Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Electoral Bonds

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম-রায়কে স্বাগত জানাল বিরোধী দলগুলি, কী বললেন ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা?

বিরোধী নেতাদের কারও মতে, এই রায় ‘ঐতিহাসিক’, আবার কারও মতে, আদালতের রায়ে ‘নোটের উপরে ভোট তত্ত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত’ হল। নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতায় প্রায় একই সুরে সরব বিরোধী দলগুলি।

Reaction of opposition parties after Supreme Court’s verdict on Electoral Bond

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৯
Share: Save:

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাল দেশের বিরোধী দলগুলি। সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণা হওয়ার পরেই নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে মন্তব্য করতে থাকেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। বিরোধী নেতাদের কারও মতে, এই রায় ‘ঐতিহাসিক’, আবার কারও মতে, শীর্ষ আদালতের রায়ে ‘নোটের উপরে ভোট তত্ত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত’ হল। তবে লোকসভা ভোটের আগে আসন বোঝাপড়া নিয়ে বিরোধী জোটের সামগ্রিক ঐক্যের ছবিটি অস্পষ্ট হলেও, নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতায় প্রায় একই সুরে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া রায় আমাদের যুক্তিগুলিকে গুরুত্ব দিয়েছে দেখে আমি খুশি।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং এই রায় নোটের উপরে ভোট তত্ত্বকে ফের প্রতিষ্ঠিত করবে।” একই সঙ্গে জয়রাম জানান, তিনি আশা করেন যে, ভিভিপ্যাট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অনীহার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে।

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা তথ্য জানার অধিকার নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা সাকেত গোখলে তাঁর পোস্টে লেখেন, “নির্বাচনী বন্ডকে বেআইনি ঘোষণা করা খুব সম্ভবত গত পাঁচ বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে ঐতিহাসিক রায়।” বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশকে উদ্ধৃত করে তিনি জানান, মার্চের মাঝামাঝি সময়ের আগেই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা দেওয়া ব্যক্তি এবং সেই টাকার প্রাপক যে রাজনৈতিক দলগুলি, তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তার পরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, “যে সমস্ত অনুদানদাতা ব্যক্তি এবং সংস্থা বিজেপিকে টাকা দিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই পদক্ষেপ করেছে কি না, সেটাই এখন দেখার।”

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প ‘অসাংবিধানিক’। তাই তা ‘বাতিল হওয়া উচিত’। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, নির্বাচনী বন্ড তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনকে লঙ্ঘন করছে। নির্বাচনী বন্ডে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি জানান, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (এসবিআই) এই ধরনের বন্ড দেওয়া বন্ধ করবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে জমা পড়া অনুদান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে দেবে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে কমিশনকে অনুদান সংক্রান্ত তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এর ফলে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে হত। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যেত। রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারত। কিন্তু কে, কত টাকা দিচ্ছেন তা বোঝা যেত না।

নির্বাচনী বন্ড চালু হওয়ার পর বিষয়টির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিরোধী দল এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, এতে অস্বচ্ছতাই বাড়বে। বিশ্বের কোনও দেশেই এমন ব্যবস্থা নেই, যেখানে বন্ড ভাঙাচ্ছে রাজনৈতিক দল। ফলে কোন কর্পোরেট সংস্থা কাকে ভোটে সাহায্য করছে, তার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের থেকে কী সুবিধা আদায় করছে, তা জানার কোনও উপায় নেই।

তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বন্ড-বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্র এবং অধিকাংশ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নির্বিবাদে অর্থ আমদানির কার্যত ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করে ফেলতে চাইছে বিজেপি শিবির। আর সে কারণেই তারা নির্বাচনী বন্ড চালু রাখতে মরিয়া। প্রায় ৫ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে থাকা মামলা চলাকালীন ৫ জন প্রধান বিচারপতি এসেছেন। প্রতি বারেই মোদী সরকারের বন্ড-প্রীতি স্পষ্ট হয়েছে শীর্ষ আদালতে। শেষে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল এই ব্যবস্থা ‘অসাংবিধানিক’।

অন্য বিষয়গুলি:

Political Party Opposition Parties reaction India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy