সত্যপাল মালিক। ফাইল চিত্র।
এমনিতেই আদানি-কাণ্ড নিয়ে গোটা বিরোধী শিবির এখনও যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র তদন্তের দাবিতে অনড়। তারই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা সত্যপাল মালিক মন্তব্য করলেন, “আমি সব দিক খেয়াল রেখে বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিকে তেমন বিরাট কিছু ঘেন্না করেন না।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ স্লোগান তুলেছিলেন। কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পরে বিরোধী শিবির এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা ও তার সুবাদে আদানি কী কী সুবিধা পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মোদী এ নিয়ে নীরবই রয়েছেন। কোনও অভিযোগ অস্বীকারও করেননি। তারই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মুখ খুলে সত্যপাল বলেছেন, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীকে কিছু অনিয়মের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ থেকে আরএসএস নেতা রাম মাধবের কাজকারবার সম্পর্কেও সরকারকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। গোয়ার রাজ্যপাল থাকার সময়ও সেখানকার বিজেপি সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতির বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। তার পরেই তড়িঘড়ি তাঁকে মেঘালয়ে বদলি করে দেওয়া হয়।
এই সব অভিজ্ঞতার নিরিখেই সত্যপাল বলেছেন, তিনি ‘সেফলি’ এটুকু বলতে পারেন যে, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিকে বিরাট কিছু ‘নফরত’ করেন না। আদানি-কাণ্ড বিজেপির পতন ডেকে আনতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে সত্যপাল বলেছেন, রাহুল গান্ধী সংসদে আদানি-কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুললেও প্রধানমন্ত্রী তার কোনও জবাব দিতে পারেননি। প্রবীণ বিজেপি নেতার এই মন্তব্যকে স্বাভাবিক ভাবেই হাতিয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর প্রশ্ন, আদানিদের সংস্থায় কার ২০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে, তা বলতে প্রধানমন্ত্রী এত ভয় পান কেন?
সত্যপাল এর আগেও বলেছেন, রাজ্যপাল থাকাকালীন তাঁর কাছে ৩০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব ছিল। এ বারে তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ আরএসএস নেতা রাম মাধব, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবু দু’টি প্রকল্প নিয়ে তাঁর কাছে দরবার করতে এসেছিলেন। একটি জম্মু-কাশ্মীরে অম্বানীদের বিমা প্রকল্প। অন্যটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। দু’টি প্রকল্পে সায় দিলে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেত। তিনি দু’টিই নাকচ করে দিয়েছিলেন। সত্যপালের মন্তব্যের পরে আরএসএস নেতা রাম মাধব তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাল্টা সত্যপাল বলেছেন, ‘‘এ সব হুমকিতে আমি ভয় পাই না। রাম মাধব বলুন, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের রাজভবনে গিয়েছিলেন কেন?’’
সত্যপাল বলেছেন, কাশ্মীরে থাকার সময় তিনি জানতে পারেন, বিভিন্ন লোককে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিনি বিষয়টি অমিত শাহকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু জিতেন্দ্র এখনও নিজের পদে বহাল রয়েছেন। গোয়ায় রাজ্যপাল থাকাকালীন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, তিনি খবর নিয়ে জেনেছেন সত্যপাল ভুল শুনেছেন। কিন্তু মোদী যাঁর থেকে খবর নিয়েছিলেন, তিনি নিজেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে বসে টাকা তুলতেন! সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা বলার পরের সপ্তাহেই তাঁকে মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসাবে বদলি করে দেওয়া হয়। বিমান না থাকায় তাঁকে গোয়া থেকে তড়িঘড়ি সরাতে বায়ুসেনার ভাঙাচোরা বিমানে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
বিজেপির প্রথম সারির নেতারা মুখে কুলুপ আঁটায় আসরে নেমে দলের আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্য বলেন, সত্যপাল নিজেই এক সাক্ষাকারে অমিত শাহ সম্পর্কে বানিয়ে কথা বলা স্বীকার করে নিয়েছেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের মন্তব্য, বিজেপি এখন মোদী সরকারেরই নিযুক্ত রাজ্যপালের কুৎসা করবে। কিন্তু অভিযোগের জবাব দেবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy