গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত
এত দিন বিরোধীদের জব্দ করতে মোদী সরকার সিবিআই-ইডিকে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল। আর আজ কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকারের পুলিশই মোদী সরকারের মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করল। গ্রেফতার করা হল বিজেপি ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে।
রাজস্থানের সরকার ফেলতে আর্থিক লেনদেন নিয়ে কথাবার্তার একাধিক অডিয়ো গত রাতেই সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজস্থানের বিজেপি নেতা, তথা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত সচিন পাইলট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে মিলে গহলৌত সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করছিলেন। ওই অডিয়ো টেপই তার প্রমাণ। কংগ্রেসের দাবি, শেখাওয়াত মন্ত্রী পদের অপব্যবহার করে তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা থাকলে তাঁকে গ্রেফতার করা হোক। ওই টেপে সঞ্জয় জৈন নামে যে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর কণ্ঠ শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ, আজ বেশি রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
শেখাওয়াত অবশ্য সাফ জানান, অডিয়ো টেপের কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। তাতে অবশ্য রাজস্থান পুলিশের সক্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। সরকার ভাঙার ষড়যন্ত্রের তদন্তে গহলৌত আগেই পুলিশের এসওজি (স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ) তৈরি করেছিলেন। সেই এসওজি আজ কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মহেশ জোশীর অভিযোগ পেয়ে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে। সরকার ফেলার চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত হিসেবে না হলেও এফআইআর-এ গজেন্দ্র সিংহের নাম রয়েছে। রাজস্থান পুলিশের এসওজি হরিয়ানার মানেসরেও আজ হানা দেয়। মানেসরের একটি হোটেলে সচিন-অনুগামী বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়কদের রাখা হয়েছে। এসওজি তাঁদের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে সেই হোটেলে যায়। প্রথমে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পুলিশ বাধা দিলেও পরে এসওজি-কে ঢুকতে দেওয়া হয়।
পর্যবেক্ষকদের মত, এর পর সচিনের পক্ষে আর কংগ্রেসে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিজেপি-তে যাওয়ার রাস্তাও কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার আপত্তি। এ দিকে, সচিন ও তাঁর অনুগামীদের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকার নোটিস পাঠিয়েছিলেন। সচিনদের জন্য স্বস্তির, রাজস্থান হাইকোর্ট মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সেই নোটিসে জবাবদিহির সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: তিন দিনে এক লাখ করোনা রোগী! দিশা কোথায়, প্রশ্ন উঠছে ১০ লক্ষ ছুঁয়ে
স্পিকারের নোটিসের বিরুদ্ধে সচিনরা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। সচিনের আইনজীবী হরিশ সালভে লন্ডন থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে শুনানিতে সওয়াল করেছেন, সচিনরা কংগ্রেস দল ছাড়েননি। ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বাক্স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। সোমবার থেকে ফের শুনানি হবে।
কংগ্রেস সূত্র অবশ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত যে সব অডিয়ো টেপ প্রকাশ্যে এসেছে, তা শুধুই ‘ট্রেলার’। আসল অডিয়ো এখনও আসা বাকি। গহলৌত আগেই দাবি করেছিলেন, সচিন যে বিজেপির সঙ্গে টাকার লেনদেন করছেন, তার প্রমাণ রয়েছে। সচিনের ভাবমূর্তিতে তাঁরা যতখানি সম্ভব কালি মাখাতে চাইছেন। গহলৌত এ দিন এ-ও বলেন, গত দেড় বছর ধরে সচিনের সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুন: শুধু লকডাউন আর কন্টেনমেন্ট জ়োন বানিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা চলবে না, রাজ্যকে কেন্দ্র
এখনও পর্যন্ত যে সব অডিয়ো টেপ এসেছে, তা শুনিয়ে কংগ্রেসের যুক্তি, গজেন্দ্র সঞ্জয় জৈন নামে এক ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কংগ্রেস বিধায়ক ভাঁওয়ার লাল শর্মা, বিশ্বেন্দ্র সিংহর সঙ্গে রফা করছিলেন। ভাঁওয়ারলাল আগেও সরকার ফেলায় খেলায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। জনতা দল, বিজেপি ঘুরে তিনি কংগ্রেসে আসেন। কংগ্রেস বিশ্বেন্দ্র ও ভাঁওয়ারলালকে আজ সাসপেন্ড করেছে। দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। বিজেপি যে নির্বাচিত সরকার ফেলার চেষ্টা করে, তা প্রমাণিত।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের দাবি, ওই অডিয়ো টেপে তাঁর কণ্ঠস্বর নেই। তিনি মারওয়াড়ের টানে রাজস্থানি বলেন। অডিও টেপের কথায় অন্য টান রয়েছে। গজেন্দ্র লোকসভা ভোটে গহলৌতের ঘরের মাঠ যোধপুরে তাঁর ছেলে বৈভবকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “আমি যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে তৈরি।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়ার অভিযোগ, সমস্ত অডিয়ো জাল। কংগ্রেস গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে বিজেপিকে দুষছে। পুলিশের এসওজি-র এডিজি অশোক রাঠৌর বলেন, “দু’টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। ওই অডিয়োয় কথাবার্তার সত্যতার তদন্ত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy