Royal Figure Vijaya Raje Scindia Played Vital Role in Indian Politics Later dgtl
bjp
নিজের অন্ত্যেষ্টিতে ছেলে মাধবরাওয়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন, জেলবন্দিও ছিলেন বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া
সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার সময়ে বিজয়ারাজে কারাবন্দি হন। সে সময় তিহাড় জেল-এ একই সেলে ছিলে গ্বালিয়রের রাজমাতা বিজয়ারাজে এবং জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবী।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ১১:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
গ্বালিয়রের রাজমাতা হয়ে থাকতে চাননি পর্দার অন্তরালে। স্বামীর পাশাপাশি তৈরি করেছিলেন নিজস্ব অস্তিত্ব। ‘জন সঙ্ঘের’ দীর্ঘ কয়েক দশকের সদস্য এবং ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম নেত্রী বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া ছিলেন স্বমহিমায় ভাস্বর।
০২২২
জন্ম ১৯১৯ সালের ১২ অক্টোবর, আজকের মধ্যপ্রদেশের সগর জেলায়। তাঁর বাবা ঠাকুর মহেন্দ্র সিংহ ছিলেন সরকারি আধিকারিক। মহেন্দ্র সিংহ এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী চূড়া দেবেশ্বরী দেবীর বড় মেয়ে ছিলেন তিনি। জন্মের পরে নাম রাখা হয়েছিল লেখা দিব্যেশ্বরী দেবী।
০৩২২
মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন দিব্যেশ্বরী। তাঁকে জন্ম দেওয়ার কিছু ক্ষণ পরে মৃত্যু হয় নেপালের রাজপরিবারের মেয়ে চূড়া দেবেশ্বরী দেবীর। তাঁর বাবা খড়্গ সামশের জং বাহাদুর রানা ছিলেন নেপালের রাজনীতিক এবং সেনাধ্যক্ষ। কিন্তু রাষ্ট্রদোহিতার দায়ে তাঁকে নির্বাসিত করে রানা পরিবার।
০৪২২
তৎকালীন সগরে এসে তিনি সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই বাবা মায়ের কাছে সন্তান প্রসবের জন্য এসেছিলেন চূড়া দেবেশ্বরী দেবী। মেয়ের প্রসবকালীন মৃত্যুর পরে সদ্যোজাত নাতনিকে নিজেদের কাছেই রেখে দেন রানা-দম্পতি।
০৫২২
সগরে দাদু-দিদিমার কাছেই বড় হন দিব্যেশ্বরী। তিনি কোনও দিন তাঁর বাবার সঙ্গে থাকেননি। দিদিমা রানি ধনকুমারী ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। তাঁর ব্যক্তিত্বের গভীর প্রভাব পড়েছিল নাতনি দিব্যেশ্বরীর জীবনে।
০৬২২
নির্বাসনে আভিজাত্যে অভাব না থাকলেও অর্থাভাব ছিল। ফলে দিব্যেশ্বরীর জীবন আর পাঁচ জন রাজকুমারির থেকে আলাদা ছিল। তিনি বড় হয়ে ওঠেন সাধারণ ঘরের মেয়ের রীতিতেই। প্রথমে বাড়িতে পড়াশোনা শুরু করেন। তার পর উচ্চশিক্ষা বারাণসীর বসন্ত কলেজ এবং লখনউয়ের ইসাবেলা থোবর্ন কলেজে।
০৭২২
হস্টেলে বাকি সহপাঠীদের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করেন রাজকন্যা দিব্যেশ্বরী। তখন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে। প্রতিবাদে সামিল হয়ে দিব্যেশ্বরীও বিদেশি পণ্য বর্জন শুরু করেন।
০৮২২
বাইশ বছর বয়সে দাম্পত্যে প্রবেশ দিব্যেশ্বরীর। ১৯৪১-এর ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বিয়ে হয় গ্বালিয়রের মহারাজা জিবাজিরাও সিন্ধিয়ার সঙ্গে। সে সময় গ্বালিয়র ছিল দেশের রাজন্য স্টেটগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা। সিন্ধিয়া পরিবারের রীতি অনুযায়ী স্বামীর সঙ্গে কোষ্ঠী বিচার করে নতুন নামকরণ হয় নববধূর।
০৯২২
দিব্যেশ্বরীর নামকরণ হয় ‘বিজয়া’। তারপর থেকে বাকি জীবন তিনি গ্বালিয়রের রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া। সনাতন ধর্মের রীতিনীতির প্রতি একনিষ্ঠ বিজয়ারাজে নিজের বিস্তৃত সংসারকে সাজিয়েছিলেন নিজের আদর্শেই।
১০২২
স্বামীর সঙ্গে বিজয়ারাজের সম্পর্কে ফাটল ধরার কোনও গুঞ্জন কখনও শোনা যায়নি। ১৯৬১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে বিজয়ারাজে একাই বড় করে তোলেন তাঁর চার সন্তানকে। একদিকে রাজমাতা, অন্যদিকে সিঙ্গল পেরেন্ট, দু’টি ভূমিকাই নিপুণ ভাবে সম্পন্ন করেন তিনি।
১১২২
জিবাজিরাও এবং বিজয়ারাজের বড় মেয়ে পদ্মাবতীরাজের বিয়ে হয়েছিল ত্রিপুরার শেষ ক্ষমতাসীন রাজা কিরীট দেববর্মনের সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রয়াত হন পদ্মাবতী।
১২২২
