Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ললিপপ নয়, রামমন্দির চান কাটিয়ার

জমির ঠিকঠিকানা নেই। রামায়ণ সংগ্রহশালা কবে হবে, তারও কোনও হদিস নেই। কিন্তু ভোটের মুখে রাম নিয়ে নিজেদের জমি সাজাতে পুরোদস্তুর হিন্দুত্বের জিগির তুলতে শুরু করে দিল বিজেপি। পাল্লা দিয়ে মাঠে নামলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

জমির ঠিকঠিকানা নেই। রামায়ণ সংগ্রহশালা কবে হবে, তারও কোনও হদিস নেই। কিন্তু ভোটের মুখে রাম নিয়ে নিজেদের জমি সাজাতে পুরোদস্তুর হিন্দুত্বের জিগির তুলতে শুরু করে দিল বিজেপি। পাল্লা দিয়ে মাঠে নামলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও।

গায়ে গেরুয়া জ্যাকেট আর গলায় গাঁদা ফুলের মালা চড়িয়ে সংগ্রহশালার জমি খোঁজার নামে আজ গোটা অযোধ্যা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা। রামায়ণ সংগ্রহশালা আর পর্যটনের আড়ালে ঢাক পিটিয়ে তিনি প্রচার করলেন রামের মাহাত্ম্য। এই সেই মহেশ শর্মা, যিনি দাদরি কাণ্ডের পর হত্যায় অভিযুক্তর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বারবার। কিন্তু দলের নেতারা তাঁর রাশ টানতে টুঁ শব্দটি করেননি। বিজেপির অন্দরের খবর, ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্বের প্রচারে মহেশ শর্মা আর যোগী আদিত্যনাথকেই এ বার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।

কিন্তু মেরুকরণের রাজনীতিতে আজ নতুন মোড় দিয়ে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। কেন্দ্রীয় সরকারের রামায়ণ সংগ্রহশালার জন্য তিনি অযোধ্যায় জমি তো দিয়েইছেন। পাশাপাশি, অযোধ্যাতে একটি ‘আন্তর্জাতিক রামলীলা থিম পার্ক’ গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। মন্ত্রিসভায় তা পাশও করিয়ে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে পর্যটক টানতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে যুক্তি দিচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির নেতারা। তবে প্রতিপক্ষ মায়াবতীর বক্তব্য, ভোটের মুখে দুটি দলই রাজনীতিতে ধর্ম টেনে আনতে চাইছে। মায়াবতীর দলের মতে, বিজেপি রামকে টানছে, কারণ তা দিয়ে তারা হিন্দু ভোট পেতে চাইছে। আর অখিলেশ টেক্কা দিচ্ছেন এটা জেনে যে তিনি সঙ্ঘের পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়বেন। উভয়েই নিজ-নিজ ফায়দায় রাম-নাম করছে।

বিরোধীরা যে খুব ভুল বলছে, এমন নয়। বিজেপির কট্টর হিন্দু মুখ বিনয় কাটিয়ার আজ বলেন, ‘‘যারা রামভক্তদের উপরে গুলি চালিয়েছে, তারা আবার রামের কী সেবা করবে?’’ কাটিয়ার যে শুধুমাত্র অখিলেশকেই তোপ দেগেছেন তা নয়, মোদী সরকারের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেও বলেন, ‘‘গোটা অযোধ্যায় ছ’হাজার মন্দিরে রামের আরাধনা হয়। ফলে নতুন করে সংগ্রহশালা গড়ে ললিপপ দিয়ে লাভ নেই। দরকার রামমন্দির নির্মাণ করা। সেটি নিয়েই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন সরকারের।’’ অনেকেই মনে করছেন, কাটিয়ারের বক্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, রামমন্দিরকে সামনে রেখে ফের মেরুকরণের চেষ্টা করতে চায় সঙ্ঘ।

রামায়ণ সংগ্রহশালা নিয়ে রামমন্দিরের দাবিটা এ ভাবে উঠে আসুক, এটাই চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলিত-সংখ্যালঘু বিতর্ক, বেহাল আর্থিক দশা, কূটনৈতিক ব্যর্থতা— এ সবই ঢাকতে ক’দিন আগে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কেই প্রচারের মূল পুঁজি করেছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। যাতে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় ঢেকে দেওয়া যায় বাকি সব ব্যর্থতা। বিজেপির লক্ষ্য ছিল, জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে অধিকাংশ হিন্দুকে একজোট করে ভোটকে ঝুলিতে পোড়া। ঠিক যেমনটি গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর লোকসভা নির্বাচনের সময় হয়েছিল। কিন্তু ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যোগ হল রামমন্দিরের বিতর্ক।

তবে বিরোধী দলগুলির পক্ষে রামায়ণ সংগ্রহশালার মতো আপাত নিরীহ প্রকল্পের বিরোধিতা করা কঠিন। তাই অখিলেশকেও রামলীলা থিম পার্কের কথা ঘোষণা করতে হল। তবে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে রাজনীতি করা সমাজবাদী পার্টিতে এর কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Vinay Katiyar Museum Ram Mandir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE