কারণ হল উত্তরপ্রদশের নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে সপা, বসপা, কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের সঙ্কটের কথা প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব একা কংগ্রেস নিয়ে নিক, এটা সপা বা বসপার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। রাহুল অন্য কোনও দলকে সঙ্গে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ায় তাই স্বাভাবিক ভাবেই চটেছেন মুলায়ম, মায়াবতীরা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের আক্রমণে মোদী
তবে শুধুমাত্র সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি থেকে এই দলগুলি সরে দাঁড়িয়েছে, তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন না। কারণ উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি নিয়ে এনসিপি, ডিএমকে বা বামেদের উৎসাহ খুব বেশি নেই। তা হলে অন্য কারণটা কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, নোট বাতিলের পর থেকে বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার পর সবচেয়ে বেশি নজর যিনি কেড়েছেন, তাঁর নাম রাহুল গাঁধী। গত কয়েক সপ্তাহে তিনি বিরোধী শিবিরের প্রায় মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন। কৃষকদের সমস্যা নিয়েও রাহুল গাঁধীই সর্বাগ্রে প্রধানমন্ত্রী সমীপে হাজির হলেন। রাহুলের এই বিরাট রাজনৈতিক মাইলেজ মেনে নেওয়া অন্য বিরোধী দলগুলির পক্ষে খুব সহজ নয় বলেই বিশ্লেষকদের মত।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হিসেবে উঠে আসার মঞ্চ এত সহজে রাহুলের জন্য সাজিয়ে দিতে প্রস্তুত নন মুলায়ম, মায়াবতী, শরদ পওয়াররা। এঁদের অনেকেই নাকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে টিকে থাকতে চাইছেন। বিরোধী শিবিরের মধ্যমণি হয়ে ওঠার রাস্তা রাহুল গাঁধীর জন্য ফাঁকা করে দিলে দৌড় থেকে এখনই ছিটকে যেতে হয়। সেই কারণেই নাকি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি থেকে আচমকা নিজেদের সরিয়ে নেওয়া। কংগ্রেসকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে প্রচারের আলো আবার নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করা। এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy