ঔরঙ্গজ়েব প্রসঙ্গে এ বার মুখ খুললেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। জানালেন, যাঁরা নিজেদের ঔরঙ্গজ়েবের বংশধর অর্থাৎ তাঁর ভাবধারায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা ছাড়া সকলেই আরএসএসের শাখা-তে স্বাগত। মেরুকরণের প্রশ্নে ঔরঙ্গজ়েব যে এখনও প্রাসঙ্গিক, তা সঙ্ঘ প্রধানের ওই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট।
সম্প্রতি ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি ঘিরে বিতর্কের জেরে সাম্প্রদায়িক অশান্তির সাক্ষী থেকেছে নাগপুর। সংঘর্ষের পরে আরএসএস নেতৃত্ব গোড়ায় দাবি করেছিলেন, বর্তমান সময়ে ঔরঙ্গজ়েব বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু ওই বক্তব্যের দু’দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে আরএসএসের সহকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে বলেন, “ঔরঙ্গজ়েবের নীতি কোনও ভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না।” এ দেশের প্রেক্ষিতে ঔরঙ্গজ়েবের দাদা, ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত দারা শিকোর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি বলে মন্তব্য
করেছেন হোসবলে।
তিন দিনের সফরে বর্তমানে বারাণসীতে রয়েছেন ভাগবত। গত কাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে এক আরএসএস কর্মী ভাগবতকে প্রশ্ন করেন, তিনি তাঁর পরিচিত কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে ‘শাখা’ কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারেন কি না?
জবাবে ভাগবত বলেছেন, ‘‘যাঁরা ভারতমাতার জয় বলেন, গেরুয়া ধ্বজের প্রতি সম্মান দেখান, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য শাখার দরজা খোলা রয়েছে। সঙ্ঘে পুজো
পদ্ধতির পার্থক্যের জন্য কারুর সঙ্গে বৈষম্য করা হয় না। এটাই সঙ্ঘের আদর্শ।”
এর পরেই ঔরঙ্গজ়েব-প্রসঙ্গ টেনে আনেন ভাগবত। তিনি বলেন, “যাঁরা নিজেদের ঔরঙ্গজ়েবের বংশধর বলে মনে করেন, তাঁদের বাদ দিয়ে সকল ভারতবাসীকে শাখায় স্বাগত। কেন না আমাদের জাতি, সম্প্রদায় ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি এক।”
ভাগবতের মুখে ঔরঙ্গজ়েবের প্রতি এই মন্তব্যের প্রসঙ্গে রাজনীতিকদের মতে, ঔরঙ্গজ়েবকে গোঁড়া ধর্মান্ধ ও হিন্দু-বিরোধী তুলে ধরার আসল লক্ষ্যই হল প্রাক্তন মোগল সম্রাটকে সামনে রেখে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ। যে কারণেই মারা যাওয়ার এত দিন পরে তাঁর কবর ঘিরে নাগপুরে পরিকল্পিত অশান্তির ছক কষা হয়। যে অশান্তিতে মদত দেয় মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার, অভিযোগ বিরোধীদের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)