মেজো মেয়ে ঊষারাজের বিয়ে হয়েছে নেপালের রানা পরিবারে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়, পশুপতি সামশের জং বাহাদুর রানার সঙ্গে। সেজো মেয়ে বসুন্ধরারাজের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাজস্থানের ঢোলপুর রাজবংশের মহারাজ রানা হেমন্ত সিংহের। কিন্তু এক বছর পরেই তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে দু’ দফায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বসুন্ধরারাজে সিন্ধিয়া।
১৩২২
ছোট মেয়ে যশোধরারাজে সিন্ধিয়াও বিজেপি নেত্রী। তিনি বিয়ে করেছিলেন রাজ পরিবারের বাইরে। তাঁর স্বামী সিদ্ধার্থ ভনশালী ছিলেন আমেরিকার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। পরবর্তী কালে যশোধরার দাম্পত্যও ভেঙে যায়।
১৪২২
দুই মেয়ের ব্যর্থ দাম্পত্য পীড়িত করেছিল বিজয়ারাজে সিন্ধিয়াকে। একই ভাবে তিনি মেনে নিতে পারেননি একমাত্র ছেলে মাধবরাওয়ের সঙ্গে মতানৈক্য। ব্যক্তিগত পরিসর থেকে রাজনৈতিক চিন্তা। নানা দিকেই ফাটল ধরেছিল মা-ছেলের সম্পর্কে। দু’জনের মধ্যে চরমে উঠেছিল সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ।
১৫২২
মায়ের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিপরীত মেরুতে চলে গিয়ে পরবর্তী সময়ে মাধবরাও সিন্ধিয়া কংগ্রেসে যোগ দেন। দু’জনের সম্পর্কের চরম তিক্ততার আঁচ ছিল বিজয়ারাজের উইলে। তাঁর শেষ ইচ্ছাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল মৃত্যুর পরে। সেখানে বলা ছিল, বিজয়ারাজের অন্ত্যেষ্টিতে থাকতে পারবেন না তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান, মাধবরাও সিন্ধিয়া।
১৬২২
তবে রাজনীতিক হিসেবে বিজয়ারাজের হাতেখড়িও কংগ্রেসেই। ১৯৫৭ সালে তিনি গুনা থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন। পাঁচ বছর পরে তিনি কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন গ্বালিয়র থেকে। এর পর কংগ্রেস ছেড়ে স্বতন্ত্র পার্টি-তে যোগ দেন তিনি। তাদের প্রার্থী হয়ে ১৯৬৭ সালে জয়ী হন গুনা থেকেই।
১৭২২
কয়েক মাসের মধ্যে বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া যোগ দেন জনসঙ্ঘে। কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে সরে আসেন রাজ্য রাজনীতিতে। জনসঙ্ঘ প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন মধ্যপ্রদেশের করেরা থেকে।
১৮২২
১৯৭১-এ ইন্দিরা ঝড়কে রুখে দেয় জনসঙ্ঘ। আবার লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজয়া রাজে। তিনি জয়ী হন ভিন্দ থেকে। এ ছাড়াও গ্বালিয়র থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং গুনা থেকে মাধবরাও সিন্ধিয়া জয়ী হন জনসঙ্ঘ প্রার্থী হিসেবে। পরে মাধবরাও কংগ্রেসে যোগ দেন।
১৯২২
১৯৭৭ এবং ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি বিজয়ারাজে। তার মাঝে ১৯৮০ সালে পরাজিত হন ইন্দিরা গাঁধীর কাছে, রায়বরেলী কেন্দ্রে। ১৯৮৯ সালে বিজয়ারাজে বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হন গুনা থেকে। এই আসন তিনি ধরে রাখেন ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালেও।
২০২২
এর পর বার্ধক্যজনিত কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি গ্বালিয়রের এই রাজমাতা। সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সময়ে বিজেপির উপ-সভানেত্রী ছিলেন তিনি। সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার সময়ে বিজয়ারাজে কারাবন্দি হন। সে সময় তিহাড় জেল-এ একই সেলে ছিলে গ্বালিয়রের রাজমাতা বিজয়ারাজে এবং জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবী।
২১২২
ছেলে মাধবরাও যখন জনসঙ্ঘ ছেড়ে ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে গ্বালিয়রে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ছেলের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া। ২০০১-এর ২৫ জানুয়ারি ৮১ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছেলেকে ক্ষমা করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর নাকি আশা ছিল, নাতি জ্যোতিরাদিত্য এক দিন বাবার ভুল শুধরে নেবেন।
২২২২
ইংরেজিতে তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য লাস্ট মহারানি অব গ্বালিয়র’ এবং হিন্দিতে তাঁর জীবনী ‘এক থি রানি অ্যায়সি ভি’ ছিল একসময়ের বেস্ট সেলার। মৃত্যুর পরেও সমান বর্ণময় গ্বালিয়রের অতীত-রাজমাতা। (ছবি: আর্কাইভ)