ফাইল ছবি
রাজ্যসভা ভোটে চার রাজ্যে ক্রস ভোটিং-এর ভরসায় বাড়তি এক জন করে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। ক্রস ভোটিং হল বটে। কিন্তু তা গেল বিজেপির বিপক্ষে। ফলে রাজস্থানে হেরে গেলেন বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র। উল্টো দিকে অনায়াসে দলের তিন প্রার্থীকে জেতাতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। তবে কর্নাটকেও বিরোধী জেডিএস এবং কংগ্রেসের বিরোধের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সক্ষম হন বিজেপি নেতৃত্ব।
এ যাত্রায় ১৫টি রাজ্যের ৫৭টি আসনে রাজ্যসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ১১টি রাজ্যের ৪১টি আসনে আগেই জিতে যান প্রার্থীরা। সেগুলিতে আর ভোট করার প্রয়োজন হয়নি। আজ বাকি চারটি রাজ্যের ১৬টি আসনে ভোট ছিল। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র ছ’টি, রাজস্থান ও কর্নাটক উভয় রাজ্যে চারটি করে আসনে ও হরিয়ানায় দু’টি আসনে ভোট ছিল। ওই চারটি রাজ্যেই হাতে বাড়তি ভোট থাকায় ক্রস ভোটিং-এর মাধ্যমে আর এক জন করে প্রার্থীকে জেতানোর কৌশল নেয় বিজেপি।
আজ প্রথম যে রাজ্যের যে ফলাফল সামনে আসে, তা হল রাজস্থান। ওই রাজ্যের চারটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে জিতেছেন কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা, মুকুল ওয়াসনিক ও প্রমোদ তিওয়ারি। চতুর্থ আসনটিতে জিতেছেন বিজেপি ঘনশ্যাম তিওয়ারি। হেরে যান বিজেপির সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানো সুভাষ চন্দ্র।
ওই রাজ্যে এক জন প্রার্থীকে জিততে হলে প্রয়োজন ছিল ৪১টি ভোটের। রাজস্থানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭১। দলের প্রথম প্রার্থী ঘনশ্যাম তিওয়ারিকে জেতানোর পরেও ৩০টি ভোট বেশি ছিল বিজেপির। দ্বিতীয় প্রার্থী সুভাষের জেতার জন্য বাইরে থেকে সমর্থন প্রয়োজন ছিল ১১টি ভোটের। যা শেষ পর্যন্ত জোগাড়ে ব্যর্থ হলেন অমিত শাহেরা।
তুলনায় দলের দু’জন প্রার্থীকে জেতানোর পরে কংগ্রেসের হাতে পড়েছিল মাত্র ১৬টি ভোট। দরকার ছিল ১৫টি ভোট। শেষ বেলায় মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত নিজের শক্তি দেখিয়ে দলকে ধরে তো রাখলেনই, উল্টে নির্দল ও বিজেপির ঘর ভাঙিয়ে শাহদের বাড়তি আসন জেতার পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলেন।
সূত্রের মতে, কংগ্রেসের তৃতীয় প্রার্থী জয়ের পিছনের কারণগুলি হল, বিজেপির এক বিধায়ক কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে ক্রস ভোটিং করা। এ ছাড়া, ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির দুই বিধায়ক যাতে ভোটে অনুপস্থিত থাকেন, সে জন্য তলে তলে তদ্বির করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো ভোটে অনুপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে হুইপ জারি করে দল। কিন্তু গহলৌতের প্রচেষ্টায় ওই দুই বিধায়ক হুইপ অমান্য করে আজ কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেন।
বিজেপি সূত্রের দাবি, রাজ্যে ১৩ জন নির্দলের মধ্যে অন্তত ৯ জন তাঁদের পাশে থাকবে বলেই ধরে নিয়েছিল দল। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে চার জনেরই সমর্থন পেয়েছে দল। বাকিরা ক্রস ভোটিং করে কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিয়েছে। সমর্থন পাওয়া যায়নি হনুমন্ত বেণীওয়ালের দল আরএলপি-র।
রাজস্থানে সুবিধে করতে না পারলেও কর্নাটকে অবশ্য লক্ষ্যভেদ করেছে বিজেপি। ওই রাজ্যে চারটি আসনের মধ্যে বিজেপি তিনটিতে, কংগ্রেস দু’টি ও জেডিএস একটি আসনে প্রার্থী দেয়। ওই রাজ্য থেকেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, অভিনেতা-রাজনৈতিক জগ্গেস, ও বিধান পরিষদ লহর সিংহ সোরিয়া। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ ছাড়াও আর এক বিরোধী দল জেডিএসের অনুরোধ উপেক্ষা করে সংখ্যালঘু নেতা মনসুর আলি খানকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থী দেওয়ায় জেডিএস প্রার্থী কুপেন্দ্র রেড্ডির জয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ওই রাজ্যে এক জন প্রার্থীকে জিততে ৪৫টি করে ভোটের প্রয়োজন ছিল। দুই প্রার্থীকে জেতানোর পরে বিজেপির দরকার ছিল বাড়তি ১৫টি ভোট।
অন্য দিকে, ৭০ বিধায়কের কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য প্রয়োজন ছিল ১০টি ভোটের। সেখানে জেডিএসের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৩২। জেডিএস প্রার্থীর সরাসরি জেতার সম্ভাবনা না থাকায় কংগ্রেসের তরফে সমর্থন চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করে দল। দুই বিরোধী দলের সংঘাতের সুযোগে আজ তৃতীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে নিতে সক্ষম হয় বিজেপি। হেরে যান কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থী ও জেডিএসের প্রার্থী রেড্ডি। উল্টে জেডিএসের দুই বিধায়কের মধ্যে একজন কংগ্রেসকে ও অন্য জন খালি ব্যালট জমা দেন। যার ফলে বিজেপি প্রার্থীর জয় আরও সহজ হয়ে যায়।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy