একটি নিরামিষ উদ্যোগ। সৌজন্যে ভারতীয় রেল।
এতদিন ট্রেনে নিরামিষ খাওয়া যাত্রীদের কাছে একটু বিড়ম্বনার বিষয় ছিল। দিনের পর দিন এক স্বাদ, এক উপকরণ দেখে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিতেন রেলের মিল থেকে। শুধু তাই নয়, যাঁরা পেঁয়াজ রসুন পর্যন্ত খান না, তাঁদের জন্যে ট্রেনের খাবার কতটা নিরামিষ, তা নিয়েও এতদিন নানাবিধ প্রশ্নে জেরবার হয়েছে রেল প্রশাসন।
রেল সূত্রের খবর, এর আগে ট্রেনে উত্তরভারতীয় নিরামিষ আহারেরও (জৈন মিলে) প্রচলন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও যাত্রীদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি রেল। বয়স্ক লোকজন বিশেষ করে মহিলারা অনেকেই নিজের আনা খাবার খেয়েই যাত্রাপথ পার করেছেন। আর এই বিষয়টাই নিষ্পত্তির জন্য এবার ইন্ডিয়ান রেলের ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজিম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) ট্রেনে যাত্রীদের নিরামিষ খাবারের সরবরাহের জন্য একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ক্যাটারিং সংস্থা গোবিন্দাস-এর সঙ্গে চুক্তি করল। কী ভাবে মিলবে ওই খাবার?
এবার রেলের আইআরসিটিসি-র অ্যাপস বা টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে নিজের টিকিটের পিএনআর নম্বর ও বার্থ নম্বরটি বলে খাবারের মেনু কার্ড দেখে বুক করে দিলেই হল। ট্রেন ছাড়ার আগেই ওই খাবার গোবিন্দাসের কর্মীরা আপনার সংরক্ষিত আসনে এসে হাতে পৌঁছে দিয়ে যাবেন। এই বিশেষ সুবিধাটি শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে ছাড়া সব দূরপাল্লার ট্রেনেই।
চুক্তির পরে আইআরসিটিসি-র গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাসিস চন্দ্র বলেন,‘‘নিরামিষ খাবার নিয়ে দীঘর্দিনের চর্চিত বিষয়টি এবার অবসান হতে চলেছে বলে মনে করছি।’’ তাঁর কথায়, শুধু এদেশের লোকজনই নন, বিদেশ থেকেও যাঁরা ভারতে আসেন তাঁদের অনেকেই যাঁরা নিরামিষ খান, গোবিন্দাসে গিয়েই আহার সারেন। কী থাকছে ওই মেনুতে?
ডাল, ভাত সঙ্গে রুটি, একটি ভাজা, দু’রকম সব্জি ও মিষ্টি। শুধু রুটি ও অন্যান্য নিলে ১২০ টাকা। আর ভাত রুটি মিলিয়ে নিলে ১৫০ টাকা। এই খাবার যাত্রীদের অনেকটাই মনে ধরবে বলেও আসা করা যায় বলেও মন্তব্য করেছেন গোবিন্দাসের ম্যানেজার স্বামী রূপানন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মরসুমী সব্জি আর হাতে গড়া মিষ্টি দিয়েই যখন সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করব তাতেই সন্তুষ্ট হবেন যাত্রীরা।’’
রেলের মেনুতে এই ধরণের নিরামিষ খাবারের আয়োজন শুনে কী বলছেন অন্যেরা?
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পাঠকেরা তাঁকে সম্পূর্ণ নিরামিষাশী বলেই জানেন। ট্রেনে এই ধরণের নিরামিষ খাবারের প্রস্তাব শুনে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন রেল কর্তাদের। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিনে একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিল রেল।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, আমার মত অনেকেই নিরামিষাশী। যাত্রাপতে অনেককেই নিরামিষ খাবার নিয়ে খুঁতখুঁত করতে দেখেছি। এবার আর সেই ভাবনা রইল না।’’ তবে শুধু প্রথম রাত বা দিন নয়, যে ট্রেনে দু’রাত কাটাতে হবে সেখানে যেন পুরো যাত্রা পথেই ওইরকম নিরামিষ খাবারটা মেলে তারও আশ্বাস দিতে হবে রেলকে বলে দাবি জানিয়েছেন শীর্ষেন্দুবাবু।
এই খাবারের মেনু শুনে কী বলছেন ডাইটেশিয়ানেরা?
কলকাতার ডাইটেশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী রায় চৌধুরীর কথায়, যা মেনু তাতে ভালই মনে হচ্ছে। তবে দেখতে হবে খাদ্যের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণটা ঠিক থাকে। যেমন সয়াবিন, বা পণির বা ছানা দিলে সেটা ৪০ গ্রাম হতে হবে। যাতে একটা সুষম খাবার হয়।’’ তবে যাঁদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেঁছে রেল, কলকাতা শহরে তাঁরা খুব পরিচিত। মনে হয় খাবারটা ভালই হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy