হাসমুখ আঢিয়া
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ক্ষমতার অলিন্দে দালালদের অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়েছে বলে এত দিন দাবি করতেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। সরকারি অফিসারদের অন্তর্কলহ দেখিয়ে দিল, ছবিটা ঠিক তেমনও নয়।
অর্থসচিব হাসমুখ আঢিয়াকে আক্রমণ করে তাঁকেই পাঠানো চিঠিতে ইডি-র যুগ্ম-অধিকর্তা রাজেশ্বর সিংহ লিখেছেন, ‘আগের সরকারের আমলে কিছু দফতর ও অফিসারের কাছে দালাল (‘টাউট, মিডল-ম্যান, ফিক্সার, পিম্প’)-দের অবাধ যাতায়াত ছিল। অনেকের মতো আমিও ভাবতাম, এ সব বন্ধ হওয়া দরকার। বিশেষ করে আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, বাস্তবে তা হয়নি।’ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে রাজেশ্বরের এই চিঠি। কারণ প্রথমত, অন্দরের হাল শুধরে মোদী যে দুর্নীতিকে উপড়ে ফেলতে পারেননি, তা প্রমাণিত। দুই, মোদী যাঁকে গুজরাত থেকে এনে অর্থ মন্ত্রকে বসিয়েছিলেন, সেই হাসমুখই কাঠগড়ায়।
রাজেশ্বরের অভিযোগ, তিনি যে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন, তাদের কর্পোরেট লবিইস্টরা হাসমুখকে অভিযোগ জানিয়েছেন। হাসমুখ তাই তাঁর পদোন্নতি আটকে রেখেছেন। দুর্নীতিগ্রস্তদেরই পক্ষ নিয়েছেন তিনি। এক যুগ্ম-সচিবেরও এতে মদত রয়েছে। রাজেশ্বরের প্রশ্ন, ‘এদের আপনি গুরুত্ব দেন কেন?’
অর্থ মন্ত্রকের অধীন ইডি-র এক যুগ্ম অধিকর্তা অর্থসচিবের দিকে আঙুল তুলছেন, এমন ঘটনা মনমোহন সিংহ বা তাঁর আগের জমানাতেও ঘটেনি। উল্লসিত কংগ্রেস। বিরোধীদের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে এত দিন অভিযোগ তুলছিলেন নেতারা। এখন ইডি-র অফিসারই বিড়ম্বনায় ফেলেছেন মোদীকে।
পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে এয়ারসেল-ম্যাক্সিস কাণ্ডের তদন্ত করছিলেন রাজেশ্বর। বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রকের ‘গ্যাং অব ফোর’ তদন্ত আটকাতে চাইছে। এঁরা কারা, তা নিয়ে নর্থ ব্লকে এখন জোর গুজব। স্বামী যে অরুণ জেটলিকে অপছন্দ করেন, তা সুবিদিত। তিনি এ বার হাসমুখের দিকে আঙুল তুলেছেন। অথচ হাসমুখ বরাবরই মোদীর আস্থাভাজন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে হাসমুখ কার নির্দেশে চিদম্বরমকে বাঁচাতে চাইবেন? অরুণ জেটলি আপাতত মন্ত্রকহীন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ঘরের সামনে এখনও তাঁর নামেরই বোর্ড ঝুলছে। স্বামীর প্রশ্ন, ‘‘অর্থ মন্ত্রক কি নিজেরা মুক্ত হয়ে জেটলিকে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করছে?’’
আরও পড়ুন: সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে রাজনৈতিক অস্ত্র করেছে বিজেপি, তোপ কংগ্রেসের
হাসমুখের ঘনিষ্ঠ অফিসারদের পাল্টা যুক্তি, রাজেশ্বরের বিরুদ্ধে স্ত্রী-র নামে বেআইনি সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে। দুবাইয়ে আইএসআই-এর সন্দেহভাজন চরের সঙ্গেও তাঁর কথাবার্তার প্রমাণ মিলেছে। অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের সিংহভাগের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে তদন্ত হোক রাজেশ্বরের বিরুদ্ধে। স্বামী কিন্তু বলছেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে আপস করা আমলারা আত্মঘাতী হতেও তৈরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy