দামের ছেঁকা!
খাবার, আনাজপাতি ও জ্বালানির আগুন দামে সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরেই বিপর্যস্ত। সেই মূল্যবৃদ্ধির তেজ ঠিক কতটা, তা আরও বেশি করে স্পষ্ট হচ্ছে কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেও!
মার্চে দেশে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার (৬.৯৫%) যে ১৭ মাসের সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে, তা সম্প্রতি জানা গিয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্যে সামনে এল, গত মাসে ১৫ শতাংশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধিও (১৪.৫৫%)। যা গত চার মাসের সর্বোচ্চ তো বটেই, সেই সঙ্গে ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে রয়েছে ১০ শতাংশের উপরে। কেন্দ্রের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। বিঘ্নিত হয়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা। পাইকারি বাজারে এই সবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
দামের ছেঁকায় মানুষ এমনিতেই জেরবার। দিন কয়েক আগে যেখানে ১০ টাকায় তিনটি পাতিলেবু পাওয়া যেত, সেখানে সেই দামেই এখন মিলছে একটি। গৃহস্থকে কাটছাঁট করতে হচ্ছে আমিষের বাজেট। এপ্রিল থেকে ৮০০টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে এই সময়ে সরকার থেকে সাধারণ মানুষ সাধারণত ভাল বর্ষার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এখন মূল্যবৃদ্ধির যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, বৃষ্টির ছাঁটে তার উত্তাপ কমানো কার্যত অসম্ভব। চাই বাড়তি কিছু পদক্ষেপ। ফলে টানা ১১টি ঋণনীতিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার (রেপো রেট বা যে সুদের হারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়) অপরিবর্তিত রাখলেও, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে জুনের ঋণনীতিতে সুদ বৃদ্ধি কার্যত অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছেন তাঁরা। আর ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন প্রকল্পের সুদ বাড়ালে সুদ নির্ভর মানুষেরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন বটে, তবে এর অসুবিধার দিকও রয়েছে। শিল্প, ব্যবসা থেকে শুরু করে বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন খুচরো ঋণে সুদের হার বাড়লে, তা ঋণ বৃদ্ধির গতিকে শ্লথ করতে পারে। যা অর্থনীতির পক্ষে মোটেও ভাল খবর নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে কমতে পারে শিল্পের বিনিয়োগ। কমতে পারে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। বস্তুত, অতিমারি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেই এত দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদের হার নিচুতে রেখেছে। আশঙ্কা, এ বার মূল্যবৃদ্ধি সেই উদ্দেশ্যেই না জল ঢেলে দেয়! স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ কয়েকটি ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই সুদের হার বাড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
অতিমারির ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক তখনই তাকে নতুন করে বিপাকে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তার জেরে অশোধিত তেল ও জ্বালানির দাম যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনই প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন পণ্যের বাজারে। আজ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্যে স্পষ্ট, মার্চে খাদ্য (৮.১৯% থেকে ৮.০৬%) এবং আনাজের (২৬.৯৩% থেকে ১৯.৮৮%) দাম বৃদ্ধি কিছুটা মাথা নামালেও তেলের আগুন দাম পাইকারি মূল্যসূচককে ঠেলে দামের গুঁতো তুলেছে (সারণিতে)। উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে কারখানায় তৈরি পণ্য এবং জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও। মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মার্চে উঁচু মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, বিভিন্ন ধাতুর দাম মাথা তোলা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সারা বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতি।’’ মূল্যবৃদ্ধির লাগামছাড়া দৌড় নিয়ে অবশ্য মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালার বক্তব্য, দামের ঝাঁঝে এমনিতেই সাধারণ মানুষ নাকাল। তার উপরে যদি জিএসটির হার বাড়ে, তা হলে কী অবস্থা হবে তাঁদের!
সুদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এমনিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। যা গত তিন মাস রয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সহনসীমার উপরে। আবার অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি মূলত পাইকারি বাজারে প্রভাব ফেললেও, সেই খরচ সামাল দিতে তেল সংস্থাগুলিও গত ২২ মার্চ থেকে খুচরো বাজারে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দামও। এই সমস্ত কিছুর প্রভাব এপ্রিলের মূল্যবৃদ্ধির উপরেও পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে জুনেই হয়তো সুদ বাড়াতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy